শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের বটবৃক্ষ!

আবদুল বারী, নীলফামারী

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের বটবৃক্ষ!

‘বটবৃক্ষের ছায়া যেমন রে মোর বন্ধুর মায়া তেমন রে’ গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় এই লোকসংগীতটি আজও মনে করিয়ে দেয় গ্রামীণ ঐতিহ্য বটবৃক্ষের কথা। একটা সময় ছিল যখন বাড়ির সামনে, জমির কাছে ও বিভিন্ন জায়গায় বট গাছ দেখা যেত। অনেক ক্ষেত্রে ঠিকানা নির্ধারণের জন্য ‘বটতলা’ বলে অভিহিত করা হতো বিভিন্ন স্থানকে। গ্রাম বাংলায় পথের কাছে, নদীর পাড়ে, হাটে অথবা জনবিরল স্থানে ডাল-পাতায় ভরা বট গাছ ছিল পথিকের বিশ্রামের জায়গা। যা মানুষ, পাখি, কীটপতঙ্গের অকৃত্রিম বন্ধু। গ্রামগঞ্জের মেলাও বসত বটবৃক্ষের নিচে। সময়ের বিবর্তনে বট গাছের ঐতিহ্য অনেকটা হারিয়ে গেলেও নীলফামারীর গ্রামীণ জনপদে এখনো টিকে আছে অনেক শতবর্ষী বট গাছ।

 যা নিয়ে রয়েছে শত কল্পকাহিনি। বর্তমানে প্রাচীন আমলের দুই-একটি বট গাছ চোখে পড়লেও অনেকাংশে মানুষের চলাফেরার সুবিধার্থে এগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে ছুটতে গিয়ে অনেক সময়ই মানুষ ভুলে যাচ্ছেন তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, একটি বট গাছ কাটার সঙ্গে সঙ্গে তিন শতাধিক প্রজাতির আবাস নষ্ট হয়। তাই আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে পরিবেশবান্ধব বট গাছ সংরক্ষণ ও রোপণ করতে হবে। বট গাছের ফল কাক, শালিক ও বাদুড়ের প্রিয়। বট গাছ বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম। ভূমিক্ষয় রোধ করতে বট গাছের জুড়ি নেই। সালোক-সংশ্লেষণের সময় অন্য গাছের চেয়ে বাতাস থেকে বেশি কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয়। মূল গাছ এবং গাছের ঝুরির শিকড় অনেকটা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশের মাটি আঁকড়ে রাখে। তুলনামূলকভাবে এ গাছে পাতা বেশি। বসন্ত ও শরৎকালে নতুন পাতা গজায়। কচি পাতার রং তামাটে। বট গাছের মঞ্জরির গর্ভে খুবই ছোট এবং ফলের মতোই গোলাকার ফুল লুকানো থাকে। এক লিঙ্গিক ফুল পরাগায়ণের জন্য বিশেষ জাতের পতঙ্গের ওপর নির্ভরশীল। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীতে বটের ফল পাকে। নীলফামারী উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আবু মুসা মাহামুদুল হক বলেন, বট গাছ বাংলা সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সংস্পর্শে মিশে আছে। আজ থেকে প্রায় ২০/২৫ বছর আগে জেলার গ্রামীণ জনপদে চোখে পড়ত বটবৃক্ষসহ পাকুড়, বনস্পতি, মহিরুহ অর্জুনসহ নানান প্রজাতির বৃক্ষ। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গাছ রোপণ করা হলেও বটগাছ রোপণের তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর