রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বাড়ছে। আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন প্রায় ৩০০ জন। ঢাকার দুই সিটির ২৭টি ওয়ার্ড বেশি ঝুঁকিপূর্ণ- এমন তথ্য উঠে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন ৩২ জন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৮টি সাইট ও ৪০টি ওয়ার্ডে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬২টি সাইট ও ৫৮টি ওয়ার্ডে জরিপ পরিচালনা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ৩ হাজার ১৫০টি হাউসহোল্ডে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত হয়েছে এডিস মশার মৌসুমকালীন জরিপ। এতে দেখা গেছে রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ কিউলেক্স মশা, বাকি ২২ দশমিক ১ শতাংশ মশা এডিস প্রজাতির। পানি জমা মেঝেতে মশার লার্ভা বেশি মিলেছে। এই হার ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ, প্লাস্টিকের বালতি ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং প্লাস্টিকের ড্রামে ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ, ফুলের টব ও টায়ারে মিলেছে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এডিস মশা ডেঙ্গু আর কিউলেক্স মশা ফাইলেরিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের জন্য দায়ী। এর আগে প্রাক-মৌসুম জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি কিউলেক্স মশা, বাকি ৫ শতাংশের বেশি মশা এডিস প্রজাতির। নির্মাণাধীন ভবনে ৪২ দশমিক ১১ শতাংশ এবং বহুতল ভবনে ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। জরিপ বলছে- ডিএনসিসির ১৩টি ও এবং ডিএসসিসির ১৪টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে সেগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টি পাত্রে এডিস মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। আর ১০-এর বেশি ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ডিএনসিসির ১৪টি ও ডিএসসিসির ২২টি ওয়ার্ডে। আর ১০-এর কম ডিএনসিসির ১২টি ও ডিএসসিসির ২১টি ওয়ার্ডে। ডিএনসিসিতে সর্বোচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর তা মিলেছে ১১, ১৪ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। এলাকাগুলো হলো- মিরপুর, কাফরুল ও গুলশান। আর ডিএসসিসিতে সর্বোচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স মিলেছে ৫৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এই এলাকায় রয়েছে আর কে মিশন রোড, গোপীবাগ, কমলাপুর, মতিঝিল। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই মৌসুমকালীন জরিপের তথ্য প্রকাশিত হবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। গতকাল ২৯৪ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকার হাসপাতালে ২৪৪ জন, ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ৫০ জন। গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন। চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ২০৯ জন, মারা গেছেন ১১ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৩৯০ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৮৩২ জন।
এডিস মশাকে অত্যন্ত অভিজাত বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এডিশ মশা বাসাবাড়িতে, আঙিনায়, ছাদবাগানে স্বচ্ছ পানিতে বংশবিস্তার করায় এডিস মশাকে অভিজাত বলে উল্লেখ করেন তিনি। মেয়র বলেন, ‘এই মশা বাসাবাড়িতে, আশপাশের আঙিনায়, ছাদবাগানে অব্যবহৃত কোনো টায়ার, মাটির পাত্র, রঙের কৌটা, ফুলের টব কিংবা ডাবের খোসায় জমে থাকা পানিতে প্রজনন ও বংশবিস্তার করে।’
গতকাল এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি পরিচালিত বিশেষ অভিযানে মেয়র এসব কথা বলেন। ঢাকা উত্তর সিটির ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের আজমপুরের ফরিদ মার্কেট, মুন্সি মার্কেট, আফজাল সরণি, বায়তুল ফালাহ মসজিদ রোড, জনাব আলী সড়ক এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে এই মশা নিধনে আমরা চেষ্টা করছি। নগরবাসী সচেতন হয়ে নিজ নিজ বাসাবাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রেখে, কোথাও পানি জমে থাকতে না দিয়ে এডিস মশাকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আগামী সাত দিনে বিশেষ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, রবিবার থেকে ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। ১০ অঞ্চলে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওই অভিযান পরিচালনা করবেন। বিশেষ এই অভিযানে যেখানেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাবে, সেখানেই জরিমানা করা হবে। কোনো ভবন বা স্থাপনার মালিক কিংবা প্রতিনিধি না থাকলে নিয়মিত মামলা দেওয়া হবে।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ডি এম শামীম, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসহাক মিয়া, নারী কাউন্সিলর হাছিনা বারী চৌধুরী ও জাকিয়া সুলতানা প্রমুখ।