বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

মৃত্যুকূপ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

মৃত্যুকূপ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার আধুনগরে ট্রাক ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২১ মার্চ চারজন ঘটনাস্থলে ও একজন হাসপাতালে মারা যান। ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু হয়। ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার পোকখালী লালব্রিজ এলাকায় মিনিট্রাক-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে আহত হন আটজন। ২৭ জানুয়ারি চকরিয়া উপজেলার হারবাং লালব্রিজ এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় মাহিয়ান নামে সাত বছরের  এক শিশু মারা যায়। এভাবে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে। সড়ক দুর্ঘটনার ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মহাসড়কটি এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই ঝরছে প্রাণ। মরছে মানুষ। অসময়ে চলে যেতে হচ্ছে মায়াবী পৃথিবী ছেড়ে। অকালে বরণ করতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব। অসময়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার।

চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে আছে- বেপরোয়া গতি, অসম প্রতিযোগিতা, অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত চালক, লাইসেন্স না থাকা এবং ট্রাফিক আইন না মানা। এর সঙ্গে আছে বিপজ্জনক সড়ক ডিভাইডার, গতিরোধক তৈরি ও মহাসড়ক ঘেঁষে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, সড়কের ওপর হাট-বাজার। তবে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

সড়ক ও জনপথ দোহাজারী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি বেশ ব্যস্ত। তবে সড়কের প্রস্থের তুলনায় যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বেশি। কিন্তু বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এ ব্যাপারে চালকদের আরও বেশি সচেতন ও সতর্ক হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘সড়কটি সম্প্রসারণে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় শিকলবাহা ক্রসিং থেকে পটিয়া বাইপাস পর্যন্ত সড়কটি ১৮ থেকে ৩৪ ফুটে উন্নীত করার কাজ চলছে। দ্বিতীয় দফায় পটিয়া থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ১৮ থেকে ৩৪ ফুটে উন্নীত করা হবে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হলো, এটি ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল এ নিয়ে সমীক্ষা করছে।’ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বাস-মিনিবাস পরিবহন শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত মহাসড়কের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার ও চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দূরত্ব ১১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে পটিয়া থেকে লোহাগাড়া ও চকরিয়া থেকে নাপিতখালী পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা খুবই বিপজ্জনক। এখানকার সড়ক সরু এবং আছে শতাধিক বিপজ্জনক বাঁক। তবে বেশি বিপদ ঘটাচ্ছে চকরিয়া-পেকুয়া থেকে লবণবাহী ট্রাকের পানি। এ পানিতে সড়ক তেলতেলে হয়ে যায়। এতে জরুরি মুহূর্তে ব্রেক করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়।’ জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ত। এ মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করে কক্সবাজার ও টেকনাফ, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের চার উপজেলার গাড়ি। প্রায় ১৫০ কিলোমিটারের এ সড়কে আছে ৮৪টি বিপজ্জনক বাঁক। এ ছাড়া সড়কের তুলনায় গাড়ি ও যাত্রীর সংখ্যা চার গুণ বেশি। যানবাহনগুলোর গতিও বেপরোয়া। বিভিন্ন এলাকার ব্রিজগুলো সরু। সড়কের ওপর এবং পাশেই আছে অসংখ্য হাট-বাজার ও জংশন। এ ছাড়া এমন মহাসড়কেও অবৈধভাবে চলছে নসিমন-করিমন, চার চাকার ট্রলি, ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা, চার চাকার খোলা পিকআপ গাড়ি। সঙ্গে আছে বিপজ্জনকভাবে খোলা ট্রাকে করে লবণ পরিবহন। ট্রাক থেকে পানি পড়ে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। ঘটে দুর্ঘটনা। ট্রাকে ত্রিপল ব্যবহার করে লবণ পরিবহনের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না। ফলে পিচ্ছিল সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা।

সর্বশেষ খবর