রবিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

১০১ দিন পর ফের ১৭ মৃত্যু

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৯৬১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০১ দিন পর ফের ১৭ মৃত্যু

সংক্রমণের পাশাপাশি করোনায় এবার মৃত্যুও বাড়ছে হুহু করে। তিন মাসের বেশি সময় পর আবারও করোনায় এক দিনে ১৭ জনের মৃত্যু দেখল দেশ। ২০ জানুয়ারি করোনায় চারজনের মৃত্যুর খবর আসে। ২১ জানুয়ারি তা বেড়ে হয় ১২। গতকাল ২২ জানুয়ারি ১৭ জনের প্রাণহানির তথ্য দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংক্রমণ বাড়ায় হাসপাতালেও বাড়ছে করোনা রোগীর চাপ। সারা দেশের নমুনা পরীক্ষায় গড় শনাক্তের হার এখনো ৩০ শতাংশের নিচে থাকলেও অনেক এলাকায় ৭৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে পাঁচ মাসের মাথায় ফের আতঙ্ক হয়ে সামনে এসেছে করোনা। এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহম্মদ হুমায়ুন কবির। করোনাযোদ্ধা হিসেবে আলোচনায় আসা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের মেয়ে নাবিলা, ভাতিজি শবনম ও ভাতিজা রিফাত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে কাউন্সিলর খোরশেদ এ তথ্য নিশ্চিত করে দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৪ হাজার ৩১১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯ হাজার ৬১৪ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৮২০ জন কম। অবশ্য গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা কমেছে ৫ হাজার ৮২৩টি। তাই শনাক্তের হারে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল ২৮.০২ শতাংশ, যা আগের দিন ছিল ২৮.৪৯ শতাংশ।

গত ডিসেম্বরের প্রথম ২২ দিনে করোনায় ৭৫ জনের মৃত্যু হয়। চলতি জানুয়ারির ২২ দিনে প্রাণ গেছে ১৩৭ জনের। ডিসেম্বরের তুলনায় মৃত্যু বেড়েছে ৮২.৬৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৭ জন, যা ১০১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। সবশেষ সমসংখ্যক মৃত্যু হয়েছিল ১৩ অক্টোবর। নভেম্বর ও ডিসেম্বরের কোনো দিনই মৃত্যু নয়জনের বেশি হয়নি। মহামারিকালে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত জুলাই ও আগস্টে। এরপর ভাইরাসটির দাপট কমতে শুরু করে। চলতি মাসে দেশে আছড়ে পড়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ।

গত এক দিনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৮২ জন করোনা রোগী। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৬১৪ জন। এক দিনেই সক্রিয় রোগী বেড়েছে ৯ হাজার ১৩২ জন। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৬ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৭৯ জন। প্রাণ হারিয়েছে ২৮ হাজার ২০৯ জন। মৃত ও সুস্থ বাদে গতকাল শনাক্ত হওয়া সক্রিয় রোগী ছিল ৮৯ হাজার ৯৪২ জন, যা এক মাস আগেও ছিল মাত্র ৭ হাজার ৫৮২ জন। মাসের ব্যবধানে সক্রিয় রোগী বেড়েছে প্রায় ১১ গুণ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের মধ্যে ১১ জন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা।

এদিকে দেশের অধিকাংশ এলাকায়ই সংক্রমণ টানা বাড়ছে। সংক্রমণ এড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও বিভিন্ন এলাকায় চলছে কোচিং সেন্টার। সংক্রমণের দ্রুতগতি ব্যবসায়ী মহল থেকে শ্রমজীবী সবার মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতির সবশেষ তথ্য জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।

বরিশাল : শনাক্তের হার এবং করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কার্যালয় সূত্র জানান, শুক্রবার রাতে আরটি-পিসিআর ল্যাবে ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৩.৩৯ ভাগ। বৃহস্পতিবার এ হার ছিল ৩২.০৮, বুধবার ২৪.৫৪, মঙ্গলবার ২৬.৩৮, সোমবার ১৭.৭২, রবিবার ১২.২২ ও শনিবার ৫.০৪ ভাগ।

বগুড়া : রেডজোন বগুড়ায় বেড়েই চলেছে সংক্রমণ। হাসপাতালে বাড়ছে রোগী। তবু মাস্ক ছাড়া চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৬টি নমুনা পরীক্ষায় ১০৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৫.৩৪ শতাংশ।

মৌলভীবাজার : গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৫৯ শতাংশ।

বাগেরহাট : জেলার নয় উপজেলায় গতকাল নতুন করে ২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মোংলায় চারজনের নমুনা পরীক্ষায় তিনজনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। শনাক্তের হার ৭৫ শতাংশ। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভিড় বাড়ছে টিকাদান কেন্দ্রগুলোয়। তবে টিকা নিতে আসা লোকজনের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব দেখা যায়নি। মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আজ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে। কারও কোনো অজুহাত আর শুনব না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে তা মানছে না কোচিং সেন্টারগুলো। গতকাল জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কোচিং সেন্টারগুলো খোলা ছিল। এমনকি কোচিং সেন্টারগুলোয় স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে না। সকাল ও বিকালে শহরের হরিমোহন গাবতলা মোড় ও কলেজ মোড়ের বিভিন্ন কোচিং সেন্টার খোলা দেখা যায়।

খুলনা : গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে দুজনের মৃত্যু ও ১৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় একজন ও ঝিনাইদহে একজন মারা গেছেন। শনাক্ত সংখ্যা বিবেচনায় জেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে খুলনা। খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, হাসপাতালে বর্তমানে ১৭ জন ভর্তি আছেন। এদিকে সংক্রমণ বাড়ায় আতঙ্কে আছেন ব্যবসায়ীরা। খুলনায় ট্রাভেল ট্যুরস ব্যবসায়ী মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘আগের লকডাউনে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। আবারও লকডাউন ঘোষণা হলে পথে বসতে হবে।’

চট্টগ্রাম : ঊর্ধ্বগতিতে ছুটতে থাকা করোনা পরিস্থিতি চট্টগ্রামে কিছুটা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৪২৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৭০৪ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৯.০৫ শতাংশ। এ সময়ে করোনায় কেউ মারা যাননি। আগের দিন হাজারের ওপর শনাক্ত হয়েছিল। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এক্সিকিউটিভ কমিটির (ইসি) সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে ১০ জন করোনা রোগী থাকলেও প্রতিদিন উপসর্গ নিয়ে অনেকেই আসছেন।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর