সোমবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী

তৃতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক স্বাস্থ্যকর্মী, ঝুঁকিতে স্বাস্থ্যসেবা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের জায়গা দখলে নিচ্ছে ওমিক্রন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ইউনিট ৪ এ কর্মরত আছেন ৪০ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে গত এক মাসে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন। অধিকাংশ চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যদের করোনা শনাক্তের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। চিকিৎসকের অধিকাংশই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন। মেডিসিন বিভাগের অন্যান্য ইউনিটে বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী তৃতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন।

শুধু ঢাকা মেডিকেল নয় অন্যান্য হাসপাতালেও চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার চিত্র প্রায় একই। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরাও। দেশে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৪৯৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সালেহউদ্দিন মাহমুদ তুষার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন বিভাগে একাধিক চিকিৎসক আক্রান্ত হচ্ছেন। উপসর্গ আছে এমন স্বাস্থ্যকর্র্মীরা টেস্ট করলে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাচ্ছেন। তাদের পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত হলে চিকিৎসক, নার্সরা রোগীর সেবা দিতে পারবেন না। একসঙ্গে অনেক বেশি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হলে সেবা ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশের হাসপাতালে কর্মরত ৩ হাজার ১৩৬ জন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, ২ হাজার ৩০৪ জন নার্স আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৪ হাজার ৫৪ জন স্টাফ আক্রান্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে ৯ হাজার ৪৯৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি ৮৭০ জন, নার্স আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪০ জন এবং স্টাফ আক্রান্ত হয়েছেন ৫০১ জন। চট্টগ্রাম জেলায় চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯২ জন, নার্স আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ জন, স্টাফ আক্রান্ত হয়েছেন ৯৮ জন। সিলেট জেলায় চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৯ জন, নার্স আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ জন, স্টাফ আক্রান্ত হয়েছেন ১১৩ জন। ময়মনসিংহ জেলায় চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৩ জন, নার্স আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৪ জন, স্টাফ আক্রান্ত হয়েছেন ১৪০ জন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীরা দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে অনেকে আবার আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনা প্রতিরোধী টিকা নিলেও আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।’ তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দুটি মনঃকষ্টের কারণ রয়েছে। তারা হাসপাতাল থেকে সেবা দিয়ে বাড়ি গেলে তাদের পরিবারের সদস্যরা আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকছেন। অনেকের পরিবারে বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা-মা আছেন। তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের ডিউটি শেষ করে হোটেল কিংবা কোনো আইসোলেশন সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা নেই।  আরেকটি বিষয় করোনাকালে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা এখনো পাননি চিকিৎসকরা। এরপরও চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা দেশের এ দুর্যোগ মুহূর্তে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।’ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ভাইরোলজিস্ট ডা. মো. জাহিদুর রহমান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ গত শনিবার কভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবে ১৮৩টি নমুনার মধ্যে ১০৩টি পজিটিভ ফলাফল এসেছে।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের জায়গা দখলে নিচ্ছে ওমিক্রন : করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের জায়গা নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন একটু একটু করে দখল করে নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ও লাইন ডাইরেক্টর (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি জানান, ৭৩ শতাংশ রোগীর নাক দিয়ে পানি ঝরছে।

 

৬৮ শতাংশ রোগীর মাথা ব্যথা, অবসন্নতা অনুভব করছেন ৬৪ শতাংশ রোগী। হাঁচি দিচ্ছেন ৬০ শতাংশ রোগী, গলা ব্যথা ৬০ শতাংশ এবং কাশি দিচ্ছেন ৪৪ শতাংশ রোগী। এ মুহূর্তে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত। গতকাল কভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব তথ্য জানান।

 ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত তিন-চার মাসের তুলনায় হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভর্তি হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে নিজেদের মতো চললে ক্রমাগত করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়বে এবং তা হাসপাতালের শয্যাসংখ্যার ওপর চাপ বাড়াবে। গত বছরের শেষ কদিন ও চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৬ জানুয়ারি সংক্রমণের হার ছিল ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ হার বেড়ে ২৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডার, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সরবরাহ রয়েছে। এ পর্যন্ত ১১৯টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন হয়েছে। ঢাকা শহরের কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সাধারণ ৪ হাজার ৭৩৬টি শয্যার মধ্যে খালি রয়েছে ৩ হাজার ৪৫৫টি। আইসিইউ ডেডিকেটেড মোট ৭৭৮ শয্যার মধ্যে খালি ৬৩৯টি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর