শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

অগ্রগতি নেই সেই প্রকল্পগুলোর

মেয়র আনিসুল হকের ৪২টি প্রকল্পের পরিকল্পনা ছিল

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাজধানীর ব্যস্ততম কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার বিকেন্দ্রীকরণ করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। কাঁচাবাজার স্থানান্তর করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, মহাখালী ও আমিনবাজারে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। এই তিনটি জায়গায় এরই মধ্যে কাঁচাবাজার নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু স্থানান্তর হয়নি কারওয়ান বাজার। আলোচনা-পর্যালোচনাতেই থেমে আছে এই উদ্যোগ।

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোম্পানি ভিত্তিক বাস, বনানী ফুড কোর্ট, গাবতলীর অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করা ৫২ একর জায়গা নিয়ে বিস্তর পরিকল্পনা ছিল আনিসুল হকের। তার মৃত্যুর পাঁচ বছরেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই এসব প্রকল্পে। আনিসুল হকের মৃত্যুর পরে পরিকল্পনা বিভাগ থেকে জানা গিয়েছিল ৪২টি প্রকল্পের কথা। নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি নগরকে বাসযোগ্য করতে বিভিন্ন আঙ্গিকের পরিকল্পনা করতেন। কিন্তু ১০টি ইউটার্ন প্রকল্প ছাড়া অধিকাংশ প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয়নি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক চেয়েছিলেন বনানীর মতো অভিজাত জায়গায় দামি খাবারের দোকানের পাশাপাশি একটা ফুড কোর্ট থাকবে। যেখানে কিছুটা সস্তায়, স্বস্তি নিয়ে খাবে সাধারণ মানুষও। সিটি করপোরেশনের যে জায়গায় ওই ফুড কোর্টের কথা ভেবেছিলেন তিনি, সেখানে ২০ তলা পার্কিং ভবন করার চিন্তা করছে করপোরেশনের বর্তমান কর্তৃপক্ষ। আনিসুল হক চেয়েছিলেন, রাজধানী শহরের কোটি মানুষের গণপরিবহনের সংকট মেটাতে চার হাজার বাসের একটা সার্ভিস চালু করতে। সেই ভাবনায় অনেক দূর এগিয়েছিলেনও তিনি। কিন্তু এত বছরেও সেই কোম্পানি ভিত্তিক বাস প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। একটি রুটে বেশ কিছুদিন ধরে কোম্পানি ভিত্তিক বাসের পাইলট প্রকল্প চললেও রাজধানীজুড়ে চলছে গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলার চিত্র। স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করেও পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন হয়নি এ প্রকল্প।

মেয়র হওয়ার পর রাজধানীবাসীর অভিযোগ সরাসরি শুনতে ‘নগর’ নামে একটি অ্যানড্রয়েড অ্যাপ চালু করেছিলেন আনিসুল হক। এটি সাড়া ফেলে তরুণদের মধ্যে। সেটি এখন বন্ধ। বর্তমান মেয়র ‘সবার ঢাকা’ নামে আরেকটি অ্যাপ চালু করে মানুষের অভিযোগ শুনছেন। সাধারণ মানুষের জন্য ১০০টি আধুনিক গণশৌচাগার নির্মাণ  করতে চেয়েছিলেন আনিসুল হক। ডিএনসিসি সূত্র বলছে, উত্তর সিটি করপোরেশন ৬৩টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে। তবে বিভিন্ন এনজিওর উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে আরও ১০০টি। ওয়াটারএইডের এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকার সড়কপথে প্রতিদিন চলাচল করা ৫০ লাখ মানুষের জন্য পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা বর্তমানে মাত্র ৪৯ এবং সেগুলোর বেশির ভাগই ব্যবহার অনুপযোগী বা অপরিচ্ছন্ন। ঘণবসতির শহর ঢাকায় সবুজের সমারোহ ফিরিয়ে আনতে পাঁচ লাখ গাছের চারা বিতরণের কর্মসূচি শুরু করে ডিএনসিসি। ২০১৬ সালের মে মাসে উত্তরায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সবুজ ঢাকা’ নামের এ প্রকল্প উদ্বোধন করেন আনিসুল হক। পরের তিন বছরে ৫ লাখ গাছ রোপণের পরিকল্পনা ছিল ডিএনসিসির। প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র আনিসুল হক আশা প্রকাশ করেছিলেন, ২০১৮ সালের মধ্যেই রোপণের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের অংশ হিসেবে উত্তরা এলাকায় ২৯ হাজার গাছের চারা লাগানো হয়। সবুজ ঢাকা প্রকল্পটিতে সিটি করপোরেশনে কোনো বরাদ্দ ছিল না। মেয়র তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজটি চালিয়ে আসছিলেন। তার মৃত্যুর পরেও এ প্রকল্পে আর কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। বহু বছর ধরে সাতরাস্তা থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়ক ও আশপাশের সড়কগুলোতে অবৈধভাবে ট্রাক রাখা হতো। অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে আধা কিলোমিটার এ সড়ক পার হতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যেত। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মেয়র আনিসুল হক সড়কটি দখলমুক্ত করতে গিয়ে ট্রাক শ্রমিকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। পরে সড়কটি দখলমুক্ত করা হয়। সড়কটি দখলমুক্ত হওয়ায় এর সুফলও পেতে শুরু করে নগরবাসী। আনিসুল হকের প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে সাতরাস্তা থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কটিতে একটি-দুটি করে ট্রাক ফিরে আসতে শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার দেখা যায়, ভূমি ও জরিপ অধিদফতরের সামনের সড়কজুড়ে রাখা হয়েছে ট্রাক। সাতরাস্তা মোড়ে এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানির উল্টো দিকে, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের সামনে এবং রেলক্রসিংয়ের আগে সড়কের পাশে এক সারি করে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল ছাড়াও ২০১৫ সালের ডিসেম্বর ও ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে আনিসুল হকের উদ্যোগে ডিএনসিসির আরও আটটি এলাকা পার্কিংমুক্ত ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে গাবতলী, কল্যাণপুর, আমিনবাজার, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড অন্যতম। এসব এলাকাতে অবৈধ পার্কিং ফিরে আসতে শুরু করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের নেওয়া ১০ ইউটার্ন প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করেছি। কোম্পানি ভিত্তিক বাস প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পাইলটিং শুরু হয়েছে। কল্যাণপুর ইকো পার্কের নকশা প্রণয়ন সম্পন্ন হয়েছে। কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার সরানো প্রক্রিয়াধীন আছে। নগরকে সুন্দর করতে নেওয়া প্রকল্পগুলো আমরা এগিয়ে নিচ্ছি। এগুলোতো এক দিনে সম্পন্ন করার মতো বিষয় নয়, প্রতিটি কাজই চলমান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর