শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

কোরবানির হাট, ঈদযাত্রায় সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা

জিন্নাতুন নূর

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ২৬ জুন শরীরে তাপমাত্রা পরীক্ষা ছাড়াই যাত্রীরা প্রবেশ করেন। এ সময় অনেক যাত্রীর মুখে মাস্কও দেখা যায়নি। মাস্ক ছাড়া যাত্রীদের অনেকে বিমানে উঠলেও তাদের বাধা দেওয়া হয়নি। বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর স্থানে যাত্রীদের মাস্ক ছাড়াই প্রবেশ করতে এবং দেশের মধ্যে বিভিন্ন রুটে বিমানে যাতায়াত করতে দেখা যাচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।

দেশের পর্যটন স্পটগুলোতেও মানা হচ্ছে না কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি। সরেজমিন গত ২৭ জুন সমুদ্রনগরী কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি স্পট ঘুরে দেখা যায়, পর্যটকদের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই। হাতেগোনা কয়েকটি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে মাস্ক পরার জন্য সাইনবোর্ড টাঙানো থাকলেও পর্যটকরা তা মানছেন না।

সম্প্রতি মিরপুর ১১ নম্বর এলাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায়, সেবা গ্রহীতারা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু এদের অনেকেরই মুখে মাস্ক নেই। ব্যাংকটিতে প্রবেশের সময়ও আগের মতো সেবাগ্রহীতাদের হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে না। পরীক্ষা করা হচ্ছে না শরীরের তাপমাত্রা। ঢাকার পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গণপরিবহন, বাসস্ট্যান্ড, শপিং মল এবং বাজার- সর্বত্রই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগের মতো সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। ঈদুল আজহার আর বেশি দেরি নেই। চলতি সপ্তাহ থেকেই রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাট বসতে যাচ্ছে। হাটে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে করোনা সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার চলতি সপ্তাহ থেকেই ঈদযাত্রা শুরু হচ্ছে। এ অবস্থায় মানুষ যদি এখনই স্বাস্থ্যবিধি মানতে শুরু না করেন তাহলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। সাধারণ মানুষের অনেকেরই ধারণা করোনার টিকা নেওয়ার ফলে মাস্ক পরার আর দরকার নেই। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরার বিষয়ে সাধারণের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে যে অসচেতনতা ও খামখেয়ালিপনা দেখা যাচ্ছে তা ঠিক নয়। এমন চলতে থাকলে আগামীতে করোনা সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পাবে। যারা এখনো করোনার টিকা নেননি তাদের মধ্যে করোনার সামান্যতম উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করাতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শুধু মৌখিকভাবে বললেই হবে না, এজন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে বৈঠক করে কাজ করতে হবে।  

ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এখন সবাই করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের শঙ্কা করছি। আর এমনটি হলেই ঝামেলা। করোনার নতুন যে ধরন ওমিক্রন তা দ্রুত সংক্রমণশীল। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে হাসপাতালগুলো রোগীতে সয়লাব হয়ে যাবে। করোনা নিয়ে কয়েক মাস আগেই বেশ তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সে পরিস্থিতির সম্মুখীন আমাদের আবার যেন হতে না হয়। রোগী বৃদ্ধি পেলে হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাবে। আর বেশি মানুষ সংক্রমিত হলে মৃত্যুঝুঁকিও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে যারা বয়স্ক, হৃদরোগী, কিডনি, লিভার ও ক্যান্সার রোগী তাদের সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকি দুটোই বেশি। এদের আরও সতর্ক হতে হবে’। 

দেশে গত জুন মাসের প্রথমদিকে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণের হার। গতকালও দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘরে ঘরে এখন অনেকেরই জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিলেও করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না অনেকে। ফলে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র জানা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। এরপরও মানুষের মাস্ক পরার আগ্রহ কম। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাজারঘাট ও দোকানপাটে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্প্রতি ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বলা হয়- সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। ধর্মীয় প্রার্থনারত স্থানসমূহে (মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মাস্ক পরতে হবে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। জ্বর, সর্দি, কাশি বা করোনার উপসর্গ দেখা দিলে কভিড পরীক্ষা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দোকান, শপিং মল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল-রেস্টুরেন্টে সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এ ছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে মসজিদে জুমার নামাজে খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন ওমিক্রনের যে সাব ভ্যারিয়েন্ট দেখা গেছে তাতে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। এজন্য নিয়মিত নজরদারি রাখতে হবে। বিশেষ করে বিমানবন্দর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক সমাবেশে যেখানে একসঙ্গে বহু মানুষ একত্রিত হচ্ছেন সেখানে যাতে সামাজিক দূরত্ব মানা হয় তা দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকসহ সংশ্লিষ্টদের নজরদারি করতে হবে। যাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ আছে তাদের সতর্ক থাকতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর