করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি অবসর সময় মধ্যপ্রাচ্যের সবজি স্কোয়াশ চাষ করে লাভবান হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। তার দেখাদেখি অন্যরাও ঝুঁকছেন স্কোয়াশ চাষে। বর্তমানে তার খেতে বিষমুক্ত স্কোয়াশের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে স্কোয়াশ সবজির দাম ভালো থাকায় তিনি ভালো আয়ও করছেন। ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের পৈতৃক ভিটার পাশে প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে স্কোয়াশ চাষ করে গত বছর অর্ধ লক্ষাধিক টাকা আয় করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর শিক্ষার্থী মো. শহিদুল্লাহ কাউসার। ব্যবসায় লাভ দেখে চলতি বছরও তিনি তার একই জমিতে দুই প্রজাতির স্কোয়াশ সবজি চাষ করেন। স্কোয়াশ দেখতে শসার মতো। কুমড়া জাতীয় শীতকালীন এই সবজি অতি পুষ্টিকর, সুস্বাদু, স্বল্পমেয়াদি, উচ্চ ফলনশীল ও লাভজনক। শীতকালীন এই সবজি আবাদ করে মাত্র দুই মাসেই করা যায় প্রচুর লাভ। তার এই চাষের ফলে জেলার কৃষিতে যোগ হলো আরেকটি নতুন সবজি স্কোয়াশ। স্কোয়াশ কুমড়ার একটি ইউরোপীয় জাত-যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। এটি ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও হার্টের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। স্কোয়াশ মূলত উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাষ হয়ে থাকে। স্কোয়াশ অনেকটা দেখতে শসা আকৃতির। এটি শসার মতো লম্বা হলেও রং মিষ্টি কুমড়ার মতো। উচ্চ ফলনশীল জাতের এ সবজি ভাজি, মাছ ও মাংসের তরকারিতে রান্নার উপযোগী। বিশেষ করে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সবজি এবং সালাদ হিসেবে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শহিদুল্লাহ কাউসার জানান, স্কোয়াশ আবাদের সুবিধা হচ্ছে অল্প সময়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ফসল উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ কুমড়া লাগানো যায় তার চেয়ে দ্বিগুণ স্কোয়াশ লাগানো সম্ভব।
পূর্ণবয়স্ক একটি স্কোয়াশ গাছ অল্প জায়গা দখল করে। স্কোয়াশের একেকটি গাছের গোড়ায় ৮ থেকে ১২টি পর্যন্ত ফল বের হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয় এটি। বাজারে প্রতি কেজি স্কোয়াশ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। তিনি গত বছর ২০ হাজার টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে ৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন। চলতি বছর মাত্র ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন। এরই মধ্যে স্কোয়াশ বিক্রি শুরু হয়েছে। এবার আরও বেশি লাভ হবে বলে তিনি আশাবাদী।
সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার-বীজসহ সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। এবার সোনাগাজীতে হলুদ স্কোয়াশও চাষ হচ্ছে। আগামীতে এই উপজেলায় আমরা ব্যাপকভাবে স্কোয়াশ চাষ বৃদ্ধিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করব।
ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তারিক মাহমুদুল ইসলাম জানান, কৃষি অফিস থেকে ওষুধ, সার সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। রবিশস্যটি অপ্রচলিত হলেও খুবই লাভজনক। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০টি ফলন হতে পারে। মানুষ এ সম্পর্কে জানতে পারলে উৎপাদন ও চাহিদা বাড়বে।