রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
ওয়ালীউল্লাহর সংগ্রহশালা

১৩৫ দেশের মুদ্রা ও দেশি-বিদেশি দেড় হাজার ডাকটিকিট

রাকিব হোসেন, ইবি প্রতিনিধি

১৩৫ দেশের মুদ্রা ও দেশি-বিদেশি দেড় হাজার ডাকটিকিট

প্রত্যেক মানুষের ভিন্ন ভিন্ন শখ থাকে। শখের কাজ করতে সবাই ভালোবাসেন। যেমন কেউ খেলা করা, বাগান করা, গান করা, বই পড়া আবার কেউ ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। এস এ এইচ ওয়ালীউল্লাহর শখ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও ডাকটিকিট সংগ্রহ করা। তিনি ১৫ বছর ধরে মুদ্রা ও ডাকটিকিটের এক দারুণ সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তার সংগ্রহশালায় মোট ১৩৫টি দেশের মুদ্রা এবং বিভিন্ন দেশের ১ হাজার ৫০০ ডাকটিকিট রয়েছে। ওয়ালীউল্লাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্ট্যাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

তার সংগ্রহশালায় রয়েছে, ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন মুদ্রা গান্ধার জনপদের মুদ্রা, প্রাচীন বাংলার ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা, মগধ জনপদের মুদ্রা এবং মৌর্য সম্রাজ্যের মুদ্রা। এ ছাড়া রয়েছে বাংলায় মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত কড়ি, কিদারা রাজ্যের রাজা বিনয়াদিত্যের সোনার মোহরসহ ইন্দো-গ্রিক, পাঞ্চাল, শুঙ্গ, সাতবাহন, কুষাণ, পশ্চিম ক্ষত্রপা, গুপ্ত, নাগ, হরিকেল এবং মৈত্রক রাজবংশসহ ভারতীয়, ব্রিটিশ ভারতীয়সহ বিভিন্ন সালের বেশ কিছু মুদ্রা, ট্রাভানকোর, বারোদা, মেওয়ার, হায়দ্রাবাদ, টঙ্ক, কুচ, শিবগঙ্গা, প্রতাপগড় সমসাময়িক কয়েকটি প্রিন্সলি স্টেটের মুদ্রা। রয়েছে ইতিহাসখ্যাত বীর মহিশুরের টিপু সুলতানের মুদ্রাও। প্রাচীন মুদ্রাসহ সবমিলিয়ে ১৩৫টি দেশের প্রায় দেড় সহস্রাধিক দেশি-বিদেশি কয়েন, কাগজি নোট এবং স্মারক নোট আছে তার ছোট্ট শখের রাজ্যে। ওয়ালীউল্লাহ বলেন, যখন আমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন ভাইয়ার থেকে পাওয়া ছয়টি অস্ট্রেলিয়ান কয়েন নিয়ে যাত্রা শুরু সংগ্রহের কাজ। মুদ্রা সংগ্রহের আগে থেকেই বিদেশি মুদ্রার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। আর এই আগ্রহের মূল কারণ ছিল নানা দেশের মুদ্রায় অঙ্কিত নানারকম ছবি। এসব মুদ্রা এবং মুদ্রায় আঁকা ছবি যত দেখতাম মুদ্রার প্রতি তত আকৃষ্ট হতাম।

এই ভালোলাগা এবং মুদ্রায় অঙ্কিত ছবিসমূহের প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকে আমাকে মুদ্রা সংগ্রহ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তিনি বলেন, কয়েন দিয়ে আমার সংগ্রহের শুরু হলেও কাগজি নোটও সংগ্রহ শুরু করি। নবম শ্রেণির শুরুতে আমার খালার বাড়ি থেকে ব্রিটিশ ভারতের কিছু রুপা ও তামার মুদ্রা প্রাপ্তি আমার সংগ্রহে সূচনা করে নতুন অধ্যায়ের। ব্রিটিশ ভারতের মুদ্রাগুলো হাতে নিলেই অন্যরকম একটা শিহরণ অনুভব করতাম। মনে হতো দেড় শ বছরের জলজ্যান্ত ইতিহাস আমার হাতের মুঠোয়। সংগ্রহশালা কীভাবে সমৃদ্ধ করেছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে ওয়ালীউল্লাহ বলেন, মুদ্রাগুলো ঢাকার তাঁতীবাজারের স্বর্ণের দোকান, অন্যান্য স্বর্ণকারের দোকান, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নিলাম, বন্ধু-বান্ধবসহ কাছের মানুষদের কাছ থেকে উপহার প্রাপ্তি, দেশ-বিদেশের অন্যান্য সংগ্রাহকের সঙ্গে বিনিময় এবং ক্রয়ের মাধ্যমেই মূলত সংগ্রহ করেছি। সংগ্রহ করেছি ভারতীয় উপমহাদেশের সবচাইতে প্রাচীন মুদ্রা গান্ধার জনপদের মুদ্রা। মুদ্রাগুলো জারি করা হয়েছিল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দের দিকে। আগামীতে বাঙলার সুলতানি মুদ্রার দিকে নজর দিতে চাচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতায় বাঙলার একজন স্বাধীন সুলতান সিকান্দার শাহের রৌপ্য টঙ্কা সংগ্রহ করেছি। এ সংগ্রহের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া রাস্তায় ডাকটিকিট লাগানো পরিত্যক্ত চিঠি দেখে ওয়ালীউল্লাহ ডাকটিকিট সংগ্রহ কাজ শুরু করেন। রাস্তায় ডাকটিকিট লাগানো খাম রাস্তা থেকে কুড়িয়ে বাসায় এনে সংগ্রহ শুরু করেন। প্রতিদিনই কমবেশি খাম বাসায় এনে একই পদ্ধতিতে ডাকটিকিট তুলে নিজের কাছে সংরক্ষণ করতেন। পরবর্তীতে বন্ধু, বড় ভাইসহ শুভাকাক্সক্ষীদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৫০০ ডাকটিকিট ও পোস্টকার্ড সংগ্রহ করেছেন তিনি। যা প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দেয়। ওয়ালীউল্লাহ ভবিষ্যতে নিজ জেলা মাগুরাতেই মুদ্রা এবং ডাকটিকিট দিয়ে আর্কাইভ সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে চান। তিনি বলেন, এসব মুদ্রা এবং ডাকটিকিট দিয়ে আমার জেলায় একটা আর্কাইভ সংগ্রহশালা করার ইচ্ছে আছে। যেটা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মুদ্রাগুলো দেখে আমাদের নতুন প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।

 

 

সর্বশেষ খবর