মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ভোজ্য তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা

বাজেটে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ভারতে এরই মধ্যে ভোজ্য তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০০ রুপি ছাড়িয়েছে। আমদানি সচল রাখতে দেশটির ব্যবসায়ীরা    জরুরি ভিত্তিতে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য তাদের সরকারকে চাপ দিচ্ছেন। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। রাজধানীর বাজারগুলোয় খোলা পাম তেলের দাম কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়েছে। ১৫০ টাকা কেজির পাম অয়েল এখন ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাম অয়েলের দাম বাড়ায় সয়াবিন তেলের ওপরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র জানান, বাংলাদেশেও ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী মিল মালিকরা আন্তর্জাতিক বাজারদর বিশ্লেষণ করে পণ্যটির মূল্য সমন্বয়ের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুসারে বাংলাদেশে পণ্যটির দাম কত হবে, এ বিষয়ে তাঁরা ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে শিগগিরই একটি প্রস্তাব পাঠাবেন বলেও জানিয়েছেন। এদিকে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ার কারণে বিকল্প খাবার তেল হিসেবে এবার সূর্যমুখী, অলিভ অয়েল ও ক্যানোলা তেল আমদানির পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে এসব উদ্ভিজ্জ তেলের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে। ভোজ্য তেল আমদানি ও পরিশোধনকারী একটি কোম্পানির কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে গত মার্চে দাম বাড়লেও রোজার কারণে দেশের বাজারে পণ্যটির দাম সহনীয় রাখা হয়। বর্তমানে দেশে ভোজ্য তেলের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা টনপ্রতি ১ হাজার ৪০০ ডলার ধরে। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে এ দাম ছিল। যুদ্ধের কারণে বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে। টনপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ৬০০ ডলার। উপরন্তু ইন্দোনেশিয়ার পাম তেলে নিষেধাজ্ঞার পর আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় মূল্য সমন্বয়ের জন্য তারা বাণিজ্য সচিবকে অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে গত মাস থেকেই ভোজ্য তেলের দাম বাড়তির দিকে ছিল। আমরা রমজানের কারণে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানিয়েছিলাম তাঁরা যেন নতুন করে দাম না বাড়ান। বরং ট্যাক্স কমিয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে ভোজ্য তেল বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া পাম তেলে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আন্তর্জাতিক বাজারে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ভারতেও প্রায় ২০০ রুপি লিটারে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা পণ্যটির মূল্য নির্ধারণে মৌখিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা ট্যারিফ কমিশনকে সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট দিতে বলেছি।’ সূত্র জানান, ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞার পরপরই ভোজ্য তেলের আন্তর্জাতিক বাজারদর ও দেশের বাজারে এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে ট্যারিফ কমিশনের কাছে জরুরি প্রতিবেদন চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য সচিবকে পাঠানো এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম প্রায় ১ হাজার ৯০০ ডলার এবং পাম তেল প্রায় ১ হাজার ৮০০ ডলার। আমদানিনির্ভর এসব পণ্যের স্থানীয় মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে। স্থানীয় বাজারে মূল্য স্থিতিশীল করতে ১৬ মার্চ অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এতে ভোজ্য তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা হ্রাস পায়। ট্যারিফ কমিশন জানায়, ২০ মার্চ দাম নির্ধারণকালে প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত পাম তেল ১ হাজার ৩০০ আর সয়াবিন তেল ১ হাজার ৪০০ ডলার ধরে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ১ হাজার ৮০০ ও ১ হাজার ৯০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে আমদানিকৃত পাম তেলের ৮৫ শতাংশ ইন্দোনেশিয়া থেকে সরবরাহ করা হয়। বৈশ্বিক এ সমস্যার প্রভাবে ভারতে প্রতি লিটার সয়াবিন ১৮৫ থেকে ২১০ ও প্রতি লিটার পাম তেল ১৮০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। পাম তেলের বিকল্প হিসেবে স্থানীয় বাজারে উদ্ভিজ্জ ভোজ্য তেল যেমন সূর্যমুখী, অলিভ অয়েল, ক্যানোলা তেলের সরবরাহ বাড়াতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে এসব তেলের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর জন্য এনবিআরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

সর্বশেষ খবর