করোনাভাইরাস সংক্রমণে দেশে ৩০ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। একই সময়ে নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ১২ শতাংশ, যা ৪৩ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর চেয়ে বেশি ৫৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছিল গত ৯ মে, আর বেশি (১২ দশমিক ৫১ শতাংশ) শনাক্ত হারের তথ্য জানানো হয়েছিল গত ২৭ এপ্রিল। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনার চেয়ে ঢাকা বিভাগে ছয় গুণের বেশি নমুনা পরীক্ষা হলেও দুই বিভাগেই সমসংখ্যক (৫৪৪ জন করে) রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ঢাকা বিভাগে, যা মোট নমুনা পরীক্ষার ৪৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এতে শনাক্তের হার ছিল ৬ শতাংশ, যা অন্য সব বিভাগের চেয়ে কম। খুলনা বিভাগে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ হাজার ৪৬৬টি, যা মোট নমুনা পরীক্ষার ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। শনাক্তের হার ছিল ৩৭ দশমিক ১১ শতাংশ, যা সব বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া রংপুরে ২৫ দশমিক ৭৩, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ২৭, বরিশালে ১৪ দশমিক ৪৪, সিলেটে ১১ দশমিক ৫০, চট্টগ্রামে ১১ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ নমুনায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশে গত এক দিনে ১৯ হাজার ১৬৫টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৩২২ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬২ জন। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ৮ লাখ ১৫ হাজার ২৮২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১২ হাজার ৯১৩ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩০২ জন। ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৪৪ জনের মধ্যে ২৭ জন ছিলেন পুরুষ ও ১৭ জন নারী। হাসপাতালে ৪০ জন ও বাড়িতে চারজন মারা গেছেন। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ২৬ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, ১০ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, তিনজন চল্লিশোর্ধ্ব, চারজন ত্রিশোর্ধ্ব ও একজনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ১১ জন ঢাকা, ১১ জন রাজশাহী, সাতজন চট্টগ্রাম, ছয়জন খুলনা, পাঁচজন রংপুর এবং দুজন করে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। এদিকে দেশের গড় শনাক্তের হার ১৩ শতাংশের নিচে থাকলেও অনেক জেলা ও উপজেলায় ৫০-৬০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ বাড়ায় চলমান লকডাউনের মধ্যে আবার দেওয়া হয়েছে কঠোর বিধি-নিষেধ। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর-
বাগেরহাট : গত ২৪ ঘণ্টায় বাগেরহাটের মোংলায় ৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৬১ দশমিক ২২ শতাংশ। এ ছাড়া ফকিরহাটে ১৪ জন, মোরেলগঞ্জে আটজন, সদরে সাতজন, শরণখোলায় ছয়জন, রামপালে তিনজন ও মোল্লাহাটে একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, মোংলায় শনাক্তের হার ৭১ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। কঠোর বিধি-নিষেধের পর কিছুটা কমেছে। এদিকে প্রতিটা উপজেলা থেকে পৃথকভাবে নেওয়া তথ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৯ জন শনাক্তের খবর মিললেও কেন্দ্রীয়ভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ৫৩ জন শনাক্তের কথা জানানো হয়েছে। সাতক্ষীরা : গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৩ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ ছাড়া হাসপাতাল ও বাড়িতে ৪৮০ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। হু হু করে সংক্রমণ বাড়ায় জেলায় চলছে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন। দিনাজপুর : গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪১টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা সারা দেশের গড় শনাক্ত হারের প্রায় তিন গুণ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ : গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪৭টি নমুনা পরীক্ষায় ১৮৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ। তবে আরটি-পিসিআর ল্যাবে শনাক্তের হার ৫৯ শতাংশ। র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে শনাক্তের হার মাত্র ১৮ শতাংশ হওয়ায় কমে গেছে শনাক্তের হার। নোয়াখালী : গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৯ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২২ শতাংশ। সংক্রমণ রোধে ৫ জুন থেকে নোয়াখালী পৌরসভা ও সদর উপজেলার ছয় ইউনিয়নে বিশেষ লকডাউন চলছে। খুলনা : স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী খুলনা জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ৩১ শতাংশের বেশি। দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার এই বিভাগে। এই পরিস্থিতিতে খুলনার চার থানা এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হলেও অধিকাংশ মানুষই তা মানছেন না। নিষেধ অমান্য করেই খুলছেন দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সড়কে, যানবাহনে, কাঁচাবাজারে, খেয়া পারাপারে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি উপেক্ষিত। চায়ের দোকানে চলছে দল বেঁধে আড্ডা। যশোর : যশোর পৌরসভা ও অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভায় আশঙ্কাজনকহারে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পৌরসভা দুটির পুরো অংশে কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। বুধবার মধ্যরাত থেকে বিধিনিষেধ কার্যকর হবে। এর আগে গত ৫ জুন পৌরসভা দুটির কিছু এলাকায় বিধিনিষেধ জারি করা হয়।