বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

বগুড়ায় শজিনা ডাঁটার বাম্পার ফলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় শজিনা ডাঁটার বাম্পার ফলন

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন সবজি শজিনা ডাঁটার বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবার গত বছরের চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। তরকারি হিসেবে শজিনার জুড়ি নেই। দেশে শজিনার ব্যাপক চাহিদা থাকায় চাষিদের মুখে হাসি। শজিনা বিক্রি করে তারা আয়ও করেছেন অনেক। আদমদীঘি উপজেলায় গ্রামের প্রায় সবখানে গাছে গাছে প্রচুর পরিমাণে শজিনা ধরেছে। স্থানীয় হাট-বাজারে শজিনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শজিনা স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক ধরে প্রতিদিন উপজেলার যে কোনো হাটবাজার থেকে শত শত মণ শজিনা অন্যান্য এলাকায় যাচ্ছে। প্রতি মণ শজিনা পাইকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায়। উপজেলার সান্তাহার ইয়ার্ড কলোনিতে রাকিবুল হাসান সুজন তার ৩টি গাছ থেকে শজিনা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। সাঁতাহার গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী সোহেল রানা ও মাঝিপাড়া গ্রামের স্টেশনারি বিক্রেতা লিখন চন্দ্র সরকার ব্যবসার পাশাপাশি বাড়ির চারদিকে শজিনা লাগিয়ে কয়েক মণ বিক্রি করে প্রায় ১৫-১৮ হাজার টাকা আয় করেছেন। শজিনা ডাঁটা পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় যে কোনো বয়সের মানুষ খেতে ভালোবাসে। চিকিৎসাবিদদের মতে, শজিনা সবজিতে ক্যালসিয়াম, খনিজ লবণ, আয়রনসহ প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় খাদ্য রয়েছে। এ ছাড়া ভিটামিন এ, বি ও সি সমৃদ্ধ শজিনা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে বলে শজিনা ডাঁটা ঔষধি সবজি হিসেবেও ব্যাপক সমাদৃত। শজিনা গাছের ছাল ও পাতা রক্ত আমাশয়, পেটের পীড়া ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। শজিনা ডাঁটা প্রধানত দুই প্রজাতির। এর মধ্যে এক প্রজাতি বছরে তিন থেকে চারবার পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে এর নাম বলা হয় রাইখঞ্জন। অন্য প্রজাতির শজিনা বছরের গ্রীষ্ম মৌসুমে একবারই পাওয়া যায়। শজিনা চাষের জন্য বিশেষ কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয় না। এর জন্য আলাদা কোনো জমিও প্রয়োজন হয় না। যে কোনো পতিতজমি, পুকুরপাড়, রাস্তার বা বাঁধের ধার, বাড়ির আঙিনা এমনকি শহরে যে কোনো ফাঁকা শুষ্ক জায়গায় শজিনা গাছ লাগানো যায়। এর কোনো বীজ বা চারাও প্রয়োজন হয় না। গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রাখলেই শজিনা গাছ জন্মায়। এর জন্য কোনো সার বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। বড় ও মাঝারি ধরনের এক একটি শজিনা গাছে ৬ থেকে ৮ মণ পর্যন্ত শজিনা পাওয়া যায়। বিনা খরচে অধিক আয় পাওয়ায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে শজিনা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ উপজেলার মাটি, পানি ও আবহাওয়া শজিনা চাষের উপযোগী হওয়ায় সর্বত্রই প্রচুর পরিমাণে শজিনা উৎপাদন হচ্ছে। আদমদীঘি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, আদমদীঘি উপজেলার সর্বত্র শজিনা চাষে উপযোগী মাটি ও আবহাওয়া রয়েছে। এখানে বাণিজ্যিকভাবে শজিনা চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর