শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

শুকিয়ে গেছে বড়াল চাষ হচ্ছে ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

শুকিয়ে গেছে বড়াল চাষ হচ্ছে ধান

রাজশাহীর বড়াল নদ শুকিয়ে গেছে। এখন সেখানে চাষ হচ্ছে ধান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শুকিয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদ বড়াল। এই নদের বুক চিরে এখন বয়ে যাচ্ছে একটি নালা। সেই নালার পানি দিয়ে বেশির ভাগ অংশে চাষ হচ্ছে ধান। স্লুইসগেট দিয়ে পানির প্রবাহ কমিয়ে ফেলা এবং নাব্যতা কমে আসায় নদটির এখন করুণদশা। দীর্ঘদিন ধরেই ড্রেজিং করে এ নদে আবারও প্রাণ ফেরানোর দাবি জানাচ্ছেন পরিবেশবাদীরা। কিন্তু লাভ হয়নি।

পদ্মা থেকে বড়াল নদের উৎপত্তি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায়। এরপর নদটি রাজশাহীর বাঘা, নাটোরের বাগাতিপাড়া ও বড়াইগ্রাম, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বাঘাবাড়ি দিয়ে বয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চারঘাট এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৮৫ সালে বড়ালের উৎপত্তিস্থলে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর ফলে বড়ালে পানি কমতে থাকে। সে সময় বড়ালের উৎসস্থল চারঘাটে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। পরে নদের ৪৬ কিলোমিটার ভাটিতে আটঘরি এলাকায় আরও একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। এছাড়া ১২৫ কিলোমিটার ভাটিতে পাবনার চাটমোহরে আড়াআড়িভাবে তিনটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। দহপাড়া এলাকায়ও আরও একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। স্লুইসগেটগুলো নষ্ট হয়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে বড়ালে পানি প্রবাহ থেমে যায়। ধীরে ধীরে বড়াল মরতে থাকে। সম্প্রতি চারঘাট উপজেলা সদরে বড়ালের উৎপত্তিস্থলে গিয়ে দেখা যায়, স্লুইসগেটের দরজা খোলা। কিন্তু পদ্মার যে অংশ দিয়ে বড়ালে পানি ঢুকবে সেখানেই পানি নেই। ফলে বড়ালে পদ্মা থেকে এখন কোনো পানি আসছে না। চারঘাট এলাকায় বড়ালের বুকজুড়ে ধান চাষের চিত্র দেখা যায়। ধানে সার দিচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সাবিয়ার রহমান। তিনি বললেন, যার বাড়ি বা জমির সামনে নদের যে অংশ পড়েছে তিনি সেখানে ধান চাষ করেন। বছরের পর বছর এটাই হয়ে আসছে। বড়ালের বুক চিরে ছোট্ট একটা নালা চলে গেছে। নালাটির দুই পাশে নদীর বেশির ভাগ অংশে চাষ হয়েছে বোরো ধান। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, বছরের বেশির ভাগ সময়ই নদে চাষ হয়। শুধু বর্ষার সময় মাসদুয়েক পানি থাকে। তিনি বলেন, সারা বছর নদে চাষাবাদ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পানি থাকলেই ভালো হতো। নদের পানি ব্যবহার করে পাড়ের দুই পাশের জমিগুলোতে আরও বেশি ভালো আবাদ করা যেত। বড়ালকে বাঁচাতে রাজশাহীর চারঘাট, পাবনার চাটমোহরসহ বিভিন্ন এলাকায় নদ রক্ষা কমিটি হয়েছে। কমিটির নেতারা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনও করেন। শেষে বড়ালে পদ্মার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে নাটোরের নারদ ও মুসা খাঁ নদের আংশিক এবং চারঘাটের বড়ালের প্রবেশমুখ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৩ কোটি ৩ লাখ টাকার প্রকল্পে নারদ, মুসা খাঁ ও বড়ালের প্রায় ১৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার খনন করা হয়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চারঘাটে বড়ালের ইনটেক চ্যানেল খনন কাজ শেষ হয়। কিন্তু বর্ষায় বড়ালে পানি যায়নি। নদ থেকে খনন করা বালু আবার নদেই চলে গেছে।

চারঘাট বড়াল নদ রক্ষা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলে বড়ালের প্রবেশমুখ খনন করা হয়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আবার আগের মতো। নদের বালু নদেই নেমে গেছে। ওই কাজে দুর্নীতি হয়েছে। চরম গাফিলতি হয়েছে।’

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘বড়াল নদ রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে নাটোর পাউবো। তারা আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করেছে। সেটি ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমাও দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি যদি অনুমোদন পায় তাহলে বড়াল আবারও খনন করা যাবে। স্লুইসগেটগুলো সংস্কার করা হবে। তখন স্বাভাবিক পানি প্রবাহ নিশ্চিত হবে। এতে বড়াল প্রাণ ফিরবে।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর