বুধবার, ৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

হল খোলার উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

করোনাকালে ৫৬৫ দিন পর দরজা খুলল ১৮ আবাসিক হলের

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

হল খোলার উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

খুলছে প্রাণের ক্যাম্পাস। তার আগেই খুলেছে আবাসিক হল। ঢাবির রোকেয়া হলের সামনে থেকে গতকাল তোলা ছবি -জয়ীতা রায়

৫৬৫ দিনের সুদীর্ঘ অপেক্ষা শেষে খুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হল। করোনার কারণে গত বছরের ১৯ মার্চ বন্ধ হওয়ার পর গতকাল অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে হলগুলো। করোনা ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ নেওয়ার শর্তে হলে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আগমনে ক্যাম্পাসে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরল। এদিকে, দীর্ঘদিন পর হলে উঠতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আপ্লুত হয়েছেন শিক্ষকরাও। উপাচার্য বলেছেন, দিনটি অনেকটা ঈদের দিনের মতো। গতকাল সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে এলেন সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্র্থী মাসুম বিল্লাহ। হলের প্রবেশ গেটে দায়িত্বরতরা তার পরিচয়পত্র, টিকা সনদ যাচাই ও তাপমাত্রা পরীক্ষা করেন। পরে হলের প্রাধ্যক্ষ, আবাসিক শিক্ষকবৃন্দ তাকে ফুল, চকোলেট ও মাস্ক দিয়ে স্বাগত জানান। মঙ্গলবার এমন দৃশ্যই ছিল প্রতিটি হলের সাধারণ ঘটনা। হলে ওঠার অনুভূতি জানতে চাইলে মাসুম বিল্লাহ বলেন, আসলে হল ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবন অসম্পূর্ণ। অনেকদিন পর হলে উঠতে পেরে অত্যন্ত ভালো লাগছে। স্যাররাও খুবই আন্তরিকভাবে স্বাগত জানালেন। আশা করছি সামনের দিনগুলো আরও ভালো কাটবে। এদিকে, আবাসিক হল ব্যবহারে কক্ষের বাইরে এলে মাস্ক পরিধান করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, নিজ নিজ কক্ষ পরিষ্কার রাখাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে, এ ব্যাপারে প্রতিটি হলেই শিথিলতা দেখা গেছে। এদিকে, নির্ধারিত দুই বর্ষের শিক্ষার্থীর বাইরেও মাস্টার্স উত্তীর্ণ হওয়া অছাত্ররাও হলগুলোতে নিজেদের আগের কক্ষে উঠে গেছেন। এ ছাড়া প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের বেশ কিছু শিক্ষার্থী বিভিন্ন হলে অবস্থান করছেন বলে হলগুলোর সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ্য, প্রশাসনের নির্ধারিত তারিখের আগেই হলে উঠে গিয়েছিলেন এসব শিক্ষার্থী। পরে প্রভোস্ট কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে এসব শিক্ষার্র্থীকে তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত ও কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী’ এসব শিক্ষার্থীকে হল থেকে নামিয়ে দিতে প্রশাসনের কোনো তৎপরতাই দেখা যায়নি।

যা বললেন উপাচার্য : সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল পরিদর্শনে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি হলের কয়েকটি কক্ষ ও ডাইনিং রুম ঘুরে দেখেন। এ সময় তার সঙ্গে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শন শেষে উপাচার্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। হলের শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটা আনন্দের দিন। অনেকটা ঈদের দিনের মতো। শিক্ষকরা আন্তরিকতার সঙ্গে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিচ্ছেন। কীভাবে শৃঙ্খলা মানতে হয়, শিক্ষার্থীরা সেটার দৃষ্টান্ত রাখল।’ ভ্যাকসিন গ্রহণের হার বৃদ্ধি ও করোনা সংক্রমণের হার অনুকূলে থাকলে অচিরেই সশরীরে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, (১ নভেম্বরে) শতবর্ষ উদযাপনের যে প্রস্তুতি রয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীদের বাইরে রাখতে চাই না। করোনার একাডেমিক ক্ষতি মোকাবিলায় ‘একাডেমিক লস রিকোভারি প্ল্যান’ প্রণয়ন ও ইতিমধ্যে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সাবেক শিক্ষার্থী বা অছাত্রদের মধ্যে যারা হলে উঠেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, এটি দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত বিষয়। এটির একটি ভালো ও সম্মানজনক সুরাহার জন্য সবার দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। সিনিয়র শিক্ষার্থীদের এটি একটি দায়িত্ব। সবাই সহযোগিতা করলে সমস্যার প্রত্যাশিত সমাধান আসবে। একইভাবে গণরুম সমস্যা সমাধানের জন্যও ‘ক্রিয়াশীল ছাত্রসংঠন’সহ সবার সহযোগিতা চান উপাচার্য।

টিএসসিতে এনআইডি বুথ উদ্বোধন ৭ অক্টোবর : জাতীয় পরিচয়পত্র-এনআইডি কার্ড না থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী করোনা ভ্যাকসিন নিতে পারছেন না। এসব শিক্ষার্থীর জন্য এনআইডি কার্ডের ব্যবস্থা করতে টিএসসিতে নির্বাচন কমিশনের একটি ‘বুথ’ স্থাপন’ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। ওই বুথে ফিঙ্গার প্রিন্টসহ আনুষঙ্গিক তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আগামী ৭ অক্টোবর সকাল ১০টায় টিএসসিতে বুথ উদ্বোধন করা হবে।

সর্বশেষ খবর