শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রবীণ দিবস আজ

ভালো নেই বয়স্করা

জিন্নাতুন নূর

ভালো নেই বয়স্করা

দেশের বয়স্ক নাগরিকরা ভালো নেই। একদিকে বয়সের ভারে নানা রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে, অন্যদিকে কর্মহীন ও অন্যের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর অনেককেই শেষ জীবনে এসে আশ্রয় হারাতে হচ্ছে। অসহায় এ মানুষগুলোকে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। কারও কারও সন্তান অসহায় এ মানুষগুলোকে বোঝা মনে করে    সড়কের ওপর রেখে পালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা মহামারী শুরুর পর প্রবীণ মা-বাবাদের রাস্তায় ফেলে যাওয়ার মতো ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় আজ সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে ‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২১’। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ডিজিটাল সমতা সব বয়সের প্রাপ্যতা’। বাংলাদেশে দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি বছরের মতো এবারও সমাজসেবা অধিদফতর দিবসটি পালন করবে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।  বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী দেশের ২০ শতাংশ প্রবীণ একা থাকেন অথবা প্রবীণ স্বামী-স্ত্রী একা থাকেন। প্রবীণদের দেখভালের জন্য সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কিছু সেবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এমনকি তাদের দেখভালের জন্য দেশে প্রশিক্ষিত জনবলেরও যথেষ্ট অভাব।  প্রবীণদের সেবায় সরকারের পক্ষ থেকে বয়স্কভাতা কর্মসূচি, জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ও পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন প্রণয়নসহ পেনশন সুবিধা দেওয়া হলেও সার্বিক দেখাশোনায় সরকারিভাবে বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে মাত্র একটি। প্রয়োজনের তুলনায় নেই বৃদ্ধাশ্রমও। সরকার ২০১৩ সাল থেকে দেশে পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন প্রবর্তন করলেও এখনো অনেক পরিবারের বৃদ্ধ পিতা-মাতা তার সন্তানের কাছ থেকে ভরণপোষণ পাচ্ছেন না। শিকার হচ্ছেন বঞ্চনার। আর সংশ্লিষ্টরা বলছেন এর কারণ আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব এবং এ সম্পর্কে মানুষের অসচেতনতা। রাজধানীর কল্যাণপুরের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে আসা প্রবীণ ব্যক্তিদের ৯৮ শতাংশের পরিবার ও সন্তানরা তাদের বোঝা মনে করে সড়কে ফেলে গেছে। এদের মধ্যে ২ শতাংশ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বা পথ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত এখানে আশ্রয় নেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১১৯ জন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ জন বৃদ্ধ এবং ৬০ জন বৃদ্ধা। গড়ে এ প্রবীণ ব্যক্তিদের বয়স ৬০ বছরের ওপরে। প্রতিষ্ঠানটি এ ব্যক্তিদের থাকা, খাওয়াসহ যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া প্রবীণদের রাস্তা থেকে তুলে আনা হয়। এ ছাড়া প্রশাসনের লোকজনও রাস্তায় ফেলে যাওয়া এ প্রবীণদের পরিবারের খোঁজ না পেয়ে আপন নিবাসে নিয়ে আসেন। বয়স হওয়ায় এ প্রবীণদের পরিবার তাদের বোঝা মনে করে  রাস্তায় ফেলে চলে গেছে। আশ্রিতদের মধ্যে বেশির ভাগ প্রবীণকে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সড়ক থেকে তুলে আনা হয়। এর বাইরে দেশের অন্য জেলাগুলোতেও মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটছে। এ বৃদ্ধাশ্রমে আসা অধিকাংশ প্রবীণই শিক্ষিত পরিবারের এবং তারা স্বচ্ছল পরিবারের। আশ্রিতদের মধ্যে স্কুল শিক্ষক থেকে শুরু করে এমবিবিএস চিকিৎসকও আছেন। প্রবীণরা  জানান, সন্তানরা তাদের ফেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কিছু বুঝতে দেয় না। চিকিৎসকের কাছে বা ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পরে তাদের অচেনা কোনো রাস্তায় রেখে পালিয়ে যায়। চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সামাদ্দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কয়েক বছর আগেও এ ধরনের ঘটনা কম ঘটত। মহামারীর শুরুতে হালকা জ্বর, কাশি হলেই করোনা সংক্রমণ হয়েছে ভয়ে বৃদ্ধ অভিভাবকদের রাস্তায় ফেলে যাওয়া শুরু করে কিছু সন্তান। অথচ গত বছরও আমাদের এখানে এত মা-বাবা ছিলেন না। কিন্তু গত ছয়-সাত মাস ধরে দ্বিগুণহারে আমরা এ অসহায় মানুষগুলোকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। প্রতি মাসেই এখন ১০ থেকে ১২ জন প্রবীণকে আমাদের কাছে নিয়ে আসছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর