মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

আবার পুড়ল মহাখালী সাততলা বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবার পুড়ল মহাখালী সাততলা বস্তি

রাজধানীর মহাখালীতে সাততলা বস্তিতে গতকাল ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে ঘর। মানুষের আহাজারি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর মহাখালী এলাকায় সাত বছর ধরে ভিক্ষা করেন নূরজাহান বেগম। পাঁচ মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে আসমা মানসিক রোগী। ভিক্ষার টাকায় ওই মেয়ের চিকিৎসা চলে। যারা টাকার বদলে চাল বা যা দেয়, তাই দিয়ে চলে সংসার। এভাবে দ্বারে দ্বারে হাত পেতে সাততলা বস্তির একটি ছোট ঘরে তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন ছোট সংসার। কিন্তু সর্বনাশা আগুন নূরজাহানের চোখের সামনেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় তার সংসার। তাইতো ছাইয়ের মধ্যে নিজের স্বপ্ন হাতড়াতে হাতড়াতে বিলাপ করছিলেন নূরজাহান বেগম। কাউকে দেখলেই কেঁদে কেঁদে বলছেন, পরনের কাপড় ছাড়া কিছু আর রইল না। দুই বস্তা ভিক্ষার চাল ছিল। তাও পুড়ে গেছে। এখন খাব কী? থাকব কোথায়?

শুধু নূরজাহান বেগম নয়, একই অবস্থা রাজধানীর মহাখালী সাততলা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর। গতকাল ভোর রাতে লাগা আগুনে সবকিছু পুড়ে গেলেও সবাই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে অবশিষ্ট কিছু পাওয়া যায় কি না সেই খোঁজ করেছেন। দুপুরে সরেজমিনে সাততলা বস্তিতে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। এর আগে, ভোর ৪টার দিকে সাততলা বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের হিসাবে বস্তির ১২৫টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যেখানে প্রায় হাজারখানেক রুম ছিল। অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইনের কারণেই এ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ৫ হাজার টাকা, টিন ও ত্রাণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। পাশাপাশি বস্তির অগ্নিদুর্ঘটনা কমাতে স্থায়ী আবাসন করার উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন তিনি। সরেজমিনে দেখা যায়, পুড়ে ছাই হওয়া ঘরগুলোর চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া টিভি-ফ্রিজ, হাঁড়ি-পাতিল, বালিশ-তোষক, চামচ, খুনতি, ট্রাংকসহ আসবাবপত্র। পোড়া টিন কাঠ কিংবা বাঁশ দিয়ে সরিয়ে অবশিষ্ট কিছু আছে কি না সেটি খুঁজে দেখছেন সবাই। অনেকে আবার ঘরের ওপরে বসে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে কান্না করছেন। একইভাবে আর্তনাদ করছিলেন ভিক্ষাবৃত্তি করা নূরজাহান বেগম। জানতে চাইলে নূরজাহান বলেন, ৭ বছর আগে তার স্বামী বাদল মিয়া মারা যান। এরপর থেকে ভিক্ষা করে সংসারটা দাঁড় করাইছি। খুব কষ্ট করে টাকা জমিয়ে একটা চৌকি, একটা ফ্যান ও একটা পুরনো ওয়ারড্রব কিনছিলাম। চোখের সামনে ঘরে আগুন লাগার ১৫ মিনিটের মধ্যে সব পুড়ে গেল।

বস্তিবাসীরা জানান, বস্তির সব ঘর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে দোতলা ও তিনতলা করায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ মানুষই সন্তান কোলে এক কাপড়ে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়েছেন জীবন রক্ষার তাগিদে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এই বস্তি সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। এখানে অবৈধ গ্যাস ও বিদুৎ সংযোগও রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- গ্যাস লিকেজ থেকে আগুনের সূত্রপাত। বনানী থানার ওসি নূরে আযম মিয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা যে তালিকা করেছি, সেই হিসাবে ১২৫টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যেখানে হাজারখানেক রুম ছিল। দুপুর ১টার দিকে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, বস্তিবাসীদের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ৫ হাজার টাকা, টিন ও ত্রাণ দেওয়ার ঘোষণা দেন ডিএনসিসি মেয়র।

সর্বশেষ খবর