শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

শেষ সময়েও জমে ওঠেনি মেলা

মোস্তফা মতিহার

শেষ সময়েও জমে ওঠেনি মেলা

বইমেলা শেষ হতে আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। এ সময়টাকে মেলার পিকটাইম বলা হয়। কিন্তু এখনো সেই চিরচেনারূপে ফিরে যেতে পারেনি বইমেলা। অন্যবার শেষ সময়ের দিকে বিক্রিতে দম ফেলার ফুরসত না থাকলেও এ বছর বিক্রির চিত্র একেবারেই উল্টো। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পুরো সময়টা অলস পার করছেন প্রকাশক ও তাদের প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা। বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীর অভাবে গতকাল মেলার ২২তম দিনে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যাণ প্রাঙ্গণ ছিল বিরানভূমি। মেলাজুড়ে সৃষ্টি হয় এক ভুতুড়ে পরিবেশ। প্রতিটি স্টল ও প্যাভিলিয়ন ছিল বইপ্রেমীশূন্য। এজন্য দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পরিবর্তিত সময়সূচিকেই দায়ী করেছেন প্রকাশকরা। তাদের মতে, সময়সূচিতে পরিবর্তন আনার কারণেই মেলায় লোকজন আসছে না। অধিকাংশ প্রকাশক বলেন, বিকাল ৫টার দিকে যে সময়টায় মেলা জমে ওঠার কথা সে সময়টায় মেলা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আর প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এরও আধা ঘণ্টা আগে বিকাল সাড়ে ৪টায়। যার কারণে মাঝপথে এসে মেলা তার জৌলুস হারিয়েছে। শুধু সময়সূচির কারণেই মেলা জমেনি এমন দাবি এবারের মেলার বেশির ভাগ প্রকাশকের। বর্ণমালা প্রকাশনীর কর্ণধার মামুন-অর-রশিদ বলেন, ‘করোনার মধ্যেও শুরু থেকেই মেলা জমে উঠেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে যখন সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হলো অর্থাৎ বিকালের দিকে যখন মেলা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে তখন লোকজন আসা কমে গেছে। ৫টায় মেলা বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি সাড়ে ৪টায় দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে প্রতিদিন সব গেট থেকে অনেক লোক নিরাশ হয়ে ফিরে যায়।’ অবসর প্রকাশনীর মাসুদ রানা বলেন, ‘মেলা বন্ধ করে দিলে আমরা বড় ধরনের লোকসান থেকে বেঁচে যেতাম। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে বাংলা একাডেমি মেলা বন্ধ করছে না।’

গতকাল মেলার ২২তম দিনেও মেলাপ্রাঙ্গণ ছিল বিরানভূমি। বইপ্রেমীশূন্য ছিল মেলা। প্রকাশক ও তাদের বিক্রয়কর্মীদের চেয়েও অনেক কম ছিল বইপ্রেমী ও দর্শনার্থী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে প্রকাশক ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া বইপ্রেমী খুব একটা পাওয়া যায়নি। হাতে গোনা যে কজন এসেছিলেন তারাও ব্যস্ত ছিলেন ঘোরাঘুরি আর সেলফি তোলায়।

ক্ষতিপূরণের দাবিতে পাবলিশার্স ফোরাম কাটাবন : করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে পাবলিশার্স ফোরাম কাটাবন। গতকাল অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় ফোরাম সদস্যরা জানান, ১১ এপ্রিলের মধ্যে বইমেলা ও করোনার কারণে ফোরামের সদস্যদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের তালিকা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রদান করা হবে। তা ছাড়া আসন্ন বাজেটে সৃজনশীল বই কেনার বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় এ সভায়। ফোরামের সভাপতি শওকত আলী তারার সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন সম্পাদক দেলোয়ার হাসান।

মালেক মুস্তাকিমের ‘একান্ত পাপগুচ্ছ’ : অন্যপ্রকাশ থেকে এবারের মেলায় এসেছে কবি মালেক মুস্তাকিমের কাব্যগ্রন্থ ‘একান্ত পাপগুচ্ছ’। ষাটটি কবিতা দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। কবিতার বই খুব একটা বিক্রি না হলেও এ বইটি পাঠকদের নজর কেড়েছে বলে জানান প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশের বিক্রয়কর্মীরা। প্রচ্ছদ করেছেন মাসুম রহমান। ৬৩ পৃষ্ঠার বইটির দাম ২৫০ টাকা।

নতুন বই : গতকাল ২২তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৪৭টি। এর মধ্যে গল্পের বই আটটি, উপন্যাস ছয়টি, প্রবন্ধ পাঁচটি, কবিতা ১৯টি, গবেষণা একটি, ছড়া দুটি, জীবনদুধুটি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক দুটি, নাটক একটি ও অন্যান্য বিষয়ের একটি। গত ২২ দিনে মোট নতুন বই এসেছে ২ হাজার ৩৩৩টি। এ পর্যন্ত মোট গল্পের বই প্রকাশ হয়েছে ২৯৯টি, উপন্যাস ৩৭৬টি, প্রবন্ধ ১৪১টি, কবিতা ৭৮৪টি, গবেষণা ৪৩টি, ছড়া ৩৯টি, শিশুতোষ ৩২টি, জীবনী ৭২টি, রচনাবলি ১৫টি, মুক্তিযুদ্ধ ৭৬টি, নাটক ১১টি, বিজ্ঞান ৩৮টি, ভ্রমণ ৩১টি, ইতিহাস ৫৪টি, রাজনীতি ১৫টি, চিকিৎসাবিষয়ক ১২টি, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক ৪৮টি, রম্য/ধাঁধা ১২টি, ধর্মীয় ২৪টি, অনুবাদ ২৪টি, সায়েন্সফিকশন ১৮টি ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর ১৬৯টি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর