আইটি ব্যবসার আড়ালেই চলছিল অবৈধ সিসা ব্যবসা। নিয়মিত অভিযানের কারণে প্রকাশ্যে বন্ধ থাকলেও অনলাইনেই পরিচালিত হচ্ছিল অবৈধ সিসাবার। অর্ডারে হোম ডেলিভারিও দিয়ে আসছিলেন চক্রের সদস্যরা। প্রয়োজনে স্যাম্পল ও ব্যবহারের নিয়ম দেখানো হতো ভিডিও পাঠিয়ে। সম্প্রতি এমন একটি চক্রের সন্ধান পেয়ে ফাঁদ পাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। ছদ্মবেশে পরিচালিত অভিযানে মোট ১৮ কেজি সিসা, একাধিক হুক্কা সেট, সিসা সেবনে ব্যবহৃত চারকোল, সিসি ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ বদরুদ্দীনের তত্ত্বাবধানে গত ১৬ নভেম্বর উপপরিচালক (গোয়েন্দা) মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে চক্রের ডেলিভারিম্যান মো. আশিকুর রহমান সামি (১৯) ও চক্রের মূল নিয়ন্ত্রক আবদুল আলিম ওয়াসিফকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল দুপুরে সেগুনবাগিচাস্থ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ। বলেন, ডিএনসির গোয়েন্দা বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মাদক পাচারের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করে আসছে এবং এ গোয়েন্দা বিভাগের তৎপরতায় বিভিন্ন সময় বেশ কিছু চালান জব্দ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডিএনসির কাছে গোপন তথ্য ছিল যে, একটি চক্র ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে দেশব্যাপী অবৈধ মাদকদ্রব্য সিসা সরবরাহ করছে। হাসান মারুফ বলেন, চক্রের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনবক্স ও মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে অর্ডার নিত। ছদ্মবেশে ক্রেতা সেজে প্রথমে চক্রের আশিকুর রহমান সামি নামে একজন ডেলিভারিম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পণ্য ডেলিভারির স্থান ঠিক করা হয় হাতিরঝিল এলাকায়। সে অনুযায়ী রাত ১১টায় হাতিরঝিল মহানগর প্রকল্প এলাকায় সিসার জারভর্তি ব্যাগ নিয়ে উপস্থিত হলে সামিকে আটক করা হয়। ওই সময় তার স্কুলব্যাগ তল্লাশি করে ২ কেজি (AL FAKHER) সিসা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে সামির দেওয়া তথ্য যাচাই করে উত্তর বাড্ডার বিটিআই প্রিমিয়াম প্লাজায় অবস্থিত ‘ইনোভেট আইটি’ নামের দোকান থেকে দোকান মালিক আবদুল আলিম ওয়াসিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। জব্দ করা হয় ১৬ কেজি সিসা (১৬ জার), তিনটি হুক্কা সেট, দুটি পাইপ, চারকোল ১০ প্যাকেট, আইফোন, পাঁচটি ওয়াইফাই সিসিটিভি ক্যামেরা।
ওয়াসিফের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডিএনসি মহাপরিচালক বলেন, সে দীর্ঘদিন ধরে আইটি পণ্য বিক্রির আড়ালে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে সিসা সরবরাহ করত এবং তার একটি নেটওয়ার্ক সক্রিয় ছিল। ক্রেতা সেজে ফাঁদপাতা অভিযান সম্পর্কে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা শাখার উপপরিচালক মেহেদী হাসান জানান, নজরদারি ও অভিযানের কারণে অফলাইনে বন্ধ রেখে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে সিসা বিক্রি করছিল একটি চক্র। আমরা প্রথমে সেই পেজটা শনাক্ত করি। সেখানকার বিজ্ঞাপনগুলো অনুসরণ করি। বিজ্ঞাপনগুলো সব জায়গায় ভিজিবল না। কারণ তাদের নিজস্ব কিছু গ্রুপ আছে। সেসব গ্রুপের মধ্যে বিজ্ঞাপনগুলো প্রচার করা হয়।
মেহেদী হাসান বলেন, চক্রটিকে অনুসরণ করতে প্রথমেই গ্রুপে মেম্বার হয়েছি, ছদ্দবেশে সে গ্রুপের মেম্বার হয়ে বিজ্ঞাপনগুলো দেখি। নিয়ম মেনে আমরা নিজেরাই ক্রেতা সেজে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি, ফ্লেভার সম্বন্ধে জানতে হয়, তারা কিছু কোড নেম ব্যবহার করে। সেগুলোও আমাদের জানতে হয়েছে। আমরা অনলাইনে অর্ডার করার পর চক্রটি আমাদের অর্ডারকে এক্সেপ্ট করে। তারা ভিডিও পাঠিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন ধরনের স্যাম্পল দেখাচ্ছিল আমাদের। এরপর আমরা স্যাম্পল অ্যাপ্রুভ করার পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়, দাম, ডিসকাউন্ট, এক্সপায়ার তারিখ জানতে চাই। যেন প্রকৃত ক্রেতা মনে করে। কোয়ালিটি, ব্র্যান্ড, ফ্লেভার নিশ্চিত করে অর্ডার করার পর আমরা দুভাগে অভিযানে নামি। মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় ডেলিভারি দেয়। তখন প্রথমে ডেলিভারিম্যানকে পরে মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।