ভারতের উত্তর প্রদেশ বিধানসভার নির্বাচনে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বুথ ফেরত জরিপ আগেই জানিয়েছিল এই রাজ্যটিতে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। সেইমতোই হিন্দি বলয়ের বৃহত্তম এই রাজ্যটিতে ম্যাজিক ফিগার পার করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করছেন তারা। এর পাশাপাশি উত্তরাখন্ড, গোয়া, মণিপুরেও সরকার গঠনের পথে রয়েছে বিজেপি। একমাত্র পাঞ্জাবে সরকার গঠন করতে চলেছে আম আদমি পার্টি (আপ)।
উত্তর প্রদেশ : করোনার আবহই উত্তরপ্রদেশসহ ভারতের পাঁচ রাজ্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ প্রায় এক মাস ধরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উত্তর প্রদেশে ৪০৩টি আসনের জন্য মোট সাতটি পর্বে ভোট নেওয়া হয়। ভোটদানের শতকরা হার ছিল ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ। এই রাজ্যটিতে প্রধান লড়াই হয় মোদি-অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন বিজেপি ও তার সহযোগী দলগুলো এবং অখিলেশ যাদবের দল সমাজবাদী পার্টি (সপা) ও রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি) জোটের মধ্যে। এ ছাড়াও নির্বাচনী ময়দানে ছিল মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন ‘বহুজন সমাজবাদী পার্টি (বসপা) ও কংগ্রেস।
গতকাল সকাল ৮টা থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভোট গণনা। ধারণা পাওয়া গেছে, বিরোধীদের কার্যত ধূলিসাৎ করে দিয়ে ফের ক্ষমতা দখলের দিকে এগিয়ে চলেছে বিজেপি। গত ২০১৭ সালের নির্বাচনের তুলনায় কিছুটা আসন কমলেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই ফের ক্ষমতায় যাচ্ছে গেরুয়া শিবির। রাজ্যটিতে সরকার গঠন করতে হলে যেখানে ম্যাজিক ফিগার ২০২, সেখানে এরই মধ্যে বিজেপি জোট এগিয়ে আছে ২৬৬টি আসনে। সমাজবাদী পার্টির জোট ১৩২টি আসনে এগিয়ে আছে। অন্যদিকে রীতিমতো অস্তিত্ব সংকটে শতাব্দী প্রাচীন দল কংগ্রেস, মাত্র ২টি আসনে এগিয়ে আছে তারা। ১টি আসনে এগিয়ে আছে বসপা, অন্যরা ২টি আসনে এগিয়ে।
বিজেপির এই জয়ের ফলে গত ৩৭ বছর পর পরপর দুইবার ক্ষমতায় এলো ক্ষমতাসীন দল। রাজ্যটিতে বিজেপির ক্ষমতায় আসার খবর নিশ্চিত হতেই গোটা রাজ্যে বিজয় উৎসব শুরু করে দেয় বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। গোরক্ষপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। কারহাল কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন অখিলেশ যাদব। দেশটির যে পাঁচ রাজ্যে ভোট নেওয়া হয়, তার মধ্যে অন্যতম উত্তর প্রদেশ। দেশটির হিন্দি বলয়ে আধিপত্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে কৌশলগত গুরুত্বের দিক থেকে উত্তর প্রদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। মনে করা হয়ে থাকে যে এই রাজ্যটিতে যে দল সরকার গঠন করবে, লোকসভার নির্বাচনেও সেই দল তত বেশি অ্যাডভান্টেজ পাবে। স্বাভাবিকভাবেই ২০২৪ সালে ভারতে পরবর্তী লোকসভার নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন ছিল প্রতিটি দলের কাছেই সেমিফাইনাল। সেক্ষেত্রে কার্যত লেটার মার্কস নিয়েই পাস করেছে বিজেপি। শেষবার ২০১৭ সালের উত্তর প্রদেশ বিধানসভার নির্বাচনও সাত দফায় সম্পন্ন হয়েছিল। সেসময় ৪০৩ আসনের মধ্যে ৩১২ আসনে জিতে সরকার গঠন করে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেন যোগী আদিত্যনাথ। এবারও হিন্দি বলয়ের এই রাজ্যটিতে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রধান দাবিদার কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা বলে পরিচিত যোগী। উত্তরাখন্ড : উত্তর প্রদেশের মতো উত্তরাখন্ড, গোয়া ও মণিপুরেও ফের সরকারে আসছে বিজেপি। উত্তরাখন্ড ৭০ আসনের মধ্যে ৪৮ আসনে এগিয়ে থেকে সরকার গঠনের পথে তারা। এ ছাড়া কংগ্রেস ১৮টি এবং অন্যরা এগিয়ে আছে ৪টি আসনে। গোয়া : গোয়ায় ৪০টি আসনে ভোট হয়। এই রাজ্যে সরকার গড়তে হলে দরকার ২১টি আসনে জয়। সেখানে ২০টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত করেছে বিজেপি। কারণ এরই মধ্যে বিজেপিকে সমর্থনের কথা জানিয়ে দিয়েছে স্বতন্ত্র দলের প্রার্থী চন্দ্রকান্ত শেঠি। কংগ্রেস জয় পেয়েছে ১২টি আসনে, আপ ২টি আসনে, মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেসের জোটসঙ্গী ‘মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি’ (এমজিপি) ২টি আসনে এবং অন্যরা ৪টি আসনে জয় পেয়েছে। মণিপুর : উত্তরপূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যে ৬০টি আসনে ভোট নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩১টি আসনে এগিয়ে বিজেপি, ৫টি আসনে কংগ্রেস এবং অন্যরা ২৪টি আসনে এগিয়ে আছে। পাঞ্জাব : একমাত্র পাঞ্জাবে সরকার গঠন করতে চলেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন পার্টি আম আদমি পার্টি (আপ)। যাবতীয় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পাঞ্জাবে সরকার গড়তে ব্যর্থ চরণজিৎ সিং চান্নির নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার। রাজ্যের ১১৭টি আসনের মধ্যে ইতোমধ্যেই ৯২টি আসনে এগিয়ে আছে আপ। ১৮টি আসনে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কংগ্রেস, ৪টি আসনে এগিয়ে আছে শিরোমণি আকালি দল। তবে একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি। রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সাবেক কংগ্রেস নেতা ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং’-এর সঙ্গে গাঁটছড়া করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাত্র ২টি আসনে এগিয়ে আছে তারা। আপের প্রার্থীদের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে কংগ্রেস প্রার্থীরা।
এদিকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতের কেন্দ্রে ফের বিজেপিই আসতে চলেছে বলে ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২২ সালের এ ফলাফলই ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। উত্তর প্রদেশসহ ভারতের চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া ঝড়ের পরই গত সন্ধ্যায় দিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে মোদি এসব কথা বলেন।