সোমবার, ২০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ইভিএম নিয়ে সংলাপে প্রযুক্তিবিদ আনল না কেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে জাতীয় পার্টি (জাপা) বলেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য দেশের মানুষ প্রস্তুত নয়। এ যন্ত্রটি নিয়ে ভোটারদের নানা ধরনের শঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হোক তা চায় না দলটি। সাধারণ মানুষের ব্যবহারের যান্ত্রিক জটিলতা, প্রায়োগিক ও বৈশ্বিক অবস্থান তুলে ধরে দলটি ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি করেছে।

এদিকে প্রথম ধাপের বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালও দলগুলোকে আশ্বাস দিয়েছেন, এখনো ইভিএম নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যন্ত্রটি নিয়ে দলগুলোকে ধারণা দেওয়া ও স্বাধীন মতামত জানার জন্য এ আলোচনা। ইভিএম নিয়ে দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্য নেই। এমন পরিস্থিতিতে কমিশনও কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে চায় না।

গতকাল থেকে ইভিএমের কারিগরি দিক নিয়ে রাজনৈতিক দলের মতামত নিচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। প্রথম দিনে জাতীয় পার্টিসহ ১৩টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা হয়। ২১ জুন বিএনপিসহ ১৩টি দল এবং ২৮ জুন আওয়ামী লীগসহ ১৩টি দলের সঙ্গে বসার সময় সূচি রয়েছে। এদিকে ইভিএম যাচাইয়ের এই বৈঠকে ১৩ রাজনৈতিক দলকে টেকনিক্যাল পারসনসহ আসার আমন্ত্রণ জানানো হলেও কোনো দলই তাদের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিবিদ নিয়ে আলোচনায় অংশ নেয়নি। এ ছাড়া ইভিএম দেখতে তিন রাজনৈতিক দল কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি।

ইভিএম নিয়ে মানুষের প্রস্তুতি নেই : জাপা মহাসচিব

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আগামী নির্বাচনে পরীক্ষামূলক হতে পারে। কিন্তু সারা দেশে ৩০০ আসনে ইভিএমে হলে এটা হ্যাপাজার্ড হয়ে যাবে। ইভিএমে ভোট দেওয়ার মতো মানুষের প্রস্তুতি নেই। মানুষ ভোট দিতে চায়। কিন্তু মেশিনের বিষয়ে আমাদের ‘রং’ একটা ধারণা। আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলতে চাই- আগামী নির্বাচন ইভিএমে হোক তা আমরা চাই না। এ নেতার মতে, মেশিনের দোষের চেয়ে বড় দোষ বাংলাদেশের মানুষ, ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেওয়ার মতো প্রস্তুত নয়। এটা জাতীয় পার্টি মনে করে।

তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে আমি একটি কথাই বলব- এখানে আসার আগে দলের প্রেসিডিয়াম মিটিং করেছি আমরা। আমরা একটা সিদ্ধান্তে এসেছি- সেটা হলো ইভিএমের দোষ ত্রুটি, কিউরিসিটি বড় কথা নয়। আমরা ইভিএমের জন্য সারা দেশের মানুষ রেডি কি না? ইভিএমে ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলে না, অনেক বিষয় রয়েছে। ইভিএমে আস্থা না দেখানোর কোনো কারণ নেই। কিন্তু ইভিএম নিয়ে ইতোমধ্যে একটা পাবলিক পারসেপশন-ইভিএম মানে অন্য কোনো কারসাজি রয়েছে, এটা বিশেষ কোনো দল কিছু করতে পারে।

সিইসির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জাপা মহাসচিব বলেন, অনুরোধ করব- নির্বাচন করব আমি, আমরা। আপনার দায়িত্ব কতটুকু নির্বাচন সুষ্ঠু করা যায়, ভালো নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেন, তারা বেশিরভাগ যা বলে তা জনগণের প্রতিফলন হতে পারে।

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক আলোচনার শুরুতে বলেন, ‘সারা বিশ্ব যেখানে ইভিএম বর্জন করছে সেখানে কেন আমরা ইভিএম প্রজেক্ট নিয়ে এগোবো? এটাই আমার প্রশ্ন। বিএমটিএফ ইভিএম সুন্দর মেশিন উপস্থাপনা করেছে। তবে দেশের পারসপেকটিভ থেকে মানুষ এমন শিক্ষিত না যে ইভিএম ইনটুডিউচ করা যাবে। তিনি জানান, ৩৪টি দেশ ইভিএম নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। চারটি দেশ-ভারত, ব্রাজিল, ফিলিপাইন ও এস্তোনিয়া-তারা ইভিএম ব্যবহার করছে। আংশিক ব্যবহার করা ১৪টি দেশ ইভিএম ব্যবহার করে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় প্রজেক্ট থেকে সরে এসেছে। সার্কের দেশ পাকিস্তান ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য বিল পাস করেছে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, মালয়েশিয়া, ভেনেজুয়েলাসহ অনেকে বর্জন করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য মনে করে ইভিএম গণতন্ত্রের বিকাশে বাধা, তাই বর্জন করেছে।

ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি : সিইসি

বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইভিএম নিয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আপনারা জানেন কিছুদিন আগেও আমরা ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন করেছি। তারপরও রাজনৈতিক মহলে এবং পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে যেটা আমরা জানতে পেরেছি যে, ইভিএম নিয়ে ঐকমত্য নেই। এমন পরিস্থিতিতেই সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। ইভিএমটা যেহেতু আমরা ব্যবহার করছি। আমাদের উদ্দেশ্য ইভিএম সম্পর্কে আপনাদের ধারণা দেওয়া। কিন্তু আপনাদের মতামত কী হবে, সেটা আপনাদের স্বাধীন মতামত হবে। আমরা কোনো মতামত কারও ওপর চাপিয়ে দিতে পারি না, চাপিয়ে দেব না, সে ধরনের কোনো ইচ্ছাও আমাদের নেই।

দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক শেষে সিইসি বলেন, ‘যে কোনো প্রস্তাবই কন্সট্রাকটিভ। আলোচনা মূল্য দিয়ে বিবেচনা করব।... ইভিএমের ব্যাপারে অনেকের বক্তব্য ইতিবাচক, আবার অনেকে বলেছেন ইভিএম ব্যবহার করা সমীচীন হবে না। কিন্তু ইভিএমের অনেক বিষয় উনাদের অজানা ছিল সেখানে আমাদের বিশেষজ্ঞরা বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলেছেন। তিনি জানান, আলোচনায় আবার কেউ কেউ বলেছেন, পারলে ৩০০ আসনে প্রয়োগ করার যায় কি না; আর ৩০০ আসনে প্রয়োগ না করা গেলে আর নয়। কেউ কেউ ভাগে ভাগে করতে বলেছে। আরও দুটি ধাপে মতামত নিয়ে পরবর্তীতে পর্যালোচনা করবে কমিশন। দলগুলোকে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষারও অনুরোধ করেন সিইসি।

সর্বশেষ খবর