ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের নটিং হিলের ২৪ পেমব্রিজ গার্ডেনসে ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সেন্টারের বৈঠক নিয়ে তুলকালামের খবর পাওয়া গেছে। বর্তমান কমিটির একাংশের সঙ্গে তর্কাতর্কি ও ধাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ডেকে আনতে বাধ্য হয়। এ নিয়ে বাঙালি কমিউনিটিতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
বাংলাদেশ সেন্টারে পদাধিকারবলে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ব্রিটেনের বাংলাদেশ মিশনপ্রধান। তবে নির্বাহী সব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সেন্টারের স্থায়ী সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত করা হয় দুই বছর মেয়াদি ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল কমিটি। এ কমিটি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। সর্বশেষ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর। এ হিসেবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। এ কারণে হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম নিজেই উদ্যোগ নেন নির্বাহী বৈঠকের। বর্তমান নির্বাহী কমিটির একাংশ সে বৈঠক বাতিলের চেষ্টা চালায়। বৈঠকের নির্ধারিত দিনে হাইকমিশনার বাংলাদেশ সেন্টারে পৌঁছালে আগে থেকেই গণমাধ্যমকর্মীদের আমন্ত্রণ জানায় নির্বাহী কমিটির একাংশ। হাইকমিশনার পৌঁছানোর পর যখন দেখেন আলোচনার সব রেকর্ড হচ্ছে, তখন তিনি মিডিয়াকে ভিডিও ধারণে নিষেধ করেন। তখন উপস্থিত সংবাদকর্মীরা জানান, তাঁরা নির্বাহী কমিটির আমন্ত্রণে এসেছেন। একপর্যায়ে বাংলাদেশ সেন্টারের নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সদস্য হাইকমিশনারের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা উপস্থিত সবাইকে ‘গাঁজাখোর’ বলে উল্লেখ করেন। তখন পরিস্থিতি মারমুখী হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে হাইকমিশনার সেন্টার ত্যাগ করেন। হাইকমিশনার গাড়িতে ওঠার সময় ডেপুটি হাইকমিশনার মো. নজরুল ইসলাম সেন্টারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আহমেদকে বাংলাদেশে গেলে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দেন। এতে মাহবুব ইসলাম উত্তেজিত হয়ে ডেপুটি হাইকমিশনারকে টেনে বের করার চেষ্টা চালান। অবস্থা বেগতিক দেখে হাইকমিশনারের গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ১০ মিনিট পর তিনি আবারও ব্রিটিশ পুলিশ নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে ফিরে আসেন। এখানে মিডিয়াকর্মীরা ভিডিও ধারণ করতে গেলে হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন ভিডিও ধারণ বন্ধ রাখতে। তখন পুলিশ নিশ্চিত করে, পাবলিক প্লেসে ভিডিও ধারণের অধিকার সাংবাদিকদের রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে হাইকমিশনার সেন্টারের ভিতরে প্রবেশ করে বৈঠকে বসলেও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের তোপের মুখে পড়েন। দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আবিদা ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ সেন্টার নানান অনুষ্ঠানে তাঁকে দাওয়াত দিলেও আসেননি। নির্বাহী কমিটির কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে তিনি ইমেইলে বৈঠক ডেকেছেন। এ বৈঠক স্থগিতে ইমেইল করা হলেও আবিদা ইসলাম আমলে নেননি।’
এদিকে হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ সেন্টারের কমিটির মেয়াদ ২৬ নভেম্বর শেষ হবে। আমি আজকে মিটিং ডেকেছিলাম নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করতে। আমরা সব সময় যে ইমেইলে যোগাযোগ করি সেখানেই যোগাযোগ করেছি, কোনো ইমেইল বাউন্স ব্যাক করেনি। সুতরাং যোগাযোগ করা হয়নি এ অভিযোগ সঠিক নয়। গত নির্বাচনের পর থেকেই দুই পক্ষের বিরোধ সুরাহা করা যায়নি। আমার পূর্ববর্তী হাইকমিশনার বারবার বৈঠক করেও সমাধানে আসতে পারেননি।’
বাংলাদেশ সেন্টার ১৯৭১ সালে বৈশ্বিক জনমত গঠনে প্রবাসীদের প্রধান সমন্বয় কেন্দ্র ও বাংলাদেশের প্রথম বিদেশি দূতাবাস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ সেন্টারের বাজারমূল্য প্রায় ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড।