রবিবার, ১২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ভিসা ছিল ১৫ দিনের, শিগগিরই দুবাই ফেরার কথা ছিল মুসার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভিসা ছিল ১৫ দিনের, শিগগিরই দুবাই ফেরার কথা ছিল মুসার

ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ১৫ দিনের জন্য ৮ মে দুবাই থেকে ওমান গিয়েছিলেন সুমন শিকদার ওরফে মুসা। পরিকল্পনা ছিল সালালায় হজরত আইয়ুব (আ.), রসুল (সা.)-এর প্রিয় সাহাবি মিজান ইবনে গাদুবা (রা.)সহ অনেক মুসলিম ব্যক্তিত্বের মাজার জিয়ারত করে দুবাই ফিরে ব্যবসা শুরু করার। তবে দুই দিন পরই তিনি বুঝতে পারছিলেন কিছু অজ্ঞাত লোক তাকে অনুসরণ করছে। বাধ্য হয়েই সফর সংক্ষিপ্ত করেন রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও রিকশাযাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতির জোড়া খুনের অন্যতম সন্দেহভাজন মুসা। তবে তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। ১২ মে ওমান ও আবুধাবি সীমান্ত থেকে মুসাকে গ্রেফতার করে ওমান পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কথাগুলো বলছিলেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের

কয়েকজন। তাঁরা বলছিলেন, অনেক রাঘববোয়ালের নাম উঠে আসছে মুসার জবানিতে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের একসময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। পরে তিনি মতিঝিলের আরেক সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। দুবাইয়ে অবস্থানরত আরেক পলাতক সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। দুবাই গিয়ে জিসানের আশ্রয়েই থাকার পরিকল্পনা ছিল তার। মুসার বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল ও পল্লবী থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০০১ সালে পাঁচটি, ২০০৩ সালে দুটি, ২০০৪ সালে তিনটি ও ২০১৬ সালে একটি মামলা হয়। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মিরপুরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়িয়েছেন তিনি। পল্লবী থানায় একাধিক মামলা হওয়ার পর তিনি ফ্রিডম মানিকের সহায়তায় মতিঝিলে বসবাস শুরু করেন। ভয়ংকর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে টিপু হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন আগে ১২ মার্চ দুবাই পালিয়ে যান মুসা। কোথায়, কার কাছ থেকে অস্ত্র নেওয়া হবে, কে গুলি করবে, কীভাবে রেকি করা হবে, পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য সব রুট সম্পর্কে সবকিছু আগে থেকেই মোল্লা শামীমকে বুঝিয়ে দেন মুসা। পরে দুবাই গিয়ে ৮ মে সেখান থেকে ওমানে চলে যান। খবর চলে আসে তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের কাছে। এ ছাড়া মোল্লা শামীম ঘটনার পর পালিয়ে ভুটান গিয়েছেন বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। এদিকে ওমানে পাঠানো বাংলাদেশ পুলিশের স্কটে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার না থাকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে খোদ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে। তদন্তের সার্বিক অবস্থা ও স্কটের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ডিবির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তারের কাছে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ছয় দিনের রিমান্ডে রয়েছেন মুসা। তার কাছ থেকে অনেক তথ্যই পাচ্ছি। তবে যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো তথ্যকেই আমরা আমলে নিচ্ছি না। সবকিছু বিবেচনা করেই ওমানে পাঠানো স্কটের সদস্য নির্বাচন করা হয়েছিল। মুসার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পরই আমরা স্কট পাঠানোর বিষয়ে মাসকট এনসিবির সহায়তা চাই আমাদের এনসিবির মাধ্যমে।’ ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে ঢাকার ব্যস্ততম শাহজাহানপুরের আমতলায় নিজ গাড়িতে বাসায় ফেরার সময় এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করা হয় জাহিদুল ইসলাম টিপুকে। এ সময় যানজটে রিকশায় থাকা সামিয়া আফনান প্রীতি নামে এক কলেজশিক্ষার্থীও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আলোচিত এ জোড়া খুন ঘটনার দুই দিনের মাথায় ডিবির একটি টিম শুটার আকাশ মোহাম্মদ মাসুমকে গ্রেফতার করে। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন মাসুম। মাসুমের স্বীকারোক্তিতে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় আরফান, শামীম, মানিক ও মুসার নাম উঠে আসে। মানিকও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরই মধ্যে আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনায় মুসাসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর