সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

জমি জটিলতায় আটকে আছে শেখ হাসিনা নকশি পল্লীর কাজ

আড়াই বছরে বাস্তবায়ন অগ্রগতি শূন্য

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাতের কাজে দক্ষ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে জামালপুরে ‘শেখ হাসিনা নকশি পল্লী’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও গত আড়াই বছরেও এর বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়নি। এমনকি সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি। কারণ ফিজিবিলিটি স্টাডিতে যে পরিমাণ জমি নির্ধারণ করা হয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় তাতে সায় দিচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জামালপুরে প্রায় ৩০০ একর জমির ওপর ৭২২ কোটি টাকায় প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা নকশী পল্লী প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয় ২০১৯ সালের মার্চে। এরপর থেকে পুরো প্রকল্পটি এখনো কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথমে যে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল,  সেখানে প্রস্তাবিত জমির পরিমাণ ধরা হয় ৩০০ একরের বেশি। এখন নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে সংশোধিত প্রস্তাব দিতে বলা হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, উল্লিখিত প্রকল্পের অগ্রগতি বলতে কেবল ঢাকায় বিটিএমসি ভবনের চতুর্থ তলায় একটি অফিস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আরএডিপিতে ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও পরে কোনো ধরনের অগ্রগতি না দেখে সংশোধন করে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

শেখ হাসিনা নকশি পল্লীর উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. মতিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডিতে প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ জমি উল্লেখ করা হয়েছে, সেটিতে সম্মত হচ্ছে না বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এ কারণে প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। প্রকল্পটির অগ্রগতি পর্যালোচনায় গত মে মাসে অনুষ্ঠিত বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই সভায় এনইসি, একনেক, আইএমইডি, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ এবং অর্থ বিভাগের প্রতিনিধিসহ সবাই প্রকল্পের অগ্রগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বলেন,  দুই বছর ৩ মাস (মে পর্যন্ত) ধরে প্রকল্পটি অনুমোদিত হলেও বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। সে সময় বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের প্রতিনিধি জানান, প্রকল্পের জন্য ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবের ওপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রকল্পের গুরুত্ব, অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত জমি ও মোট বিনিয়োগের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে পুনরায় আরেকটি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত বছরের জুনে এনএপিডিকে দায়িত্ব দেওয়ার পর এ বছরের জানুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয় তারা। এরপর ওই প্রতিবেদন অনুসারে প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর পর গত ফেব্রুয়ারিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি পর্যালোচনা সভা হয়। ফিজিবিলিটি স্টাডিতে প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ জমি বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে, বাস্তবে সেই পরিমাণ জমির প্রয়োজন হবে না বলে মন্ত্রণালয়ের পর্যলোচনায় উঠে আসে। তাঁত বোর্ডকে পরামর্শ দেওয়া হয়, দক্ষ ও প্রফেশনাল সংস্থার মাধ্যমে নতুন করে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের। পরে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে আরেকটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা তাঁত বোর্ড। তবে ওই কমিটিও ফিজিবিলিটি স্টাডির বাইরে নতুন করে জমির পরিমাণ নির্ধারণে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তাঁত বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, জামালপুর-শেরপুরের প্রায় ২৬১টি তাঁত পরিবার বাস করে। ৩৫টি পিট বা চিত্তরঞ্জন ও ২০০টি জামদানি তাঁত বিদ্যমান রয়েছে। শেরপুরে ৭৬ নকশি উদ্যোক্তা ও ৩ হাজার ৯৮৫ নকশি শিল্পী রয়েছেন। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও বিপণন সমস্যার কারণে শেরপুর-জামালপুরের এই শিল্পটির তেমন প্রসার ঘটেনি। দেশের একটি বেসরকারি সংস্থা তাদের ব্র্যান্ডের নামে এই এলাকার নকশিকাঁথা ঢাকাসহ অন্যান্য দেশে বিপণন করলেও অন্য কোনো ব্র্যান্ড বা সংস্থা এগিয়ে না আসায় শিল্পীরা সঠিক মজুরি পাচ্ছেন না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জামালপুর-শেরপুর অঞ্চলে হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে ভালো প্রভাব রাখবে। ফলে ওই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন।

সর্বশেষ খবর