শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্থ পাচার রোধে বিএফআইইউ ও বাজুস যৌথভাবে কাজ করবে

------ সায়েম সোবহান আনভীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থ পাচার রোধে বিএফআইইউ ও বাজুস যৌথভাবে কাজ করবে

চোরাচালান ও অর্থ পাচার ঠেকাতে করণীয় নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠকে অংশ নেন বাজুস ও বিএফআইইউ প্রতিনিধিরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর বলেছেন, অর্থ পাচার ও সোনা চোরাচালান রোধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও বাজুস যৌথভাবে কাজ করবে। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে সারা দেশে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতেও দুই সংস্থা একযোগে কাজ করবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বিএফআইইউর সঙ্গে বাজুসের এক সভায় এ কথা বলেন তিনি। বৈঠকে বিএফআইইউর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়। সোনা চোরাচালান প্রতিরোধে যৌথ কার্যক্রম নিয়ে এ সভা হয়। বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাস সভায় সভাপতিত্ব করেন। বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সভায় অংশ নেয়।

এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন অ্যান্টি স্মাগলিং অ্যান্ড ল এনফোর্সমেন্টের চেয়ারম্যান এনামুল হক খান দোলন ও সাধারণ  সম্পাদক দিলিপ কুমার আগারওয়ালা, বিএফআইইউর উপপ্রধান ও পরিচালকসহ ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, বাজুসের তালিকায় ৪০ হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন। আমরা বিএফআইইউকে এসব ডাটাবেজের তথ্য দেব। তারা তথ্য পর্যবেক্ষণ করবেন। তিনি আরও বলেন, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চোরাচালান বন্ধে আইন থাকলেও এর প্রয়োগ নেই। আইন করে কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত নন। যারা চোরাচালান করে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হলে আইনের প্রয়োগ লাগবে। আমরা দেখতে পাই অবৈধ সোনা ধরা পড়ছে। যারা ধরা পড়ে কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে ফের একই অপরাধ করে। তাই রুমে বসে কথা বলে কোনো কাজ হবে না। চোরাচালান ঠেকাতে হলে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বৈঠকে বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে বিএফআইইউর ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে। ভবিষ্যতে সারা দেশে বাজুসের সভা-সেমিনার কিংবা সচেতনতা তৈরি কার্যক্রমে বিএফআইইউ অংশ নেবে। অর্থ পাচার রোধে বাজুসের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা কাজ করব। বৈঠক শেষে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন অ্যান্টি স্মাগলিং অ্যান্ড ল এনফোর্সমেন্টের চেয়ারম্যান এনামুল হক খান দোলন সাংবাদিকদের বলেন, বিএফআইইউ ও বাজুস একসঙ্গে কাজ করতে চায় এজন্য এ বৈঠক হয়েছে। এ সময় সোনা চোরাচালান বন্ধ ও ব্যবসার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনে একসঙ্গে কাজ করব বলে একমত হয়েছি। সোনা চোরাচালান বন্ধে আমরা আমাদের সদস্যদের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করব। বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগারওয়ালা বলেন, এখন পর্যন্ত বাজুসের কোনো সদস্য সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ হয়নি। আগামীতে কোনো সদস্য চোরাচালান করছে এমন তথ্য পাওয়া গেলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, অবৈধভাবে আসা বা চোরাচালানের সময় জব্দ সোনা নিলামে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ দাবি আমাদের অনেক আগে থেকেই ছিল। আমরা চাই ডলার সংকটের এ সময়ে জব্দ সোনার বার নিলামে বিক্রি করা হোক। এসব ‘র মেটেরিয়াল’ আমাদের দেশের জন্য ভালো হবে, কারণ আমাদের এখানে বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারির মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আমরা চাই অবৈধভাবে সোনার বার আনা বন্ধ হোক। তাহলে চোরাচালানের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অনেক কমে যাবে। সভায় লিখিতভাবে বাজুসের পক্ষ থেকে সোনা চোরাচালান প্রতিরোধে যৌথ মনিটরিং সেল গঠনসহ সাতটি প্রস্তাব দিয়েছেন সোনা ব্যবসায়ীরা। বাজুসের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. সোনা চোরাচালান, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাজুসের সমন্বয়ে যৌথ মনিটরিং সেল গঠন করা। ২. চোরাকারবারিরা যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করা। ৩. সোনা চোরাচালান প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের জোরালো অভিযান নিশ্চিত করা। ৪. চোরাচালান প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে উদ্ধার সোনার মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ সংস্থাগুলোর সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া। ৫. ব্যাগেজ রুলের আওতায় সোনার বার ও অলংকার আনার সুবিধা অপব্যবহারের কারণে ডলার সংকট, চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিংয়ে কী প্রভাব পড়ছে, তা নিরূপণে বাজুসকে যুক্ত করে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনা করা। ৬. অবৈধ উপায়ে কোনো চোরাকারবারি যেন সোনার বার বা অলংকার দেশে আনতে এবং বিদেশে পাচার করতে না পারে সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া। ৭. জল, স্থল ও আকাশ পথ ব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে কেউ যেন সোনার বার বা অলংকার আনতে না পারে এজন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া।

সর্বশেষ খবর