রাস্তার পাশের দেয়াল ঘেঁষে একটি আলমারি রাখা। কাঠের তৈরি। বেশ বড়সড়ো। কড়ায় একটি ছোট্ট তালা। দুই কপাট সামান্য বাইরের দিকে এগোনো। তালাটা খুব টাইট অবস্থায় রয়েছে। কাকভোর থেকেই আলমারিটি সেখানে। কেউ নিতে আসছে না। আলমারি ঘিরে লোকজনের কৌত‚হল বাড়ে। আস্তে আস্তে লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। নানা ধরনের কথাবার্তা সেখানে। কেউ বলছে, ভিতরে মানুষ। কেউ বলছে, ভিতরে মালামাল ভর্তি। ডাকাতরা আলমারি শুদ্ধ মালামাল হয়তো লুটে নিচ্ছিল। কিন্তু পারেনি। এমন সব গুজবের ডালপালা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পায় পুলিশও। থানা থেকে ছুটে আসে তারা। ‘দেখি দেখি, সরে যান’ বলতে বলতে ভিড় ঠেলে আলমারির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথমেই আলমারিটি ভালো করে দেখতে থাকেন। আলমারির বাইরের দিকটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন। আলমারির দুই পাট ঠেলে ভিতরের দিকে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে। কিছুই বুঝতে পারছে না, ভিতরে কী। খয়েরি রঙের আলমারির চারপাশে বেশ কিছু মাছি ভোঁ ভোঁ করে উড়ছিল। তা দেখে খটকা লাগে পুলিশের ওই কর্মকর্তার। কী বিষয়! মাছি উড়ছে কেন? তবে কি সেখানে অন্য কিছু। লাশ? এমন ভাবনা থেকেই ওই কর্মকর্তা আলমারির তালা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। পাশের দোকান থেকে একটি বাটখারা নিয়ে এসে কড়ায় আঘাত করেন। দুবার জোরে আঘাত করতেই তালাসহ আলমারির কড়া ভেঙে যায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আলমারির কপাট সামনের দিকে বেরিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ভিতর থেকে বেরিয়ে পড়ে প্যান্ট-শার্ট পরা আস্ত এক ব্যক্তির লাশ। পুলিশ সদস্য এক লাফে সরে পড়েন। লাশটি তখন হুমড়ি খেয়ে রাস্তার ওপর পড়ে যায়। লাশটি আলমারির কোর্ট ঝোলানোর স্থানে দাঁড় করানো অবস্থায় ছিল। আলমারি থেকে লাশ বেরিয়ে আসায় পুলিশ তো হতভম্ব। মানুষের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। লাশের শরীরে আঘাতের বেশ কিছু চিহ্ন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়েছে। ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর সকালে পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকার ভগবতী ব্যানার্জি রোডে ঠিক এভাবেই কাঠের আলমারি থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের সময় স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেও কোনো কিছু জানতে পারছিল না পুলিশ। ভিড়ের মধ্যেই ছিল একজন সুইপার। সে পুলিশকে জানায়, ‘তখনো অন্ধকার ছিল। আমি ঝাড়ু দিতেছিলাম। দেখি দুই ব্যাডা ভ্যান গাড়িতে কইরা ওই আলমারিটা নিয়া আসল। ধরাধরি কইরা তারা আলমারি নামাইয়া চইলা গেল। বাসাবাড়ি বদলানোর জন্য আলমারি রাইখা গেছে ভাইবা আমি কিছু কই নাই।’ পুলিশ তার কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হয়। কিছুটা হলেও তারা তথ্য পেল। এখন বাকিটা তাদের বের করার পালা। ওয়ারী থানায় এ ব্যাপারে পুলিশ একটি মামলা করলেও তেমন কোনো তথ্য তারা পাচ্ছে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয় লাশ। সেখানে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। অজ্ঞাত লাশের দাবিদার কেউ আসছে না। পুলিশ এ নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। দিন যায়, কিন্তু মামলার তদন্তে কিছুই খুঁজে পায় না পুলিশ। ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে চার দিন। কিন্তু তদন্ত এগোয়নি একচুলও। রাজধানীর রাস্তায় আলমারিতে লাশ ফেলে গেল, কিন্তু এখনো কোনো কূলকিনারা হলো না। তদন্ত নিয়ে পুলিশ যখন অন্ধকারে, ঠিক তখনই পুলিশের কাছে খবর আসে, মর্গে লাশের দাবিদার করে কেউ এসেছে। পুলিশ ছুটে যায় মর্গে। সেখানে পায় মোহাম্মদ শাহজাহান নামের এক ব্যক্তিকে। শাহজাহান পুলিশকে জানায়, মর্গে পড়ে থাকা ব্যক্তিটি তার ছোট ভাই। নাম মান্টু। পুলিশ এ সংক্রান্ত প্রমাণাদি দেখাতে বলে। শাহজাহান মান্টুর ছবি দেখালে লাশের সঙ্গে মিলে যায়। শাহজাহান পুলিশকে জানায়, তার ভাই রাজশাহীর একজন আম ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকায় বেশ কিছু ব্যবসায়ীকে আম সরবরাহ করেন। পুলিশের আসল তদন্ত শুরু হয়। মান্টুর সঙ্গে কার কার আম ব্যবসা রয়েছে, তার একটি তালিকা নেয় পুলিশ। তাদের খোঁজখবর নিতে শুরু করে। শাহজাহানের কাছে পুলিশ জানতে পারে ফরিদ নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে মান্টু টাকা পেত। সেই টাকা দেওয়ার কথা ছিল। মান্টু টাকা নিতে ঢাকায় আসে। আর এ খবরটি তাকে মোবাইল ফোনে জানায়। পুলিশ তার কাছ থেকে খবর পেয়ে ছুটে যায় ১১১/৩ নম্বর উত্তর যাত্রাবাড়ী ফরিদের ভাড়া বাসায়। সেখানে গিয়ে ফরিদকে পায় না। ফরিদ তার পরিবার নিয়ে বাসা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পুলিশ ওই খালি বাসায় ঢুকে রুমের আশপাশ দেখতে থাকে। বাসার একটি কক্ষে ডেটলের কড়া গন্ধ পায় পুলিশ। সেখান থেকে বেরিয়ে পুলিশ বাসার আশপাশটা দেখে নেয়। ড্রেনের পাশে কিছু একটার ওপর মাছি উড়তে দেখে। ভালো করে পুলিশ খেয়াল করে দেখতে পায়, জমাট বাঁধা কিছু রক্তের ওপর মাছি উড়ছে। পুলিশের আর সন্দেহ থাকে না। খুন যে ফরিদ করেছে, তা এক প্রকার নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরপরই পুলিশ ফরিদকে গ্রেফতারে অভিযান চালায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার হয় ফরিদের স্ত্রী পান্না। জিজ্ঞাসাবাদে পান্না পুলিশকে জানায়, তার স্বামী হিমেল হাসান ফরিদ মান্টুকে আমের টাকা পরিশোধ করার কথা বলে তাদের বাসায় ডেকে আনে। মান্টু ফরিদের সঙ্গে আমের ব্যবসা করত। আমের পাওনা টাকার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে মান্টু ফরিদের সঙ্গে দেখা করে। কিন্তু টাকা পরিশোধ করা নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। পরে সহযোগীদের নিয়ে ফরিদ পরিকল্পিতভাবে মান্টুকে হত্যা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ফরিদ ও তার বন্ধু মাসুদ খন্দকার ওরফে জনি, ইমরান হোসেন ওরফে রাজা, রহমান ও শাহিন হাসান পান্না একত্রে মান্টুকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে লাশ গুম করতে কাঠের আলমারির মধ্যে মান্টুর লাশ ঢোকায়। এরপর তাদের পরিচিত তারেক আহমেদ নামে একজনের ভ্যান ভাড়া করে ৩১ সেপ্টেম্বর রাতে সবাই মিলে আলমারিসহ লাশ ভগবতী ব্যানার্জি রোডে ফেলে পালিয়ে যায়। পান্নার তথ্যমতে ঘটনায় জড়িত মাসুদ খন্দকার ওরফে জনি ও ইমরান হোসেন ওরফে রাজা ও তারেক আহমেদকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতার করা হয় আসল খুনি মাসুদকে। এরা প্রত্যেকেই এখন কারাগারে বন্দী। বিচারের মুখোমুখি। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামান্য কিছু টাকা আত্মসাতের জন্য ঘৃণিত অপরাধ করেছে মাসুদ তার পরিবার নিয়ে। প্রচলিত আইনে খুনের সাজা সর্বোচ্চ। খুন করে খুনি কখনো পালিয়ে থাকতে পারে না। ধরা তাকে পড়তেই হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবেই হোক কোনো না কোনো সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতার করবেই। যেভাবে গ্রেফতার হয়েছে এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকেই।
শিরোনাম
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে যা জানাল সরকার
- গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে: সারজিস
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গণসমাবেশে ছাত্রজনতার ঢল
- বিলবাওকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে ফাইনালে ম্যানইউ
- সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা: অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল
- ভারতের ৭৭ ড্রোন ভূপাতিতের দাবি পাকিস্তানের
- পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে হামলায় নবজাতকসহ নিহত ৫
- শ্রীলঙ্কায় সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, নিহত ৬
- যমুনার সামনেই জুমা পড়লেন আন্দোলনকারীরা
- যে কারণে গভীর পর্যবেক্ষণে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান, রয়টার্সের বিশ্লেষণ
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, তৈরি হচ্ছে মঞ্চ
- রাফাল যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলেছে ভারত, প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি
- সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা: শত শত মানুষকে সরিয়ে নিলো ভারত
- খায়রুজ্জামান লিটনের সাবেক এপিএস স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা টিটু আটক
- উত্তেজনা চরমে: পাকিস্তানের পক্ষে বার্তা দিলেন এরদোগান
- ‘সিনেমা’ থেকে ‘বাস্তব’ জগতে ফিরে আসুন, ভারতকে পাকিস্তানের আহ্বান
- ইংলিশ দলে ডাক পেলেন রিউ
- ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ‘আমাদের কোনও বিষয় নয়’ : যুক্তরাষ্ট্র
- এল-ক্লাসিকোর রেফারি চূড়ান্ত
- পাকিস্তান থেকে সরিয়ে যেখানে হবে পিএসএল
আলমারিতে ছিল লাশ
মির্জা মেহেদী তমাল
প্রিন্ট ভার্সন

টপিক
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর

পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় সম্পূর্ণ ‘ব্ল্যাকআউট’ জম্মুতে পরপর বিস্ফোরণ, দাবি ভারতের
১৬ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

পাকিস্তানের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করার দাবি ভারতের
২২ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

সত্যিই কি পরমাণু যুদ্ধে জড়াবে ভারত-পাকিস্তান? যা ছিল পুরনো মার্কিন গবেষণায়!
২০ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম