শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

তরুণীর বেপরোয়া গাড়ি চালনায় রিকশা চালক হাসপাতালে

আলী আজম

মালয়েশিয়ায় লেখাপড়া করছেন নাইমা ইসলাম নামে এক তরুণী। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী। গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে ওই তরুণী তার এক বান্ধবী ও বন্ধুকে নিয়ে বেসামাল অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে প্রাইভেট কার চালাচ্ছিলেন। বেপরোয়া প্রাইভেট কারটি রাজধানীর গুলশান-২-এর ৯৬ নম্বর রোডে যাওয়ার পর সিগন্যাল অমান্য করে প্রথমে একটি রিকশাকে ধাক্কা দেন। এতে রিকশাচালক, নারী ও শিশু যাত্রী গুরুতর আহত হন। প্রাইভেট কারটি পালিয়ে যাওয়ার সময় আরও একটি প্রাইভেট কারকে পেছনে ধাক্কা দেয়।

তবে প্রাইভেট কারটি ক্ষতি হলেও কেউ আহত হননি। এমন ঘটনার পর পথচারীরা রিকশাচালককে গুরুতর অবস্থায় প্রথমে গুলশানের একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সেখান থেকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই রিকশাচালকের পা ও কোমরের প্লেট ভেঙে গেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। গুরুতর আহত ওই রিকশাচালকের অবস্থা এখন শঙ্কটাপন্ন বলে জানান তার ভাই ফরিদ উদ্দিন। ফরিদ জানান, তার ভাই রিকশাচালক এরশাদ। বাবার নাম মনা। এরশাদ নতুন বাজার এলাকায় সেদনগর এলাকায় ভাড়া থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের হিরামন গ্রামে। বর্তমানে তার ভাই পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার ভাইয়ের কোনো চিকিৎসা খরচ দেয়নি ওই তরুণীর পরিবার। গতকাল আদালতে ওই তরুণী তাকে বলেন, জামিন নিয়ে সব মিট করে ফেলব। গতকাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদকের কাছে আহত রিকশাচালকের কয়েকটি ভিডিও চিত্র হাতে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, ওই রিকশাচালক চিৎকার করে কান্না করছেন। তার পা ভেঙে যাওয়ারও দৃশ্য এবং কোমরে আঘাতের দৃশ্য দেখা গেছে।  এদিকে ঘটনার পরপরই বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে যান ওই তরুণী ও তার সঙ্গে থাকা বন্ধু-বান্ধবী। একপর্যায়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখে সেখান থেকে ৯৫ নম্বর রোডের বাসায় চলে যান ওই তরুণী। এক পথচারী ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন করে বিষয়টি অবহিত করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই তরুণীর প্রাইভেট কারসহ তাকে আটক করে গুলশান থানায় নিয়ে যান। গতকাল এ ঘটনায় কেউ মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটির মালিক মামুন বলেন, তার দুই ছোট ভাই ছিলেন গাড়িতে। পেছন থেকে একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-ট ৩৯-৭৪৩৭) এসে তাদের প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দেয়। এ সময় গাড়ি থেকে নামার পর ওই তরুণীসহ আরও তিনজন গাড়ি থেকে নেমে আসেন। তাদের মধ্যে একজন গাড়িচালক। গাড়িচালক পেছনে বসা ছিলেন। গাড়িতে এক তরুণী, তরুণ ও নাইমা ইসলাম সবাই বেসামাল অবস্থায় ছিলেন। এর আগে, কাছেই একটি রিকশাচালককে চাপা দিয়ে তাকে আহত করেন। রিকশাচালকের অবস্থা গুরুতর। তিনি জানতে পেরেছেন, রিকশাচালকের পা এবং কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। মামলার বাদী গুলশান থানার এসআই শামীম জানান, ট্রিপল নাইনে ফোন পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে যান। পরিস্থিতি তখনো উত্তপ্ত ছিল। ওই তরুণী একটি রিকশাকে ধাক্কা দেন। এরপর একটি প্রাইভেট কারকেও ধাক্কা দেন। প্রাইভেট কারটি ক্ষতি হয়েছে। তবে রিকশাচালকের কী অবস্থা তা তিনি জানাতে পারেননি। তরুণী নাইমার মেয়ে বন্ধু ও ছেলে বন্ধুও মাতাল ছিলেন। তবে তারা ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ বিষয়ে ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার পরপরই নাইমা ইসলাম নামে ওই তরুণীকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলায় গতকাল তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

 ওই তরুণীকে পরীক্ষার পর তার মদ খাওয়ার আলামত পাওয়া যায়নি। তবে ওই তরুণী স্বীকার করেছেন, তিনি অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন করেছেন। মামলাটি তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ হলে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর