উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে নিম্ন আদালত, সব জায়গায়ই ছড়িয়ে পড়েছে নকল কোর্ট ফির ব্যবহার। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটি চক্র সারা দেশে এই নকল কোর্ট ফি সরবরাহ করে আসছে। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তাই এবার নকল কোর্ট ফি ঠেকাতে দেশের সব আদালতে ইলেকট্রিক ডিভাইস বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এ লক্ষ্যে ২ হাজার ‘স্ট্যাম্প ইউভি লাইট’ ডিটেক্টর কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে দাখিল করা ২১টি মামলার নথি পরীক্ষা করে ২০টিতেই নকল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প (কোর্ট ফি) শনাক্ত হওয়ার পর টনক নড়েছে সবার। এর পরেই ইলেকট্রিক ডিভাইস কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার থেকে উচ্চ আদালতের পুরনো সব মামলার নথি পরীক্ষা শুরু হয়েছে নকল কোর্ট ফি শনাক্তে। জানা গেছে, আড়াই থেকে তিন বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বর্তমান রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী জাল কোর্ট ফি ব্যবহারের বিষয়টি জানতে পারেন। ওই সময় তার উদ্যোগে সিআইডি একটি অভিযানও চালায়। কিন্তু করোনাসহ নানা কারণে সেই উদ্যোগ অনেকটা ভেস্তে যায়। সর্বশেষ চলতি বছরের শুরুতে ফের উদ্যোগ নেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে দফায় দফায় চিঠি লেখেন এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে। একাধিকবার চিঠি লেখার পর গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরকে নিয়ে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচটি ফাইল নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা যায়, ব্যবহৃত সব কোর্ট ফি’ই নকল। ওই বৈঠক থেকে নকল কোর্ট ফি’র ব্যবহার রোধে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের উদ্যোগে নকল কোর্ট ফি চিহ্নিতকরণে কয়েকটি ‘স্ট্যাম্প ইউভি লাইট’ ডিটেক্টর কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সর্বশেষ গত সপ্তাহে দুটি ডিভাইস সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের হাতে আসে। পরে বৃহস্পতিবার পরীক্ষামূলকভাবে হাই কোর্টের মোশন বেঞ্চ থেকে ২১টি ফাইল আনা হয়। সব চেক করে ২০টি ফাইলে ব্যবহৃত কোর্ট ফি’র সবই জাল বলে ধরা পড়ে। এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আপিল বিভাগের অন্যান্য সব বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির সঙ্গে তাৎক্ষণিক বৈঠক করেন। বৈঠকের সুপারিশ অনুযায়ী পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি বিশেষজ্ঞ টিমকে দিয়ে আদালত চত্বরে অভিযান চালায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। অভিযানে জাল কোর্ট ফি’সহ দুজন ভেন্ডর (স্ট্যাম্প বিক্রেতাকারী এজেন্সির মালিক) ও একজন কোর্ট ফি সরবরাহকারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই নকল কোর্ট ফি’র কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে নকল কোর্ট ফি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সব আদালতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাঠানো হবে সুপ্রিম কোর্ট থেকে। সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী বলেন, তিন বছর ধরে এ নিয়ে কাজ করছি। বৃহস্পতিবার সিআইডিকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করেছে। নকল কোর্ট ফি চিহ্নিত করতে ২ হাজার মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব মেশিন দেশের সব অধস্তন আদালতে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কোর্ট ফি ছাড়া মামলা বা আবেদন দাখিল করার সুযোগ নেই। ১৫০ টাকার কোর্ট ফি থেকে মামলাভেদে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার কোর্ট ফি’র প্রয়োজন পড়ে প্রতিটি মামলায়। দেশের বিভিন্ন সরকারি নথিতে কোর্ট ফি লাগানোর প্রয়োজন পড়ে। ২ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যমানের কোর্ট ফি চালু আছে। এই কোর্ট ফি বিক্রি করে সরকারের প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। এ সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি নকল কোর্ট ফি ছাপিয়ে অল্প টাকায় বিক্রি করে। মাঝে মাঝে এ চক্রের সদস্যরা ধরাও পড়ে। কিন্তু তাতে থামছে না তাদের এই নকল কোর্ট ফি ছাপানো।
শিরোনাম
- আমরা জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র আদায় করে ছাড়ব : নাহিদ
- বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের দাবি ইসলামপন্থীদের ঐক্য : মাসুদ সাঈদী
- চীনকে উড়িয়ে টানা তৃতীয় জয়ে শীর্ষে বাংলাদেশ
- নান্দাইলে বজ্রপাতে পিতা-পুত্রের করুণ মৃত্যু
- বিএনপি নির্বাচিত হলে প্রতিটি ঘরে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে : টুকু
- রাজনীতি হবে দেশের স্বার্থে, জনমানুষের স্বার্থে : আখতার হোসেন
- বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সফল পরিণতি
- ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
- ইরানে আফগানদের গণবহিষ্কার, ছাড়তে না পারলে গ্রেফতার
- ভেজাল টক দই যেভাবে চিনবেন
- গাজায় চলছে যুদ্ধ, তেলআবিবে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ
- হাসারাঙ্গার বিশ্বরেকর্ড
- হাসিনাসহ ১০০ জনকে আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশ
- চুয়াডাঙ্গায় স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ
- জলমহালের একমাত্র অধিকার প্রকৃত মৎস্যজীবীদের: ফরিদা আখতার
- ১০ম গ্রেডে উন্নীত হচ্ছেন প্রাথমিকের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক
- ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ৩১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি
- দেশে ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের করোনা শনাক্ত
- ধর্ষণের শিকার হয়ে বিষ পান করা সেই কিশোরীকে বাঁচানো গেল না
- আমরা আশা করি একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব : সালাহউদ্দিন
নকল কোর্ট ফি ঠেকাতে সব আদালতে বসছে ডিভাইস
কেনা হচ্ছে ২ হাজার ‘স্ট্যাম্প ইউভি লাইট’ ডিটেক্টর
আরাফাত মুন্না
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর