শনিবার, ১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

হদিস মিলছে না দামি মাদকের হোতাদের

উৎস-গন্তব্য থাকছে অজানা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের জব্দ করা দামি মাদকের উৎস ও গন্তব্য হদিস পাচ্ছে না তদন্তকারী সংস্থাগুলো। গত দুই বছরে কোকেন, ক্রিস্টাল মেথ এবং থেইনথাইলামিনসহ নতুন ধরনের কয়েকটি মাদকের চালান জব্দ করা হলেও খোঁজ মেলেনি সিংহভাগ চালানের নেপথ্য হোতাদের। প্রায় মামলায় আটকে যাচ্ছে মাদকের ক্যারিয়ার পর্যন্ত গিয়ে। তবে প্রশাসনের দাবি, সার্কিট ব্রেকার পদ্ধতি অনুসরণ করার ফলে হোতাদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না উৎস ও গন্তব্যের ঠিকানা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও অপরাধ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রত্যেক মাদক চালানের পয়েন্ট অব অরজিন এবং পয়েন্ট অব ডেসটিনেশন থাকে। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থার নানা দুর্বলতার কারণে তা বের হচ্ছে না। এ দুর্বলতা কাটাতে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের উন্নত প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির আধুনিকায়ন করতে হবে।’ র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, ‘কোকেন, ক্রিস্টাল মেথ, ফেইনথাইলামিনের মতো দামি মাদকের পাচারকারীরা সার্কিট ব্রেকার পদ্ধতিতে কাজ করছে। যখন কোনো চালান জব্দ হয় তখন চালানের আগে-পরে যারা থাকে, তারা আত্মগোপনে চলে যায়। ক্যারিয়ারও ক্রেতা ও বিক্রেতার বিষয়ে খুব একটা জানে না। ফলে দামি মাদকের উৎস ও গন্তব্য অজানা থাকছে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে এসব মাদকের হোতাদের খুঁজে বের করার।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্ট চট্টগ্রাম নতুন ধরনের মাদকের প্রবেশদ্বারেও পরিণত হয়েছে। গত দুই বছরে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বেশ কিছু নতুন মাদকের চালান জব্দ করেছে। জব্দ করা এসব মাদকের মধ্যে রয়েছে ক্রিস্টাল মেথ, ফেইনথাইলামিন, সাদা ইয়াবাসহ কয়েক ধরনের নতুন মাদক। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয় কোকেনের কয়েকটি চালান। কিন্তু এসব চালানের কোনোটাইর উৎস ও গন্তব্য চিহ্নিত করতে পারেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা। এমনকি জানা যায়নি ক্রেতা কিংবা পাচার চক্রের হোতাদের নাম। প্রায় মামলার তদন্ত থমকে গেছে শুরু ক্যারিয়ার পর্যন্ত গিয়ে। ফলে এসব মাদকের উৎস ও গন্তব্য থাকছে অজানা। ৪ মার্চ কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ক্রিস্টাল মেথের দেশের ইতিহাসের সব চেয়ে বড় চালান জব্দ করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। অভিযানে দুই কেজি ক্রিস্টাল মেথসহ আবদুল্লাহ নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭৫০ গ্রাম থেনইথাইলামিন জব্দ করেছে র‌্যাব। ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানাধীন টাইগারপাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫ কোটি টাকার কোকেনসহ বখতেয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।  ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর নগরীর হালিশহর থানাধীন বড়পোল এলাকা থেকে প্রায় এক কেজি কোকেনসহ আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেনের বৃহৎ একটি চালান ধরা পড়ে। ক্রিস্টাল মেথের বৃহৎ চালান আটকে নেতৃত্ব দেওয়া কক্সবাজারের টেকনাফ বিশেষ জোনের সহকারী পরিচালক সিরাজুল মোস্তাফা বলেন, ‘চালানের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া আবদুল্লাহ খুব বেশি তথ্য দিতে পারেনি। তাই এ চালানের উৎস ও গন্তব্য নিয়ে খুব একটা তথ্য নেই আমাদের কাছে। সন্দেহভাজন বাকি আসামিদের গ্রেফতার করার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।’

সর্বশেষ খবর