সাইফুল ইসলাম। বয়স ১৬ বছর। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। বাবা মোহাম্মদ আলম। বসবাস কলাতলি বিচ এলাকার পাহাড়ি খাসজমিতে। চার ভাই দুই বোনকে নিয়ে বাবা মোহাম্মদ আলমের টানাটানির সংসার। তিনি নিজেও দিনমজুরের কাজ করেন।
সাবিনা ইয়াসমিন সোনালী (২২)। পড়াশোনা করছেন স্থানীয় একটি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে। তার বাবাও মাছের ঘেরে কাজ করেন। বাবার একার আয়ে সংসারে অভাব লেগেই আছে। পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন কক্সবাজার শহরের সৈকতপাড়া এলাকায়। সোনালী নিজেও পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ খুঁজছিলেন। এ তো গেল মাত্র দুজন। এদের মতোই ভয়ংকর পরিবেশের সংস্পর্শে সময় পার করছেন কক্সবাজারের অসংখ্য যুবক-যুবতী। তারা অপরাধে না জড়ালেও আশপাশের বন্ধু-বান্ধব এরই মধ্যে অন্ধকার জগতে পা বাড়িয়েছে। অনেকেরই ঠিকানা হয়েছে কারাগার। তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবারসহ সমাজের সচেতন মহল। উদ্বিগ্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও। কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বিপজ্জনক পরিবেশে বসবাস করা এমন ৩৬ জনকে বেছে নিয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব। নানা মোটিভেশনের পাশাপাশি তাদের ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন ট্রেডে দিয়েছে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ। বিভিন্ন সংস্থায় যোগ্যতা অনুযায়ী কাজেরও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে সংস্থাটি। পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন র্যাবের কর্মকর্তারা। র্যাব বলছে, ৩৬ জনের একজন সাইফুলকে ফটোগ্রাফির ওপর প্রশিক্ষণ শেষে দেওয়া হয়েছে ডিজিটাল ক্যামেরা। তিনি এখন বিভিন্ন ওয়েডিং প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছবি উঠাতে পারবেন। তার আয়ের অংশ যোগ হবে অভাবের সংসারে। সাবিনা ইয়াসমিন নিয়েছেন হাউস কিপিংয়ের ওপর বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ। হাউস কিপিংয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পাঁচজন। এরই মধ্যে সাবিনা সায়মন বিচ রিসোর্ট থেকে চাকরির অফার পেয়েছেন। র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কক্সবাজার দিয়ে আমরা এবার শুরু করলাম অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আগেই যুবক-যুবতীদের জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ। আমাদের প্রত্যাশা অন্যান্য সংস্থাও এমন মানবিক কর্মকান্ডে এগিয়ে আসবে। মাদক প্রতিরোধে র্যাব কিছু গঠনমূলক, সৃজনশীল ও গবেষণামূলক কাজ করছে। যেসব জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। তবে এখনো তাদের খোঁজখবর নেওয়া হয়। জানা গেছে, সেলাই, ড্রাইভিং, সার্ফিং, গৃহব্যবস্থাপনা বা হাউস কিপিং, ট্যুরিস্ট গাইড ও ফটোগ্রাফি- এই ছয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৩৬ জনকে। এদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ১১ জন নারী। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমন উদ্যোগকে অনেকেই অভিবাদন জানিয়েছেন। কক্সবাজার লিংক রোড এলাকার বাসিন্দা সাদেক হোসেন। বাবা আবুল কাশেম। পেশায় রাজমিস্ত্রি। সাদেক নিয়েছেন গাড়ি চালনার প্রশিক্ষণ। তার মতো এই ট্রেডে নিয়েছেন পাঁচজন। বাপ্পু দে। বাবা খগেন্দ্র লাল দে। পরিবারের সঙ্গে বাপ্পু বসবাস করেন কক্সবাজারের লিংক রোড এলাকায়। বাপ্পু দেও একটি ওয়েল্ডিং কারখানায় কাজ করতেন। তার সহকর্মীরাও নানা অপরাধে জড়িয়েছে। মোহাম্মদ জাহিদ (১৮)। বাবা শামসুদ্দিন। বসবাস করেন কলাতলী চন্দ্রিকা এলাকায়। পর্যটন এলাকায় সার্ফিংয়ের চাহিদা বাড়ায় এই ট্রেডে তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে র্যাব।
গতকাল প্রশিক্ষণ শেষে সনদ নেওয়ার পর এ প্রতিবেদকের সঙ্গে অনেকেরই কথা হয়। তারা র্যাবের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। মোহাম্মদ জাহিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি কখনো ভাবিনি র্যাব এমন উদ্যোগ নিবে। সার্ফিংয়ের খুব চাহিদা কক্সবাজারে। আশা করছি এবার সংসারে অবদান রাখতে পারব। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তাদের সবারই বিপথে চলে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা ছিল। তাদের সার্কেলের বন্ধুদের কেউ কেউ বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে। কেউ কেউ জামিনে বের হয়ে আবার আগের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।