রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিপদে ভুবন চিল

আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

বিপদে ভুবন চিল

চিল নামেই এ পাখিকে আমরা চিনি। তবে এর আরও কিছু বাংলা নাম আছে। যেমন, ভুবন চিল, বাদামি চিল, গোদা চিল, ডোম চিল ও চিলা। আর এ পাখিকে ইংরেজিতে বলা হয় ব্লাক কিট। অনেক ওপরে আকাশে কোনো পাখি উড়তে দেখলেই আমরা ভাবী এটা চিল। তবে এ চিল পাখির অনেক প্রজাতি রয়েছে। শুধু দুই মেরু আর দুই আমেরিকা মহাদেশ বাদে পৃথিবীজুড়ে  এদের দেখা যায়। তবে বিগত কয়েক বছরে এ চিলের সংখ্যা কী হারে কমছে বা বাড়ছে সে সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। এখনো এরা সন্তোষজনক সংখ্যায় রয়েছে। সে কারণে আইইউসিএন এ প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্তভুক্ত ঘোষণা করেছে। পৃথিবীতে মোট ভুবন চিলের সংখ্যা আনুমানিক ১০ থেকে ৬০ লাখ বলে বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করেছে। খোলা বিস্তীর্ণ এলাকা ভুবন চিলের প্রিয় এলাকা। এ ছাড়া ঘন বন, পাতলা বন, পার্বত্য অঞ্চল, নদীর পাড়, বেলাভূমি, বনপ্রান্ত, ঘাসবন, সাভানা প্রভৃতি অঞ্চলে দেখা যায় এদের। মাঝে-মধ্যে বড় বড় বন্দর, শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলেও দেখা যায়।

 এড়ারহফধ উপ-প্রজাতিটি নগর এলাকায় বেশি দেখা যায়। ষরহবধঃঁং উপ-প্রজাতি আর্দ্র ও জনহীন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। বড় বড় গাছে এরা দলবদ্ধভাবে রাত কাটায়। ভোরে সূর্য উঠলে এরা দলবেঁধে আকাশে ওড়ে আর অনেক্ষণ ঝাঁক বেঁধে চক্রাকারে উড়ে বেড়ায়। তারপর খাদ্যের সন্ধানে বিভক্ত হয়ে যায়। সন্ধ্যায় এরা তাদের আবাসে ফিরে আসে এবং পুনরায় ভোরবেলার মতো চক্রাকারে কিছুক্ষণ ওড়ে। তারপর গাছে এসে বসে পড়ে।

শীতে বিপুলসংখ্যক পরিযায়ী ভুবন চিল এসে বাংলাদেশে আবাসিক পাখির দলে যোগ দেয়। ভুবন চিল সুযোগসন্ধানী খাদক। এর খাদ্যতালিকা বেশ লম্বা। স্থানীয় খাদ্যের যোগানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। পানির আশপাশে আবাস হলে মাছই এদের প্রধান শিকার হয়। অনেক সময় এরা মৃত বা রুগ্ন মাছও খায়। আহত, মৃত বা অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি, স্থন্যপায়ী, ব্যাঙ, সরিসৃপ ও পোকামাকড়ও খায়। অন্য ভুবন চিল, পাখি বা প্রাণীর কাছ থেকে এরা খাবার ছিনিয়ে খায়। গ্রামে হাঁস-মুরগির বাচ্চা ছিনিয়ে নিতে এরা ওস্তাদ। বর্জ্যভুক পাখি হিসেবে কসাইখানা, বর্জ্যস্তূপ, ময়লাপোঁতা, মাছবাজার ও পোতাশ্রয়ে ওরা উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য খায়। প্রায়ই শকুনের সঙ্গে মিলে উচ্ছিষ্ট বা পশুর মৃতদেহ খায়।

খাদ্যের সন্ধানে এরা আকাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অলস ভঙ্গিমায় চক্কর কেটে বেড়ায়। এরা খুব কমই ডানা ঝাপটায়। ডানার তুলনায় শরীর হালকা হওয়ায় এরা অনেক্ষণ ডানা না ঝাপটে ভেসে বেড়াতে পারে। নৌকার হালের মতো লেজ ব্যবহার করে ঝটপট দিক বদল করতে পারে। উড়তে পারে বাতাসের প্রতিকূলেও। খাদ্যের সন্ধান পেলে এরা ডানা গুটিয়ে ফেলে ও ঝাঁপ দিয়ে শিকার ধরে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর