বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ওরা এখন চার দেয়ালে বন্দী

মির্জা মেহেদী তমাল

ওরা এখন চার দেয়ালে বন্দী

কুমিল্লার বরুড়া পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন খান খুন হন। এক মধ্যরাতে বরুড়ার আড্ডা নামক গ্রামের মানুষ যখন ঘুমিয়ে, ঠিক তখনই একদল দুর্বৃত্ত হানা দেয় শরীফ উদ্দিন খানের বাড়িতে। দুর্বৃত্তরা বাড়ির ভিতরে ঢোকার পর শরীফের ঘরের দিকে যায়। তারা ঘরের জানালা কেটে ভিতরে ঢুকে পড়ে। ঘরের ভিতর এ সময় ধস্তাধস্তি হয়। আধাঘণ্টা ধরে লুটপাটের একপর্যায়ে শরীফের স্ত্রী মোনালিসা হিমু চিৎকার করতে থাকেন। পাশের কক্ষ থেকেও ছুটে আসে তার তিন নাবালক সন্তান। তারা চিৎকার করে কান্না করতে থাকে। শরীফের স্ত্রী ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। গ্রামবাসী তাদের চিৎকারে ছুটে আসেন শরীফের ঘরে। শরীফ তখন রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিলেন। গলায় ছিল একটি গামছা পেঁচানো। শরীফের স্ত্রীর হাত-পা বেঁধে ঘরের এক কোনায় ফেলে রাখে ডাকাতরা। গ্রামবাসী শরীফকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান, শরীফের মৃত্যু আরও আগেই হয়েছে। ঘটনাটি

 ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি। 

চোখের সামনে স্বামীকে খুন করার দৃশ্য দেখেছে মোনালিসা হিমু। প্রিয় স্বামীকে হারিয়ে তিনি পাগলপ্রায়। হাসপাতাল থেকে স্বামীর লাশ বাসায় নিয়ে আসার পর হিমু লাশ ধরেই পড়েছিলেন। তার গগনবিদারি কান্নায় গ্রামবাসী চোখের পানি আটকাতে পারেননি। লাশ ধরে বলছিলেন, ‘ডাকাতরা আমারে মারল না কেন? আমি এখন বাঁচব কী নিয়ে। আমার স্বামীরে কেন নিয়ে গেলা আল্লাহ! আমার জীবনের বিনিময়ে তারে রাখতা। আমি আমার স্বামীরে বাঁচাতে পারলাম না।’ বুক চাপড়িয়ে এমন বিলাম করছিলেন মোনালিসা হিমু।

গ্রামবাসীও ভীষণ আফসোস করছিলেন শরীফকে নিয়ে। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে এভাবে খুন হয়ে গেলেন। মানুুষ হিসেবে ভীষণ ভালো ছিলেন শরীফ উদ্দিন। এ বিষয়ে বরুড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করলেও এর কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পায় না। শরিফের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী হিমু নিজের বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জে চলে যান।

প্রথমে থানা পুলিশ মামলাটি তদন্তে কাজ করলেও রহস্য বের করতে না পারায় পরে তদন্তের জন্য জেলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। প্রথমে ঘটনার রহস্য নিয়ে ডিবি পুলিশ ঘুরপাক খেলেও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নিশ্চিত হয়- স্ত্রী হিমুই তার প্রেমিক নিয়ে শরীফ উদ্দিন খানকে খুন করেছে। আর এটি নিশ্চিত হতে পুলিশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় এক বছর। তদন্ত কর্মকর্তা মু. ইকতিয়ার উদ্দিন জানান, পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা শরীফের পরিবারের সঙ্গে বরুড়ার চেঙ্গাচ্ছাল গ্রামের নাসিরুল আলমের ছেলে আশিকের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় আশিক ওই কর্মকর্তার স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পপ্রণ। একপর্যায়ে শরীফকে প্রেমের পথে বাধা মনে করে হত্যার পরিকল্পনা কপ্রণ। ঘটনার রাতে সন্তানসহ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন শরীফ। তিনি যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন তার স্ত্রীর সহায়তায় প্রেমিক আশিক ঘরে ঢুকে প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে অচেতন করেন। পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এ ঘটনা পরে ডাকাতি হিসেবে সাজাতে নিহতের স্ত্রী হিমুকে হাত-পা বেঁধে রেখে ঘাতক আশিক বের হয়ে যান। এ সময় তিন সন্তানের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ওই বাড়ি আসেন।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, দীর্ঘদিন তদন্ত করে ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে গৃহবধূ হিমুকে তাদের বাড়ি থেকে এবং তার প্রেমিক আশিককে কুমিল্লা নগরী থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর কারাগারে পাঠানো হয় । তারা নিজেদের সুখের জন্য খুনের পথ বেছে নেন। কিন্তুসুখ দূরের কথা, তাদের জীবন কাটবে জেলখানায়। অথবা ঝুলতে হবে ফাঁসির দড়িতে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর