রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
সাদাকাতুল ফিতর

ফজিলত, তাৎপর্য ও করণীয়

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

ফজিলত, তাৎপর্য ও করণীয়

রোজা ও ঈদের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত রয়েছে। যেমন, রোজা পালন, সাহরি, ইফতার, তারাবিহ ও সাদাকাতুল ফিতর। রোজা সম্পর্কে রব্বুল আলামিন নিজেই ইরশাদ করছেন। আসসাউমী লি ওয়া আনা আজযিউ বিহি (রোজা আল্লাহ তাআলার জন্য রোজার পুরস্কার তিনি নিজ হাতে দিবেন)। রোজা পালনের শেষে সাদাকাতুল ফিতর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব এক ইবাদত। যাকে এক কথায় ফিতরা বলা হয়ে থাকে। এর দ্বারা গরিব-মিসকিনদের প্রয়োজন পূরণ হয়। তারাও ধনীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন। তাদের মুখে সুন্দর হাসি দেখা যায়। তাই এই সাদাকাতুল ফিতর ঈদুল ফিতর নামাজের আগে প্রদান করতে হয়। দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম-সাধনা আদায় করতে গিয়ে রোজাদারের যে সব ভুল-ত্রুটি হয়ে যায় তার পূর্ণতাও হয় এই সাদাকাতুল ফিতরের মাধ্যমে। ঈদের দিন সকাল বেলা যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ ও ব্যবসাপণ্য) মালিক হবেন, তাঁর নিজের ও পরিবারের সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তাঁর প্রতি ওয়াজিব। তবে কোনো ব্যক্তি যদি ঈদের পূর্বে বা পরে আদায় করতে চান শরীয়তে তারও সুযোগ রয়েছে। সাদাকাতুল ফিতর সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এখানে দুটি উল্লেখ করা হলো ১. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাযি. বর্ণনা করেন, ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম-এর জমানায় আমরা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম “এক সা” (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম প্রায়) খাদ্যবস্তু।’ তিনি বলেন, ‘তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর।’ (বুখারি : খণ্ড : ১, ২০৪)। ২. তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু, যেমন এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনির, এক সা কিশমিশ।’ (বুখারি : খণ্ড-১, ২০৫)।

যেহেতু সাদাকাতুল ফিতর একটি বড় ইবাদত, তাই যাঁরা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নন, তাঁদেরও ফিতরা আদায় করা সুন্নত ও নফল। ৩. এ সম্পর্কে হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাযি. বর্ণনা করেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যখন আমাদের মাঝে ছিলেন, তখন আমরা ছোট, বড়, মুক্ত, ক্রীতদাস সবার পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্য অর্থাৎ এক সা পনির বা এক সা যব বা এক সা খেজুর অথবা এক সা কিশমিশ দিয়ে। আমরা এভাবেই আদায় করতে ছিলাম।’ একবার হজরত মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রাযি. হজ বা ওমরাহ উপলক্ষে মদিনায় এলেন, তিনি জনগণের উদ্দেশে মিম্বরে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তখন তিনি আলোচনা করলেন সে বিষয়ে, যে (ফিতরা) বিষয়ে মানুষ প্রশ্ন করেছে। তিনি বললেন, ‘আমি দেখছি শামের দুই মুদ (নিসফ সা বা পৌনে ২ কেজি) আটা সমান হয় (মূল্যমান হিসাবে) এক সা (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) খেজুরের। অতঃপর মানুষ (সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিয়িগণ) এই মতও গ্রহণ করলেন।’ (মুসলিম : খণ্ড-১, : ৩১৭-৩১৮)।

গম বা আটাও এক সা (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) দেওয়া উত্তম। ৪. হযরত হাসান বসরি রাযি. বর্ণনা করেন, হযরত আলী রাযি. বললেন, ‘আল্লাহ যখন তোমাদের প্রাচুর্য দিয়েছেন তোমরাও উদার হও, গমও এক সা দাও।’ (নাসায়ি, খণ্ড : ১, ২৬৮-২৭০)। এখন আমরা দেখব আইম্মায়ে আরবা তথা চার ইমামের সাদাকাতুল ফিতরের ব্যাপারে বক্তব্য কী?

১. হজরত ইমাম আজম আবু হানিফা রহ.-এর মতে, অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম; অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরিবদের বেশি উপকার হয়, সেটাই উত্তম ফিতরা। ২. হযরত ইমাম মালিক রহ.-এর মতে, খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম এবং খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ‘আজওয়া’ খেজুর দ্বারাই আদায় করা উত্তম। ৩. হযরত ইমাম শাফিঈ রহ.-এর মতে, হাদিসে উল্লিখিত বস্তুর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা আদায় করা উত্তম। ৪. হযরত ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.-এর মতে, সাহাবায়ে কিরাম রাহ.-এর অনুসরণ হিসেবে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম। এ ছাড়া সদকার ক্ষেত্রে সব ফকিহদের ঐকমত্য হলো, ‘যা গরিবদের জন্য বেশি উপকারী তা দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম।’ (আল মুগনি, খণ্ড : ৪, ২১৯। উল্লিখিত বস্তুগুলোর মূল্যে টাকায়ও আদায় করা যায় এবং অন্য কোনো বস্তু (যেমন পোশাক-আশাক, ঈদের বাজার প্রভৃতি) কিনেও দেওয়া যায়। মহান রব্বে কারীম আমাদেরকে সঠিক নিয়মে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর