রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যাংকিংয়ের নামে প্রতারণা সুদের হার ৩০০ শতাংশ!

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে চলে হামলা-মামলা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে চলছে ব্যাংকিংয়ের নামে ভয়ংকর প্রতারণা। ক্ষুদ্র ঋণ সমিতি, অনিবন্ধিত এনজিওর আড়ালে ব্যাংকিং সিস্টেমের আদলে আদায় করা হচ্ছে সঞ্চয় থেকে শুরু করে ডিপিএস, এফডিআর। পরে সেই টাকা ২৫০ থেকে ৩০০ শতাংশ সুদে বিভিন্ন জনের কাছে দেওয়া হচ্ছে ঋণ। তাদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে কেউ ব্যর্থ হলে চালানো হচ্ছে অমানুষিক নির্যাতন। বছরের পর বছর ধরে ভয়ংকর এ ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু থাকলেও সংশ্লিষ্টদের নেই কোনো মাথাব্যথা।

একে ভয়ংকর প্রতারণা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অপরাধবিজ্ঞানী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে ব্যাংকিং সিস্টেমের মতো কাজ করা গুরুতর অপরাধ। যারা এ কাজ করবে, যারা সহযোগিতা করবে প্রত্যেকেই সমানভাবে অপরাধী। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে অনেকে উৎসাহিত হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়বে।’ র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, ‘এ ধরনের কথিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা অবহিত নই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহর, ইপিজেড, পতেঙ্গা, বন্দরসহ নিম্ন আয়ের লোকজন বসবাস করে এমন এলাকায় গড়ে উঠেছে কথিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ক্ষুদ্র ঋণ সমিতি, অনিবন্ধিত এনজিও এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে চালু রয়েছে কথিত এ ব্যাংকিং। চট্টগ্রাম নগরে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি রয়েছে ২ শতাধিক। তারা নগরের পোশাকশ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালক, সিএনজিচালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ টার্গেট করে কথিত ব্যাংকিং সিস্টেম চালু করেছে। কথিত এ ব্যাংকিং সিস্টেমে ১০ থেকে ১৫ শতাংশে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মাসিক সঞ্চয়, ডিপিএস ও এফডিআর সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত টাকা ২৫০ থেকে ৩০০ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদান করে। এ ঋণের টাকা আদায় করার জন্য রয়েছে তাদের নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। কেউ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ধরে এনে চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। বাসায় চালানো হয় হামলা। এমনকি প্রশাসন ব্যবহার করে দেওয়া হয় মামলাও। বছরের পর বছর ধরে কথিত এ ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু থাকলেও তা বন্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হালিশহরের একটি অনিবন্ধত এনজিও থেকে মাসে লাখে ১৫ হাজার টাকা হারে টাকা নিই। টাকা নেওয়ার সময় গ্যারান্টি হিসেবে খালি চেক ও স্ট্যাম্পে সই রাখে তারা। টাকা পরিশোধ করার পরও তারা সেই স্ট্যাম্প ও চেক দিয়ে মামলা করে দিয়েছে। ওই টাকা আদায়ের জন্য সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা-নির্যাতন চালাচ্ছে।’ বন্দর এলাকার আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারলেও হামলা চালায় তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের এ কাজে সহযোগিতা করে প্রশাসনের লোকজন।’

 

সর্বশেষ খবর