সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অবহেলায় পনে তিনানী জমিদারবাড়ি

শেরপুর প্রতিনিধি

অবহেলায় পনে তিনানী জমিদারবাড়ি

ব্রিটিশ আমলের মোমেনশাহী জেলার মুক্তাগাছা জমিদারদের নিয়ন্ত্রণে শেরপুরের ষোলোআনা জমিদারির গুরুত্বপূর্ণ ও সুদর্শন বাড়ি ছিল পনে তিনানী জমিদারবাড়ি। জমিদাররা এখানে বসবাস করতেন এবং গড়ে তুলেছিলেন নয়ানাভিরাম নানা কারুকাজমণ্ডিত সুরম্য প্রাসাদ। এ প্রাসাদের আঙিনায় ছিল খাজনা নেওয়ার কামরা, বৈঠকখানা, দরবার, রন্ধনশালা, নৃত্যশালা আরও কত কী। কালের বিবর্তনে আজ গোটা জমিদারবাড়ির ইাতহাস-ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। অযত্ন-অবহেলায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ পনে তিনানী জমিদারবাড়ি। বর্তমানে শেরপুর অ্যাগ্রিকালচার ইনস্টিটিউটে এর অবস্থান।      

জমিদার সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী ও জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরীর মালিকানাধীন ছিল পনে তিনানী জমিদারবাড়ি। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে তিনানী জমিদারের বংশধর কিশোরী মোহন চৌধুরীর আমলে রংমহল, শীষমহলসহ নানা সৌধ নির্মাণ করা হয়। অপূর্ব কারুকার্যখচিত ভবনগুলোর মধ্যে উত্তর-দক্ষিণে প্রলম্বিত রংমহলের তিন অংশের প্রথম অংশ জমিদারদের খাস দরবার কক্ষ ও জলসা ঘর। দ্বিতীয় অংশে জমিদারদের খাস কামরা এবং তৃতীয় অংশে ছিল নায়েব-ম্যানেজারের কাচারি।

গ্রিক স্থাপত্যের অনুকরণে স্থাপত্যটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মূল ভবন রংমহলে রয়েছে সুপ্রশস্ত বেদি ও প্রবেশ দ্বারে রয়েছে অনেক ধাপ। প্রবেশদ্বারের দুই প্রান্তে রয়েছে অলংকৃত স্তম্ভ। স্তম্ভগুলোর নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত কারুকাজখচিত নকশা। ভবনটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কার্নিশেও রয়েছে নানা নকশা। বাড়ির চারপাশের স্তম্ভগুলো চতুষ্কোণবিশিষ্ট এবং বর্গাকৃতি কাঠামোর ব্যবহার লক্ষণীয়। রংমহলের প্রবেশ পথে দুটি দরজা। ডানদিকের দরজা বরাবর টানা লম্বা করিডোর। রংমহলের ডানদিক ঘেঁষে শান বাঁধানো পুকুরের জলে পুরো রংমহলটি জলসাঘর প্রতিবিম্বিত হয়। আছে শীষমহল নামে আরেকটি প্রাসাদ। এই শীষমহলে জমিদাররা স্ত্রী-পুত্র নিয়ে রাত কাটাতেন। শীষমহলটি এখন অস্তিত্ব সংকটে। ভূতপ্রেতের ভয়ে এখানে লোকসমাগম তেমন নেই। শীষমহল সংলগ্ন রান্নাশালা এখনো আছে, যেখানে এখন কীটপতঙ্গের বসবাস।

জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্যচর্চাও ছিল লক্ষণীয়। এসব চর্চার জন্য ‘জয় কিশোর’ নামে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। লাইব্রেরিতে ছিল ৫ সহস্রাধিক বই। অধিকাংশই ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্যবিষয়ক। জমিদারবাড়িটিকে কৃষি প্রশিক্ষণালয়ে রূপান্তরিত করা হলে লাইব্রেরি ভবনটি আশির দশকে ভেঙে সেখানে টিনশেডের শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়। অমূল্য বইগুলোর কোনো খোঁজ নেই।

জমিদারবাড়িটিকে কৃষি প্রশিক্ষণালয়ে রূপান্তরিত করা হলে রংমহলটি একদা কৃষি প্রশিক্ষণালয়ের প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহার হলেও ঝুঁকির জন্য ১৫ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। একদা দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যগুলোর প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করতে বারবার আবেদন করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সাধারণের দাবি, প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে জমিদারবাড়টি সংস্কার করা হোক। বাড়িটিকে অক্ষত রাখতে  প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এগিয়ে আসুক।  

কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. সাইফুল আজম খান বলেন, শেরপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ১৯৫৭ সালে জমিদার বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিদারের সম্পত্তি ও স্থাপনা এখনো অক্ষত অবস্থায় আছে। এটা শেরপুরের মানুষের জন্য গর্বের একটি ইতিহাস। এ স্থাপনাগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার জন্য এটিআই শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় সার্বিকভাবে উন্নয়ন করার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব।

সর্বশেষ খবর