জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ ইস্যুভিত্তিক নাশকতার চেষ্টায় দুর্বৃত্তরা। প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে রাজধানীসহ দেশব্যাপী হামলা ও ভাঙচুরের মতো ভয়ংকর পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এগিয়ে এলে প্রয়োজনে তাদেরও টার্গেট করা হতে পারে। সম্প্রতি একাধিক সংস্থা এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেশ করেছিল সরকারের উচ্চপর্যায়ে। সব শেষ শনিবার রাজধানীর শ্যামলীতে ব্যানারবিহীন একটি মিছিল থেকে পুলিশের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। গ্রেফতার ছয়জনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য আদায় করেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনার পর ভবিষ্যতে নানা অস্থিরতা সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সব সদস্যের জন্য বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছেন ডিএমপি মোহা. শফিকুল ইসলাম।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হামলার পর সংগৃহীত সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ১৬ জনকে চিহ্নিত করে পুলিশ। তাদের একজনসহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের সবাই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের তথ্যমতে, ওই দিন শ্যামলী এলাকায় জামায়াত-শিবিরের অন্তত ১৫০ জন নেতা-কর্মী ছিলেন। মামলার এজাহারে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রেজাউল করিমসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, শ্যামলী থেকে শতাধিক মানুষের একটি বিক্ষোভ মিছিল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের দিকে যাওয়ার পথে শ্যামলী শিশুমেলার সামনে আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এ সময় সেখানে রাখা পুলিশের একটি টহলভ্যানে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। গাড়ির সামনের গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়। পুলিশের কয়েকজন সদস্য এতে আহত হন। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শনিবারের ঘটনায় ঢাকার বাইরে থেকেও লোকজন আনা হয়েছিল। একজন এডিশনাল এসপির গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। ওই দিন পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। তবে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক।’ এ ঘটনার আগে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি খারাপ করা হতে পারে। হঠাৎ বাসে আগুন দেওয়া হতে পারে। পুলিশের গাড়িতেও হামলা চালানো হতে পারে। রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে সড়কে ভাঙচুর চালানো হতে পারে।শনিবারের ঘটনার বিষয়ে শেরেবাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, ঝটিকা মিছিল থেকেই নাশকতার চেষ্টা করা হয়। হামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা মূলত পুলিশকেই টার্গেট করেছিল।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের রিমান্ডে দেওয়া চাঞ্চল্যকর তথ্যের বরাত দিয়ে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু সাম্প্রতিক নানা ইস্যুতে প্রতিবাদ কর্মসূচিই নয়, নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াত-শিবিরের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। সারা দেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে। বাধা পেলে নাশকতা চালাবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা কাজ করবে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যৌক্তিক আন্দোলনের কথা বলে কেউ যাতে নাশকতার ঘটনা ঘটাতে না পারে সে বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সতর্ক। সাইবার জগৎসহ সর্বত্রই আমাদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর শুক্রবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষোভ জানাচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিশেষ করে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মোটরসাইকেল চালকরা। এই পরিস্থিতিতে কেউ যাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়, ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগ না করে, সেদিকে ধৈর্য ধরে পুলিশকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার।
ডিএমপি কমিশনারের বিশেষ বার্তা : জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা অসিলায় অস্থিরতা তৈরির চেষ্টাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি ডিএমপির ক্রাইমসহ সব বিভাগের উপ-কমিশনার থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছেন তিনি। ডিএমপির একাধিক উপ-কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা বলছেন, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা মেনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তারা সড়কে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা টহল জোরদারের পাশাপাশি নজরদারিও বাড়িয়েছেন।