বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

সুরমায় ভেস্তে গেছে শত কোটি টাকার উন্নয়ন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট মহানগরের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল জলাবদ্ধতা। এ সমস্যা সমাধানে গেল সাত বছরে হাতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প। ছড়া-খাল উদ্ধার, খনন, গার্ডওয়াল নির্মাণ ও নতুন করে পুরো নগরের ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। সাত বছরে খরচ করা হয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু বিশাল অঙ্কের এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেও জলাবদ্ধতা মুক্ত করা যায়নি নগর। বরং এবার নগরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। প্রকৌশলী ও নগরবিদরা বলছেন, সুরমার নাব্য হারানোর কারণেই তৈরি হয়েছে এ সংকট। এ জনদুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান করতে হলে সুরমা খনন অথবা বেড়িবাঁধ দিতে হবে। গেল কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর উজানে ভারতের পাহাড়ি এলাকা থেকে নেমে আসা ঢলে ফুলে-ফেঁপে ওঠে সুরমা। যেসব ছড়া-খাল দিয়ে নগরের পানি গিয়ে সুরমায় পড়ত, সেগুলো দিয়েও নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার বিভিন্ন ছড়া-খাল দিয়ে উল্টো পানি ঢোকা শুরু হয়। সোমবার বিভিন্ন স্থানে নদীর তীর উপচেও পানি প্রবেশ শুরু হয়। গতকাল পর্যন্ত এ অবস্থা বিদ্যমান ছিল। ফলে ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, কালিঘাট, তোপখানা, কাজীর বাজার, শেখঘাট, উপশহর, তেররতন, মুমিনখলা, খোজারখলা, ঝালোপাড়াসহ নদীতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এ ছাড়া ড্রেনেজ সিস্টেম ভেঙে পড়ায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। এতে নগরের তালতলা, দাঁড়িয়াপাড়া, ভাতালিয়া, সোবহানীঘাট, যতরপুর, সোনারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। মানুষের বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও অফিসে পানি উঠে যায়। ফলে বাড়তে থাকে দুর্ভোগ। গতকাল সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাত না হলেও উজানের ঢলের কারণে সুরমার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। নতুন করে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। বিশেষ করে যাদের বাসা বহুতল ভবনের নিচতলায় তারা পড়েছেন মারাত্মক বিপাকে। অনেকে বাসাবাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় কিংবা গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। উপশহরের বাসিন্দা ব্যাংকার মোস্তাফিজ রুমান জানান, সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার রাতে তার বাসায় পানি ওঠা শুরু হয়। তিনি বাসার নিচতলায় থাকেন। গতকাল তার বাসায় দেড় ফুট পরিমাণ পানি উঠেছে। উপায়ান্তর না পেয়ে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে উঠেছেন। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছড়া-খাল উদ্ধার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ পায় সিটি করপোরেশন। এরপর জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য হাতে নেওয়া হয় মেগা প্রকল্প। ২০১৬-২০২০ সালের মধ্যে সিটি করপোরেশন বরাদ্দ পায় ২৩৪ কোটি টাকা। ওই টাকা দিয়ে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সবকটি ছড়া-খাল উদ্ধার, খনন ও উভয় পাশে গার্ডওয়াল নির্মাণ করা হয়। নগরের প্রায় সব কটি ড্রেন ভেঙে নতুন করে আরও গভীর ও প্রশস্ত করে তৈরি করা হয়। এর পর থেকে জলাবদ্ধতা কিছুটা কমে আসে। ভারী বৃষ্টিপাত হলে সাময়িক জলাবদ্ধতা তৈরি হলেও পানি দ্রুত নেমে যেত। কিন্তু গেল কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল হিসাব-নিকাশ গুলিয়ে দিয়েছে সিটি করপোরেশনের। ২৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প কোনো কাজেই আসেনি জলাবদ্ধতা কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রণে। এ যেন সুরমার পানিতে ভাসছে শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন! সিটি করপোরেশন সূত্র জানান, নগরের ছড়া-খালের পানি ধারণ ও নিষ্কাশনের ক্ষমতা বাড়লেও প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সুরমার নাব্য। নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় ছড়া-খালের উৎসমুখ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে ভারী বর্ষণ কিংবা পাহাড়ি ঢল নামলে নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠে।

এতে নগরের পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। আর নদীর পানি বেড়ে গেলে উল্টো ছড়া-খাল দিয়ে পানি নগরের ভিতরে ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। তাই সিলেট নগরকে বন্যা ও জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে সুরমা নদী খননের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, সাত বছরে ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও কেবল সুরমা নদী নাব্য হারানোয় এর পূর্ণাঙ্গ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, ২০০৪ সালের পর এবার সিলেট নগরে বড় বন্যা হয়েছে। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হলে এ রকম বন্যা দেখা দিত না। কিন্তু টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের সময় নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত রাখতে হলে হয়তো সুরমা নদী খনন করতে হবে অথবা সুরমায় বেড়িবাঁধ দিতে হবে। এ ছাড়া সারা বছর নগরের ছড়া-খাল ও ড্রেন পরিচ্ছন্ন রাখার কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র তৌফিক বক্স লিপন জানান, মহানগরে ১৬টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর