রবিবার, ১২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

শেষ মুহূর্তে জমজমাট প্রচারণা

কুমিল্লা প্রতিনিধি

নতুন কুমিল্লা গড়ার প্রত্যয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। গতকাল কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগরপাড়ের কার্যালয়ে তিনি ইশতেহার ঘোষণা করেন। তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ইশতেহার ঘোষণা করবেন না বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, তিনি আজ রবিবার ইশতেহার ঘোষণা করবেন। নিজাম উদ্দিন কায়সার ইশতেহার ঘোষণার আগে বলেন, ‘আমার স্লোগান হচ্ছে- নিরাপদ সম্প্রীতির কুমিল্লা গড়তে চাই।’ পরে তিনি ১৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন, যার মধ্যে রয়েছে- সবার জন্য আবাসন, মাদকসহ সামাজিক ব্যাধি দূরীকরণ ও নৈতিক শক্তির পুনরুদ্ধার, নগরজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের ব্যবস্থা করা, জলাবদ্ধতা দূর, যানজট নিরসন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, সুশিক্ষা নিশ্চিত করা, পর্যটন ও বিনোদনপাড়া গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী, খাদ্য ও নগরকৃষি বৃদ্ধি করা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতির ওপর প্রাধান্য দেওয়া।

ইশতেহার ঘোষণার পর নিজাম উদ্দিন কায়সার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পরদিন থেকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে দেব। শপথ পাঠের পর থেকে আমার আনুষ্ঠানিক নগর উন্নয়নের কাজ চলবে। আমি চাই এ নগর সন্ত্রাসী-লুটেরাদের দখল থেকে মুক্ত হোক।’

এদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত নগরীর রানীর দীঘির পাড়ে নৌকা প্রতীকের কার্যালয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। ইশতেহার ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার লিফলেটেই আমার ইশতেহার ঘোষণা করা আছে। তাই আলাদা করে আর ইশতেহার ঘোষণার প্রয়োজন নেই।’ লিফলেটে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করব, ভবনের নকশা অনুমোদনে সরকারি ফির বাইরে মেয়রকে ১ টাকাও দিতে হবে না, বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদনে মেয়রকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট উপহার দিতে হবে না, ঠিকাদারদের কার্যাদেশ নিতে মেয়রকে ঘুষ দিতে হবে না, সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে, পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, সিটি করপোরেশনকে দলীয় কার্যালয় না বানিয়ে গণমানুষের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করব, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন করা হবে, ট্যাক্সের টাকা কুমিল্লার উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।’ টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ইশতেহারের বিষয়ে বলেন, আজ রবিবার তিনি ইশতেহার ঘোষণা করবেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি ৭০ ভাগ কাজ সমাপ্ত করেছি। নির্বাচিত হলে বাকি ৩০ ভাগ সমাপ্ত করব।’ এদিকে শুক্রবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার ১৪তম দিনে প্রথম ইশতেহার ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রার্থী মাওলানা রাশেদুল ইসলাম রহমতপুরী। আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল ইশতেহার ঘোষণা করবেন না বলে জানা গেছে।

এমপি বাহারের বিরুদ্ধে আবারও সাক্কুর দুই অভিযোগ : কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে আবারও অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। গতকাল বিকালে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরীর কাছে নতুন আরও দুটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেয়র প্রার্থী সাক্কু। অভিযোগে সাক্কু উল্লেখ করেন, নির্বাচনী বিধিমালা লঙ্ঘন করে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এবং সংলগ্ন বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ও সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন মসজিদের ইমামদের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার নির্দেশ দিয়েছেন এমপি বাহার। ওই নির্দেশের কারণে উল্লিখিত শিক্ষক ও ইমামরা প্রচারণা কাজে নিয়োজিত আছেন, যা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

একই সময় আরেক অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ও সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নির্দেশে সিটি করপোরেশনের আওতাবহির্ভূত এলাকার জনপ্রতিনিধি, দলীয় কর্মীসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে জনসমাগম, মিছিল ও শোডাউন করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নির্বাচনের দিন বহিরাগতদের দ্বারা জনসমাগম ঘটিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করবেন বলেও শোনা যাচ্ছে, যা আচরণবিধির লঙ্ঘন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর দুটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখব।’ উল্লেখ্য, সাক্কুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে এখনো তিনি নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন।

পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছে ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল নগরীর ঝাউতলার একটি হোটেলে দুই ধাপে ২৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের এ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এতে প্রশিক্ষক বলেন, বিকাল ৪টার মধ্যে কেন্দ্রে ভোটার এলে তাদের ভোট নেওয়া হবে। রাত ১২টা বাজলেও ভোট নেওয়া হবে। সবাই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে। প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ডিরেক্টর (ইলেকশন) ড. মো. আবদুল আলীম।

গণসংযোগ : প্রচারণার আর দুই দিন বাকি। গণসংযোগ ও প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। মাইকের শব্দ আর প্যারোডি গানে মুখর নগরী। প্রচারণার পাল তুলেছে নৌকা প্রতীক, ঘুরছে ঘড়ি, ছুটছে ঘোড়া। গতকাল সকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অডিটরিয়ামে শিক্ষার্থী, ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নার্সদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মো. মনিরুল হক সাক্কু নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। আরেক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের নিজাম উদ্দিন কায়সার গণসংযোগ করেন নগরীর ছাতিপট্টি এলাকায়। নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লা শহরের প্রধান যে সমস্যা সেটা হলো- অল্প বৃষ্টিতেই শহর পানির নিচে থাকে। টাকার বিনিময়ে আগের মেয়র সাক্কু অপরিকল্পিত ভবন-ইমারতের পারমিশন দিয়েছেন, এগুলোর জন্য ড্রেন সংকুচিত হয়েছে।

টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘যেখানে আমি ওয়ার্ক করতে যাচ্ছি সেখানেই ওয়ার্ক শেষে আমার কর্মীদের ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি আশঙ্কা করছি নির্বাচনের দিন সকালে বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন থেকে বহিরাগতদের প্যানিক সৃষ্টি করার জন্য কেন্দ্রের সামনে রাখা হবে, যাতে ভোটাররা না যেতে পারেন। ভোট দিতে গিয়ে এ অবস্থা দেখলে ভোটাররা ভোট না দিয়ে বাসায় চলে যাবেন। আমি অনুরোধ করব সিইসি, রিটার্নিং কর্মকর্তা যেন এ বিষয়টা দেখেন।’ ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, মানুষের মধ্যে আশঙ্কা আছে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হবে না। পুরো নির্বাচনী এরিয়াই ঝুঁকিপূর্ণ। পুরো এলাকাই নি-িদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত, ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারের মধ্যে। ২৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১০৮ জন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৮ জন। মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। কেন্দ্র ১০৫টি। সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে ইভিএমে।

সর্বশেষ খবর