শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ডিজিটাল পদ্ধতিতে ধান কেনায় বেহাল দশা

দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৫ ভাগ সংগ্রহ

উবায়দুল্লাহ বাদল

ডিজিটাল পদ্ধতিতে ধান কেনায় বেহাল দশা

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে (অ্যাপসের মাধ্যমে) ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে আড়াই শ উপজেলায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে ধান সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার টন। গত দুই মাসে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৭০১ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪ দশমিক ৭৩ ভাগ।

একই অবস্থা চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রেও। ইতিমধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চাল সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করতে আট বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রককে (আরসি ফুড) চিঠি দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারদর সরকারি ক্রয়মূল্যের সমান থাকায় কৃষক বাজারে নিয়ে ধান-চাল বিক্রি করতেই আগ্রহী। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করে ধান-চাল বিক্রির ঝামেলায় জড়াতে চান না কৃষক। তাদের অনেকের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনও নেই। এসব কারণেই মূলত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক শেখ মুজিবর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ধানের বাজারমূল্য এখন সরকারি মূল্যের সমান। ফলে কৃষক ধান সরকারি গুদামে দিতে চায় না। সরকারি গুদামে ধান দিতে তাকে অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করে আসতে হয়। আবার ধান নির্দেশমতো (শর্তমতো) না হলে সরকারি গুদামে নেওয়া হবে না। এসব ঝক্কি-ঝামেলার বদলে বাজারে নিয়ে গেলে একই দামে বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের আমন মৌসুমে ৮ লাখ টন ধান ও চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৩ লাখ টন আমন ধান ও ৫ লাখ টন সেদ্ধ চাল কেনা হবে। এ ছাড়া ১ এপ্রিল থেকে দেড় লাখ টন গম কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ৯ লাখ ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে। ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে মোট ২৪৯ উপেজলায় কৃষকের অ্যাপ ব্যবহার করে কৃষক কার্ডের বিপরীতে প্রত্যেক কৃষক সর্বোচ্চ ৩ টন ধান-চাল খাদ্য গুদামে দিতে পারবেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছর আমন ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য প্রতি কেজি ২৭, চাল ৪০ এবং গম ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য প্রচার খাতে প্রতি উপজেলায় ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৬২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমান বাজারে ধানের মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকার মধ্যে। সরকারি মূল্য মণপ্রতি ১ হাজার ৮০ টাকা। দামের পার্থক্য নেই বললেই চলে। সরকারি গুদামে ধান দিতে হলে নানা শর্ত পালন করতে হয়। অথচ বাজারে ধান নিলেই বিক্রি হচ্ছে নগদ টাকায়। ফলে কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন না করে ধান বাজারেই নিচ্ছে। এ ছাড়া কোনো ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই অ্যাপসের মাধ্যমে ধান-চাল সংগ্রহের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। জেলা কৃষি অফিসগুলো থেকে যে তালিকা সরবরাহ করা হচ্ছে তা দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে। প্রচারের যে টাকা দেওয়া হয় তা অনেকটাই জলে যাচ্ছে। কারণ শুধু উপজেলা সদরগুলোয় নামমাত্র মাইকিং ও কিছু লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। অথচ কৃষক আছে সারা উপজেলায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক। ‘ডিজিটাল চাল সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা’ সিস্টেমের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ আমন ২০২১-২২ মৌসুমে চাল সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদারে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর। ১৯ ডিসেম্বর জারি করা চিঠি ঢাকা, খুলনা, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর