জীবনের প্রতি অনীহা চলে এসেছে ইন্নাত আলীর। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। দুবার ব্যবসায় নেমে লোকসান দিয়েছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছিলেন টিকতে পারেননি। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে অভাবে। তিন বেলার খাবার জোগানোই কঠিন তার জন্য। হাতে কোনো টাকা নেই যে নতুন করে ব্যবসায় নামবেন। মেহেরপুরের ভাগ্যবিড়ম্বিত ইন্নাত আলী দিনে দিনে মুষড়ে পড়ছেন। মেজাজও ঠিক রাখতে পারছেন না। বুঝতে পেরে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেন স্ত্রী। এ পরামর্শ তার ভালো লাগে। কিন্তু টাকা কোথায় পাবেন? এমন প্রশ্ন করেন ইন্নাত আলী। স্ত্রী জমি বন্ধক রাখতে বলেন। আরও লাগলে সুদে টাকা নিতে বলেন। পরিবারের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইন্নাত। সৌদি আরব যাওয়ার ভালো একটা পথও পেয়ে যান। একই এলাকার রবিউল দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে লোক পাঠান। ইন্নাত যোগাযোগ করেন তার সঙ্গে। ঢাকার পল্টনে রবিউলের অফিস। রবিউল তাকে জানান, ৮ লাখ টাকা দিলে ভালো একটা চাকরি দিয়ে সৌদি আরব পাঠাতে পারবেন তিনি। পরিবারের ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্নে বিভোর ইন্নাত সুদে ঋণ নেন। কিছু জমি বিক্রি ও বন্ধক রেখে ৮ লাখ টাকা জোগাড় করেন। পুরো টাকা রবিউলের হাতে তুলে দেন। সৌদি আরবে ক্লিনারের চাকরি নিয়ে দেশ ছাড়েন ইন্নাত। কিন্তু সৌদি আরবে গিয়ে দেখেন তার চাকরি ক্লিনারের নয়, উত্তপ্ত মরুভূমিতে রাস্তা মেরামতের। বেতন পাবেন ছয় মাস পর থেকে। তিনি ঢাকায় আদম অফিসের রবিউলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সব কষ্ট সহ্য করে বাধ্য হয়েই বেতন ছাড়া ছয় মাস কাজ করেন ইন্নাত। কিন্তু ছয় মাস পেরোনোর পর তাকে আর কাজে রাখা হয়নি। চাকরি হারিয়ে ইন্নাত পাগলপ্রায়। স্ত্রী-সন্তানরা দেশে ফিরে আসার জন্য বলেন। উপায় না পেয়ে ফিরে আসেন তিনি। যোগাযোগ করেন রবিউলের সঙ্গে। ফোনে পেয়েও যান। তার কাছে টাকা ফেরত চান। রবিউল তাকে ঢাকায় আসতে বলেন। ঢাকায় এসে দেখা করেন রবিউলের সঙ্গে। রবিউল তাকে রাজধানীর ফকিরাপুলে বাবুল নামে এক ব্যক্তির অফিসে নিয়ে যান। বাবুলের মাধ্যমেই ইন্নাত আলীকে সৌদি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বাবুলের দেখা তারা পান না। বেশ কয়েক দিন গিয়েও ব্যর্থ হন তারা। বাবুলের দেখা না পেয়ে ক্ষুব্ধ ইন্নাত রবিউলের কাছে টাকা দাবি করেন। বলেন, ‘আমি টাকা দিয়েছি তোমাকে, অন্য কাউকে আমি চিনি না।’ রবিউল তাকে বোঝান। বলেন, ‘আমি ৫০ লাখ টাকা পাই বাবুলের কাছে। এরপর টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলব।’ ইন্নাত এতে শান্ত হন। একপর্যায়ে ইন্নাত আর রবিউল মিলে বাবুলকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটেন। নির্ধারিত দিনে তারা দুজন বাবুলের অফিসে যান। যাওয়ার আগে রবিউল একটি হাতুড়ি দেয় ইন্নাতের হাতে। তাকে শিখিয়ে দিয়ে বলেন, টাকা না দিলে এ হাতুড়ি দিয়েই বাবুলকে হত্যা করব। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে তারা যান সে অফিসে। কিন্তু বাবুলকে পান না। ইন্নাতের সন্দেহ হয়। তার ধারণা, টাকা না দিতে এসব রবিউলের কারসাজি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় তর্কবিতর্ক। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ইন্নাত হাতুড়ি দিয়ে রবিউলকে সজোরে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন। একপর্যায়ে রবিউল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পালিয়ে যান ইন্নাত। পল্টন থানায় হত্যা মামলা হয়। বছরখানেক পলাতক থেকে ফরিদপুরে গ্রেফতার হন ইন্নাত আলী। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসাইনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি সব খুলে বলেন। ডিবি পুলিশ রবিউল হত্যা মামলায় ইন্নাতকে আসামি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। জানতে চাইলে মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘৮ লাখ টাকায় সৌদি গিয়ে সুবিধা করতে না পেরে ইন্নাত আলী দেশে এসে রবিউলের কাছে টাকা ফেরত চান। রবিউল এ সময় বাবুলের কাছে ৫০ লাখ টাকা পাবেন বলে জানান এবং ইন্নাতকে ঢাকা আসতে বলেন। বাবুল টাকা না দিলে দুজন মিলে বাবুলকে মেরে তার কাছে থাকা নগদ টাকা নিয়ে আসবেন বলেও রবিউল তাকে জানান। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাবুলকে মারার জন্য ইন্নাতকে একটি হাতুড়ি দেন রবিউল। দুই দিন অফিসে গিয়ে বাবুলের সন্ধান না পেয়ে ইন্নাত ক্ষিপ্ত হন রবিউলের ওপর। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে রবিউল তার স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে বাজে কথা বলেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রবিউলের দেওয়া হাতুড়ি দিয়েই তাকে হত্যা করেন ইন্নাত।’ ইন্নাত আলী আদালতকে বলেছেন, ‘টাকা দেওয়ার এক বছর আগে রবিউলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। জমি বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা জোগাড় করি। মেডিকেল ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের কথা বলে আরও ১ লাখ টাকা নেয়। সৌদি গিয়ে মরুভূমিতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। রবিউলকে জানালে সে আমাকে অপেক্ষা করতে বলে। কোনো বেতনও দেওয়া হয়নি। পরে রবিউলের কথায় ঢাকায় আসি। বাবুলের কথা বলে রবিউল আমাকে দুই দিন ঘোরায়। একপর্যায়ে সে আমার স্ত্রী-কন্যাকে গালাগালি দিলে আমি আর সহ্য করতে পারিনি। হাতুড়ির এলোপাতাড়ি আঘাতে ওর মাথা থেকে রক্ত বের হতে দেখে হাতুড়ি ফেলে পালিয়ে গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনীতে যাই। পরদিন রবিউলের মারা যাওয়ার খবর শুনে গ্রাম থেকে পালিয়ে ফরিদপুরে গিয়ে একটি আড়তে কাজ শুরু করি।’ অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একশ্রেণির আদম ব্যবসায়ীর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। সব হারিয়ে এরা পরে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। মেহেরপুরের ইন্নাত আলীও কোনো অপরাধী ছিলেন না। সব হারিয়ে এই ব্যক্তিটি হয়ে ওঠেন একজন খুনি। ইন্নাত আলী বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে কোনো খোঁজখবর ছাড়াই রবিউলের হাতে টাকা তুলে দেন। তিনি প্রতারণার শিকার হন। আর প্রতারণার শিকার হওয়ার পর তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিষয়টি জানাননি। যে কারণে সব হারিয়ে নিজেই হয়ে ওঠেন ভয়ংকর খুনি।
শিরোনাম
- শাবিপ্রবিতে আয়োজিত হচ্ছে ‘রেইজ ফর জাস্টিস’ ম্যারাথন, চলছে রেজিস্ট্রেশন
- ডিমের বাজারে স্বস্তির হাওয়া, বেড়েছে বিক্রি
- ৫ বলে ৫ উইকেট, ক্রিকেটে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়লেন ক্যাম্ফার
- ৫ বিভাগে ভারী বর্ষণের আভাস, বাড়বে গরমের অনুভূতি
- গায়ানাকে গুঁড়িয়ে ৮ রানে জয় রংপুরের
- রাজধানীতে বৃষ্টির সম্ভাবনা, কমতে পারে তাপমাত্রা
- সারা বছর সুস্থ থাকতে নিয়মিত খান এই ৭টি খাবার
- খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের হত্যা করল ইসরায়েলি বাহিনী
- ইরান ভ্রমণে না যেতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
- দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন ফের গ্রেপ্তার
- দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ব্যবসায়ী নিহত
- এসএসসিতে ফেল : বরিশালে পাঁচ ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা, দুইজনের মৃত্যু
- এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস না পেয়ে বগুড়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
- টানা বৃষ্টির প্রভাব রাজধানীর বাজারে
- এসএসসিতে অকৃতকার্য হওয়ায় গেন্ডারিয়ায় শিক্ষার্থীর 'আত্মহত্যা'
- সেই আলফি পাস করেছে
- এনবিআরের প্রথম সচিব তানজিনা বরখাস্ত
- ফ্যাসিবাদবিরোধীদের ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান মামুনুল হকের
- দুদকের মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত গ্রেফতার
- মাকে মারধর করায় যুবককে পিটিয়ে হত্যা করল স্বজনরা
প্রতারিত হয়ে ভয়ংকর খুনি
মির্জা মেহেদী তমাল
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর