বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
নিরাপদ সড়কের দাবি

বিক্ষোভ অব্যাহত, এবার বাইসাইকেল র‌্যালি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিক্ষোভ অব্যাহত, এবার বাইসাইকেল র‌্যালি

নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল রাজধানীতে সাইকেল র‌্যালি করেছে শিক্ষার্থীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীতে সাইকেল র‌্যালি করেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় রামপুরা ব্রিজ থেকে এ সাইকেল র‌্যালি বের করে। তবে শুরুতে র‌্যালিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে তা উপেক্ষা করার ঘোষণা দিলে পুলিশ র‌্যালিটি ছেড়ে দেয়। র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেয় খিলগাঁও মডেল কলেজের ছাত্রী সোহাগী সামিয়া। র‌্যালি চলাকালে সড়কের এক পাশে যানজট সৃষ্টি হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঘোষিত ধারাবাহিক কর্মসূচির একটি অনুষঙ্গ সাইকেল র‌্যালি। র‌্যালিটি নটর ডেম কলেজের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের একাংশ সাইকেল নিয়ে রামপুরা ব্রিজের ওপর অবস্থান নেয়। রাস্তার পশ্চিম পাশ থেকে সাইকেল নিয়ে পুব পাশে আসার সময় বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি পালনের বিষয়ে অনড় থাকলে পুলিশ জানায়, অনুমতি ছাড়া র‌্যালি করা যাবে না। সেখানে উপস্থিত রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সড়কে এমন কর্মসূচি পালন করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। তোমাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের দেখতে হবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে উপস্থিত সোহাগী সামিয়া বলেন, সড়কে প্রতিদিন সাইকেল চলে, সব ধরনের যানবাহন চলছে। সেখানে তো কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয় না। আর জনগণের সড়কে জনগণের নিরাপত্তা, নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাইকেল র‌্যালি হবে, তার জন্য কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। বাগবিতণ্ডার মধ্যেই সাইকেলসহ এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে সড়ক থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ সদস্যরা। পরে শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বলে- ‘আপনারা যদি শান্তিপূর্ণ সাইকেল র‌্যালিতে বাধা দেন, তাহলে আমরা উল্টো পথে র‌্যালি করতে বাধ্য হব। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে র‌্যালিটি ছেড়ে দেয় পুলিশ। পরে রামপুরা পুলিশ বক্সের সামনে থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সাইকেল র‌্যালি নিয়ে নটর ডেম কলেজের দিকে রওনা দেয়। এ সময় সাইকেল র‌্যালিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড ও ইউনিফরম পরা ছিল। তাদের সাইকেলের সামনে ছিল বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড। কেউ কেউ সাইকেলের পেছন হেঁটে হেঁটে র‌্যালিতে অংশ নিয়েছে। প্ল্যাকার্ডে ‘চালকের জন্য তিন ঘণ্টা কর্মবিরতি নিশ্চিত করতে হবে, চালকদের কাউন্সিলিং নিশ্চিত করতে হবে, চালকদের নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে, এক রুটে এক বাস চালু করতে হবে, সড়কে শিক্ষার্থীদের বাসে হাফ পাস নিশ্চিত করতে হবে’- ইত্যাদি স্লোগান লেখা ছিল। এ সময় হ্যান্ড মাইকে এক দফা এক দাবি নিরাপদ সড়ক চাই, সড়কে আর মৃত্যু নয়, নিয়ম সবার জন্য সমান’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে সোহাগী সামিয়া। র‌্যালিটি রামপুরা ব্রিজ থেকে রামপুরা বাজার, মালিবাগ রেলগেট ও মৌচাক মোড় হয়ে নটর ডেম কলেজের সামনে গিয়ে শেষ হয়। উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর গত ৭ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে বাসের ভাড়া ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ নভেম্বর হাফ ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২৯ নভেম্বর রাতে রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের বাসের ধাক্কায় এসএসসি পরীক্ষার ফলপ্রার্থী ছাত্রের মৃত্যু হয়। এর আগে ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম। ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি গত ৩০ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের শর্ত সাপেক্ষে হাফ ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু ওই দিন বিকালে তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, কেবল ঢাকা মহানগরে নয়, হাফ ভাড়া চালু করতে হবে সারা দেশে এবং তা সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টার বদলে ২৪ ঘণ্টার জন্য।

এর মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ায় গত ২ ডিসেম্বর থেকে রামপুরা ব্রিজে সড়কের পাশে অবস্থান নিয়ে প্রতিদিনই নিরাপদ সড়কের দাবিসহ অন্যান্য দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ খবর