রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পলাতক বার্মাইয়া সালেহর নিম্ন আদালতের নথি জাল

মাহবুব মমতাজী

পলাতক বার্মাইয়া সালেহর নিম্ন আদালতের নথি জাল

২০১৫ সালে ইয়াবা জব্দের একটি মামলায় পলাতক থেকেই নিম্ন আদালতের নথি জাল করেন প্রধান আসামি সালেহ আহমেদ ওরফে বার্মাইয়া সালেহ। তার বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার জাদীমুরা গ্রামে। জানা গেছে, তিনি মূলত রোহিঙ্গা নাগরিক। পরিবারের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি মিয়ানমার থেকে এ দেশে পালিয়ে এসেছিলেন।

রাজধানীর শাহবাগ থানায় ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট করা একটি মামলার সূত্র ধরে নিম্ন আদালতের নথি জাল করার ঘটনাটি জানা গেছে। মামলাটি করেন উচ্চ আদালতের তৎকালীন সহকারী রেজিস্ট্রার (ফৌজদারি-২) জাকির হোসেন পাটোয়ারী। মামলা নম্বর-২৩।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, প্রতারণা করে আদালতের আদেশ জাল-জালিয়াতি করে জাবেদা নকল প্রস্তুত করে তা খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ মামলায় এনামুল হক ও কাশেম আলী নামে আরও দুজনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে মামলাটির তদন্ত করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ। তিনি ৪ আগস্ট আদালতে মামলাটির চার্জশিট দিয়েছেন বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২০ জুন একটি প্রাইভেট কার থেকে ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে র‌্যাব। একই সঙ্গে ৭ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। ওই ঘটনায় পরদিন ফেনী মডেল থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ঘটনার সময় পালিয়ে যান বার্মাইয়া সালেহ। এ মামলায় জামিন নিতে ২০১৯ সালের ১৯ মে উচ্চ আদালতে আইনজীবী মাহাবুবা হকের মাধ্যমে আবেদন করেন তিনি। ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সালেহ  ফেনীতে ইয়াবা জব্দের সময় টেকনাফ থানার একটি মামলায় কারাগারে ছিলেন। অথচ সিআইডির তদন্তে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ কক্সবাজারের টেকনাফ থানার একটি খুনের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয় বারমাইয়া সালেহকে। উচ্চ আদালতে জামিন আবেদনে সালেহ উল্লেখ করেন, ফেনীতে ইয়াবা জব্দের সময় তিনি টেকনাফ থানার মামলায় কারাগারে আটক ছিলেন। এই ইয়াবার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এর বিরুদ্ধে তৎকালীন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ আদালতে সংশ্লিষ্ট টেকনাফ থানার মামলার আদেশের সার্টিফায়েড কপি দাখিল করেন এবং বলেন, ইয়াবা জব্দের দিন সালেহ কারাগারে ছিলেন না, তিনি ওই সময় জামিনে ছিলেন। উভয়ই পরস্পরবিরোধী সার্টিফায়েড কপি আদালতে উপস্থাপন করেন। আদালত বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। টেকনাফ থানার মামলায় সালেহ ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল জামিন নেন। অথচ তিনি উচ্চ আদালতে জামিন আবেদনের সময় টেকনাফ থানার মামলায় জামিনের দিন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই। অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২০ জুন ফেনীতে ইয়াবা জব্দের প্রায় ২৩ দিন পর তিনি কারাগার থেকে বের হয়েছেন। এ তথ্য দিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে জাবেদা নকল প্রস্তুত করে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। সিআইডির পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ এ প্রতিবেদককে জানান, সালেহ এখনো পলাতক। তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা কারবারের সঙ্গে যুক্ত। টেকনাফ থানার মামলায় জামিন নিয়ে পলাতক থেকেই ইয়াবা কারবার করছেন তিনি। তাদের ধারণা, সালেহ চট্টগ্রামের পাহাড়ি কোনো এলাকায় আত্মগোপনে আছেন।

শাহবাগ থানা সূত্র জানায়, সালেহ টেকনাফ মডেল থানার মামলার প্রদত্ত জামিন আদেশের জাল সার্টিফায়েড কপি তৈরি করে আদালতকে (হাই কোর্ট) বিভ্রান্ত করে জামিন নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ কারণে আসামি সালেহ, তদবিরকারক দিনাজপুরের বিরলের এনামুল হক এবং তদবিরকারককে কাগজপত্র সরবরাহকারী গুলশানের কাশেম আলীর বিরুদ্ধে জাল কাগজপত্র দাখিলের মাধ্যমে জামিন হাসিলের চেষ্টার জন্য মামলার নির্দেশ দেন হাই কোর্ট।

সিআইডির পরিদর্শক মাসুদ পারভেজের আরেকটি তদন্তে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পাবনার সুজানগর থানায় স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় জাহিদুল ইসলাম জাহিদের নামে একটি মামলা হয়। এ মামলায় তিনি ১৬৪ ধারায় আদালতে খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। অথচ উচ্চ আদালতে ওই জবানবন্দির কথা গোপন করে জামিন আবেদন করেন। জাল জাবেদা নকল তৈরি করে জামিন নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন উচ্চ আদালতের তৎকালীন সহকারী রেজিস্ট্রার (ফৌজদারি-২) জাকির হোসেন পাটোয়ারী। মামলা নম্বর-৩৪।

৪ আগস্ট আদালতে এ মামলারও চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ। সিআইডির তদন্তে এই জাল-জালিয়াতির ঘটনায় জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ, তদবিরকারক জমিদার হোসেন ওরফে জনি, পাবনা আদালতের আইনজীবীর সহকারী শহিদুল ইসলাম এবং তার ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই চারজনের মধ্যে জাহাঙ্গীর পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

 

 

সর্বশেষ খবর