বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
৪২ বছর আগের স্মৃতি

বাবা-মায়ের পরিচয় খুঁজছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী

রাহাত খান, বরিশাল

বাবা-মায়ের পরিচয় খুঁজছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী

মনোয়ার মুকুল

হতভাগা মনোয়ার মুকুল (৪৬)। বাবাকে হারিয়েছেন সেই ছোটবেলায়। পরে অসুস্থ মায়ের সঙ্গে ঢাকার তেজগাঁওয়ে মিশনারিজ অব চ্যারিটি হাসপাতালে যান মাত্র চার বছর বয়সে। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মায়ের। এরপর বড় হয়েছেন রাজশাহী উপ-শহরের এসওএস চিলড্রেনস ভিলেজে (অনাথ আশ্রম)। রাজশাহীতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হয়ে পাড়ি জমিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। সিডনিতে আইটি সেক্টরে চাকরি করেন তিনি। সেখানে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে ভালোই কাটছে দিনকাল। কিন্তু এতকিছুর পরও মানসিক প্রশান্তি নেই তার। আজ অবধি জন্মদাতা মা-বাবার পরিচয় জানতে পারেননি। সেই আক্ষেপ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে। গত ১৯ বছরে দুইবার বাংলাদেশে এসে শিশুকালের স্মৃতি ঢাকার তেজগাঁও মিশন, রাজশাহীর অনাথ আশ্রমে গিয়ে বাবা-মা সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা করেছেন। যেখানেই গেছেন নিরাশ হয়ে ফিরেছেন। এখনো বরিশালের কিছু অস্পস্ট স্মৃতি হাতড়ে রক্তের বন্ধন তথা শিকড়ের সন্ধান করে চলেছেন তিনি।

রাজশাহী উপ-শহরের এসওএস চিলড্রেনস ভিলেজের কেস হিস্টোরি অনুযায়ী, মনোয়ারের জন্ম ১৯৭৬ সালের ৩১ জুলাই, ১৯৮০ সালের ২৫ জুলাই এসওএস চিলড্রেনস ভিলেজে ভর্তি করা হয় তাকে। তবে কে তাকে সেখানে ভর্তি করিয়েছিল সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। তেজগাঁওয়ের মিশনারিজ অব চ্যারিটি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য সেখানে গিয়ে চার বছর বয়সী মনোয়ারের মা মিশন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন তার (মনোয়ারের) বাবা মারা গেছেন। মায়ের মৃত্যুর পর শিশুটির যাওয়ার (আশ্রয়) বা দেখাশোনা করার কেউ ছিল না। মায়ের কথা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেনি তাদের। তার কোনো ঠিকানা বা কন্ট্রাক্ট পয়েন্ট (যোগাযোগের স্থান) ছিল না চ্যারিটি হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের কাছে।

আশ্রমে প্রাথমিক স্তর, পরে ওই আশ্রমের ইয়্যুথ ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ থেকে রাজশাহীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, সরকারি রাজশাহী কলেজ এবং সবশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ২০০০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করেন। ২০০৩ সালে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। সিডনিতে তথ্য-প্রযুক্তি (আইটি) খাতে চাকরি করা মনোয়ার ২০০৭ সালে বিয়ে করেন এক বাংলাদেশি তরুণীকে।

সিডনি থেকে মুঠোফোনে মনোয়ার বলেন, রাজশাহী অনাথ আশ্রমে তার নাম মনোয়ার মুকুল রাখেন তাকে লালনকারী মা। পারিবারিক নাম ছিল বদিরুল কিংবা বদি। আশ্রমে বুদ্ধি বলে ডাকা হতো তাকে। মনোয়ার ইসলামী নাম হলেও তার বাবা-মা কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন তা অস্পষ্ট। তবে তার মা নাকফুল পরতেন।

মনোয়ারের ভাষায় তাদের বাসার কাছে একটি বড় রাইস মিল ছিল। সেখানে তার মা শ্রমিকের কাজ করতেন। মিলের সামনে ধান শুকানোর খোলা জায়গা এবং মিলের গা ঘেঁষে ছিল ফসলের খেত। বাসার কাছে একটা বড় হাসপাতাল ছিল। হাসপাতালের কাছেই ছিল একটি ওভারহেড পানির ট্যাংক। ট্যাংকের কাছে পুকুরে মাছ ধরতেন স্থানীয়রা। বাড়ির পাশে পূজাও হতো। একবার মেলায় গিয়েছিলেন। রাত হয়ে যাওয়ায় মা তাকে নিয়ে এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। তার কাছাকাছি দূরত্বে একটি সিনেমা হল ছিল বলে ৪২ বছর আগের স্মৃতি হাতরে বলেন তিনি। বরিশাল নগরীর বেলতলা এলাকার আকিব ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী মো. শাহজাহান জানান, ১৯৮০ সালে বরিশালের একমাত্র রাইস মিল ছিল আমানতগঞ্জ মহাবাজ। অটোরাইস মিলের মালিক ছিলেন মোহাম্মদ সিকদার।

মোহাম্মদ সিকদারের ছেলে বাদল সিকদার বলেন, ওই সময় যারা মিলটি চালাতেন তাদের কেউ বেঁচে নেই। তবে মিলটি ধান খেতের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছিল। মিলের পেছনে একটি খাল রয়েছে। বর্তমানে মিলের জায়গায় টিচার্স ট্রেনিং কলেজ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর