জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ন্যায্য রূপান্তরের জন্য আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ১২ দফা নাগরিক ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। গতকাল সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে সহআয়োজক হিসেবে অংশ নেয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর লেবার স্টাডিজ (বিলস), উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), এথিক্যাল ট্রেড ইনিশিয়েটিভ (ইটিআই বাংলাদেশ), ল’ইয়ার্স ফর এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (লিড), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এবং রি-গ্লোবাল।
অনুষ্ঠানে বিডব্লিউজিইডির সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, গত ১৬ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো ১ দশমিক ৭২ ট্রিলিয়ন টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে নিয়েছে। আর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতি হয়েছে ২ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন টাকা। এর ফলে সরকারকে ২ দশমিক ৩৬ ট্রিলিয়ন টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে।
নাগরিক সমাজের প্রকাশিত এই ১২ দফা ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানানো হয় যে, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘জাতীয় জ্বালানি নীতি’ প্রণয়ন করতে হবে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের নীতিমালা, পরিকল্পনা, আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের আগে নাগরিক সমাজ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সম্ভাব্য দুর্নীতি প্রতিরোধে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালা পরিমার্জন করে সব ধরনের বিদু্যুৎ ক্রয় চুক্তি ও বাস্তবায়ন চুক্তি তথ্য অধিকার আইনের আওতায় উন্মুক্ত করতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনা এবং বিদ্যুৎ খাত থেকে পাচার অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। কয়লা, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের ভর্তুকি ধীরে ধীরে কমিয়ে শিল্প ও আবাসিক খাতে দ্রুত সাশ্রয়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহিত করা। শিল্পে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রবর্তনের জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও কর রেয়াতের সুবিধা দেওয়া। কয়লা, গ্যাস ও তেলভিত্তিক নতুন কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া যাবে না। পুরোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে তা নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র দিয়ে প্রতিস্থাপন করা। যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র পূর্ণ ক্ষমতায় চলতে অক্ষম সেগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিল করতে হবে। নতুন কোনো এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া যাবে না। পুরোনো গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। শিল্পে গ্যাসের বদলে বিদ্যুৎকে উৎসাহিত করতে হবে। দূষণ রোধে দ্রুত বৈদ্যুতিক যানবাহনের আমদানি শুল্ক ও অন্যান্য কর ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের চেয়ে ৭৫ শতাংশ কমাতে হবে। জাতীয় গ্রিডের আধুনিকায়ন করে স্মার্ট গ্রিডে রূপান্তরের উদ্দেশ্যে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি জমি সুরক্ষায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ নিষিদ্ধ করতে হবে।