সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
টেলিটকের ফাইভ-জি চালু হচ্ছে ১২ ডিসেম্বর

ট্রায়ালের নামে কোটি টাকা লোপাটের পাঁয়তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ-জি সেবা চালু করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক। আগামী ১২ ডিসেম্বর ঢাকার ছয়টি স্থানে এ কার্যক্রম শুরু হবে। বাণিজ্যিকভাবে গ্রাহকদের জন্য ২০২২ সালের মধ্যে ঢাকায় ২০০টি স্থানে এ সেবা চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে বিস্তৃত করা হবে। এদিকে ফাইভ-জি ট্রায়ালের নামে ১ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করেছিল টেলিটকের কতিপয় কর্মকর্তা। বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তা ভেস্তে যায়। পরে ১৬ নভেম্বর ফাইভ-জি ট্রায়ালে অংশ নিতে আগ্রহীদের আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত  আবেদনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাদের তথ্য জানতে দরখাস্ত (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) আহ্বান করা হয়েছে।

জানা গেছে, দেশে টেলিটকের মাধ্যমে ফাইভ-জি ট্রায়াল নিয়ে কাজ করছে আন্তর্জাতিক কোম্পানি হুয়াই ও নোকিয়া। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেলিটকের নেটওয়ার্ক নিয়ে হুয়াই ৫৫ ও নোকিয়া ৪৫ শতাংশ কাজ করছে। তাদের সঙ্গে কাজ করতে চায় মোবাইল প্রযুক্তির অন্যতম আন্তর্জাতিক কোম্পানি স্যামসাং। এ জন্য তারা দুটি সাইটে ফাইভ-জি ট্রায়ালের আগ্রহ প্রকাশ করে গত ২১ সেপ্টেম্বর টেলিটক কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়। টেলিটকের পক্ষ থেকে স্যামসাং-এর ট্রায়ালের খরচ বাবদ ১ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাজেট প্রস্তাব করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায়। অথচ এ ধরনের ট্রায়ালের খরচ স্যামসাং-এর বহন করার কথা। সরকারের কাছ থেকে এই পরিমাণ টাকা নিতে হলে অবশ্যই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মিরাজুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব পণ্য বা সার্ভিসের ট্রায়ালের জন্য অর্থ চাইতে পারে না বা চাওয়ার সুযোগ নেই। তা ছাড়া সরকারের কোটি টাকা ছাড় করতে হলে অবশ্যই দরপত্র আহ্বান করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান প্রতিপালন করতে হবে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেলিটকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ‘ফাইভ-জি ট্রায়ালের নামে এই ১ কোটি টাকাই লোপাট করার পাঁয়তারা ছিল। বিষয়টি গণমাধ্যমে জানাজানি হওয়ায় মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই কীভাবে এত টাকা চেয়ে চিঠি পাঠানো হলো? তাদের উদ্দেশ্য মোটেও ভালো ছিল না।’ তবে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো প্রসঙ্গে টেলিটকের জিএম (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের টেলিটকের নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করে হুয়াই ও নোকিয়া। তাদের যন্ত্রপাতি নিয়েই আমরা ফাইভ-জি ট্রায়াল করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা শুনে স্যামসাংও এ ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব করে চিঠি দেয়। একই সঙ্গে এরকিসনসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করে। আমরা তাদের বলেছি তোমরা এটা করতে চাইলে ফ্রি করতে হবে। তারপরও কাস্টমস ডিউটিসহ বিভিন্ন খাতের খরচ বাবদ ওই টাকার অনুমোদন নিয়ে রাখতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে এভাবে নয়, যারা ট্রায়ালে অংশ নিতে চায় তাদের সবার জন্য সুযোগ উন্মুক্ত করে দাও। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ নভেম্বর ট্রায়ালে অংশ নিতে আগ্রহীদের তথ্য জানতে দরখাস্ত (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। ফলে ওই ১ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিষয়টি আ নেই। সেটা মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেনি।’

এর আগে ১৩ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে বিটিসিএল এক্সচেঞ্জ ভবনে টেলিকম বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সদস্যদের জন্য ‘ফাইভ-জি প্রযুক্তি ও টেলিটকের প্রস্তুতি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় ফাইভ-জি রোলআউট নিয়ে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাহাব উদ্দিন বলেছিলেন, ‘আগামী ১২ ডিসেম্বর ঢাকার ছয়টি স্থানে ফাইভ-জির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে। আর বাণিজ্যিকভাবে গ্রাহকদের জন্য ২০২২ সালের মধ্যে ঢাকায় ২০০টি স্থানে এ সেবা চালু করা হবে। পরে পর্যায়ক্রমে তা অন্যান্য স্থানে বিস্তৃত করা হবে।’ জানা গেছে, প্রথম ধাপে ১ লাখ গ্রাহককে পাঁচটি সেবার আওতায় আনতে চায় টেলিটক। এ পরিষেবা দিতে আড়াই শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, গণভবন, বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ঢাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ থানা ও বেশ কিছু বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকার গ্রাহক ফাইভ-জির আওতায় আসবে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবাইট (১০০ এমবিপিএস) গতির ইন্টারনেট সেবা পাবেন তারা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি সুদান ও উগান্ডার মতো দেশের চেয়েও কম। ইন্টারনেটে গতির হিসাবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭ দেশের মধ্যে ১৩৫তম। বাংলাদেশের পেছনে আছে শুধু আফগানিস্তান ও ভেনেজুয়েলা। ইন্টারনেট অ্যাকসেস ও পারফরম্যান্স অ্যানালিসিস কোম্পানির তথ্য বলছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গতির ইন্টারনেট রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ডাউনলোডের গতি সেখানে ১৯৩ এমবিপিএসের বেশি। আর বাংলাদেশে এর গতি ১২.৪৮ এমবিপিএস। গ্রাহকদের এবার কমপক্ষে আট গুণ বেশি গতি দিতে চায় টেলিটক। তারা বলছে, দেশের প্রায় ৫৬ শতাংশ মানুষ মোবাইল সেবার আওতাভুক্ত। এদের মধ্যে ২৮ শতাংশ গ্রাহক স্মার্টফোনে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশ ও কিছু উন্নয়নশীল দেশে ফাইভ-জি সেবা চালু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর