শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

অবৈধ পথে অবাধে ঢুকছে ড্রোন

নীতিমালায় বড় ধরনের ত্রুটি, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ গোয়েন্দা সংস্থার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

অবৈধ পথে অবাধে ঢুকছে ড্রোন

দেশের স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দর দিয়ে অবাধে ঢুকছে ড্রোন। আমদানিকারকরা রাজস্ব ফাঁকি দিতে বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে অঘোষিতভাবে এসব ড্রোন দেশে আনছেন। আর অবৈধভাবে আনা ব্যয়বহুল ও উচ্চ প্রযুক্তির এসব ড্রোন এখন রাজধানীর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দেশে অবৈধভাবে ড্রোন আমদানির এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনটিতে গত বছরের অক্টোবরে করা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ‘ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা, ২০২০-এর কয়েকটি ধারায় বড় ধরনের ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব ত্রুটির কারণে অবৈধ পথে ড্রোন আসছে, যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে। এ প্রতিবেদনটি সম্প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোয় পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার (বিমান ও সিভিল অ্যাভিয়েশন) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনটি সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখানে কিছু অসংগতির কথা বলা হয়েছে। আমরা এখনো নীতিমালাটি প্রয়োগ করছি না। এটা আগামী জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এরপর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার সুযোগ রয়েছে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে যা জানা যায় তা হচ্ছে অবৈধভাবে আমদানিকৃত এসব ড্রোনের বেশির ভাগই মিলছে ১ থেকে ৫ লাখ টাকায়। তবে ক্রেতারা উচ্চক্ষমতার অত্যাধুনিক ড্রোন চাইলে অগ্রিম অর্ডার নিয়ে সরবরাহ করা হয়। আর বাংলাদেশে অবৈধ পথে বেশির ভাগ ড্রোন আসছে মূলত ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ান থেকে।

গোয়েন্দারা ড্রোন বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা জানতে পেরেছেন অবৈধ পথে আমদানিকৃত এসব ড্রোন বেশির ভাগই আসে বিমানবন্দর ব্যবহার করে। বিমানবন্দরের আমদানি কার্গোতে স্ক্যানার না থাকার সুযোগে ঘোষিত পণ্যের সঙ্গে অবৈধভাবে ড্রোনের পার্টস বাংলাদেশে ঢুকছে। বিক্রেতারা এভাবে ড্রোন আনার বিষয়ে অতিরিক্ত কর, অনুমতির দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতার মতো অসংগতিগুলো তুলে ধরেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনটিতে যে বিষয়গুলো উদ্বেগজনক বলে মনে হয়েছে সেগেুলো হলো এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অবাধে ড্রোন সংগ্রহ হচ্ছে। ফলে এভাবে সংগৃহীত ড্রোনের বিষয়ে জানতে পারছে না নিরাপত্তা বাহিনী। এটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ড্রোনের অপব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সীমান্ত এলাকায় ড্রোন দিয়ে হালকা অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদক, স্মার্টফোন এমনকি সোনা চোরাচালানের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে এখনো এ ধরনের ঘটনা না ঘটলেও ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা (গত বছর) ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা করেছেন যেখানে মনুষ্যবিহীন এ উড়ানযন্ত্রটির বাংলাদেশে ব্যবহারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, ৫ কেজির বেশি ড্রোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে জননিরাপত্তা বিভাগ এবং আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে। তবে খেলনা-জাতীয় ড্রোন এ বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রয়েছে। অর্থাৎ ৫ কেজির নিচে এবং খেলনা-জাতীয় ড্রোন বানানো বা আমদানির ক্ষেত্রে অনুমতির প্রয়োজন নেই। গোয়েন্দা সংস্থাটি মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার এ দুটি ধারাতেই বড় ধরনের ত্রুটি দেখছে। তারা বলছেন, সাধারণত ২ থেকে সাড়ে ৩ কেজি ওজনের একটি ড্রোন দিয়ে সর্বোচ্চ মানের সার্ভে ও ভিডিওগ্রাফি করা যায়। এ মানের ড্রোনের যান্ত্রিক উৎকর্ষতার মাধ্যমে যে কোনো ধরনের অপরাধ/আক্রমণাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। এ কারণে খেলনা ড্রোনসহ সামগ্রিকভাবে ৫ কেজি ওজনের ড্রোন বানানো ও আমদানিতে বৈধতা দেওয়ার বিষয়টি যৌক্তিক নয়। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নীতিমালার ৭ ও ৮ নম্বর বিধিতে নিবন্ধনের জটিলতার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এ জটিলতার কারণে ড্রোন ক্রেতা ও বিক্রেতারা নিবন্ধনহীন ড্রোন ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নীতিমালার আরেকটি অসংগতি তুলে ধরে বলা হয়েছে, নীতিমালার গ্রিনজোনে ‘ক’ শ্রেণির ড্রোন ১০০ ফুট পর্যন্ত উড্ডয়নের ক্ষেত্রে অনুমতির প্রয়োজন হবে না। তবে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিক উচ্চতা পরিমাপের প্রযুক্তি না থাকায় ১০০ ফুটের ওপরের অধিক উচ্চতায় ড্রোন ওড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ড্রোন নিয়ে দেশে কোনো রেগুলেশনই ছিল না। এ কারণে মন্ত্রণালয় প্রথমত এটিকে একটি নীতিমালায় আনতে চেয়েছে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়কে যেমন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হয়েছে তেমনি এটিকে একটি ইন্ডাস্ট্রি বিবেচনা করে বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যে যাতে ব্যবহার করা যায়, এ দুটো বিষয়ে ব্যালান্স করতে হয়েছে। এ কারণে প্রথমবার করা এ নীতিমালায় কিছু অসংগতি বা ত্রুটি থাকতে পারে।

সর্বশেষ খবর