বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চিঠি চালাচালি ছাড়া কাজ নেই

মশক নিবারণী দফতরে এক যুগ কোনো নিয়োগ নেই, জনবল সব সিটি করপোরেশনে কাজ করে

হাসান ইমন

চিঠি চালাচালি ছাড়া কাজ নেই

মশক নিবারণী দফতরের জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৩৯৬ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ২৪৫ জন। এর মধ্যে ২৩২ জন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সংযুক্ত। অবশিষ্ট মাত্র ১৩ জন দিয়েই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এই দফতর। জনবল আবার দিনকে দিন কমছে। গত এক যুগে নতুন কোনো নিয়োগ হয়নি। এখন চিঠিপত্র চালাচালি ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।

দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু প্রকট আকার ধারণ করলেও একরকম বেকার সময় পার করছে সরকারের মশক নিবারণী দফতর। যেখানে ডেঙ্গু নিয়ে সারা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন এবং প্রতিদিন শত শত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, সেখানে রাজধানীর লালবাগে সংস্থাটির কার্যালয়ে অনেকটাই সুনসান নীরবতা। প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাজকর্ম দফতরের অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ। মশক নিধন নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা বা কার্যক্রম নেই। তবে সংস্থাটির বেশির ভাগ কর্মচারী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের অধীনে কাজ করছেন। বিভিন্ন সময় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভয়াবহতা ছড়ালেও এ দফতর কোনো ভূমিকা না রেখে বরাবরই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এমনকি ম্যালেরিয়া নির্মূল ও কিউলিক্স মশা দমনেও কোনো ভূমিকা নেই তাদের। অথচ প্রায় আড়াই শ কর্মচারী রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বিপরীত পাশে রাস্তার ওপর বড় একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা ‘মশক নিবারণী দফতর’। লোহার গেট দিয়ে ঢুকে দেখা যায়, ভিতরে সুনসান নীরবতা। নিচতলায় ডান পাশের রুমে মশার ওষুধের রিজার্ভ রুম থাকলেও কোনো ড্রাম দেখা যায়নি। আর দোতলায় ডানে-বামে সম্মেলন, প্রধানসহ ১০টি কক্ষ। এর মধ্যে প্রশাসনিক, ভান্ডাররক্ষক, কোষাধ্যক্ষ এবং হিসাবরক্ষককের কক্ষটি খোলা দেখা গেল। আর মূল ভবনের সামনে পরিত্যক্ত একটি টিনশেড ঘর রয়েছে। যেখানে কর্মচারীদের অনেকেই থাকেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছুদিন আগেও সিটি করপোরেশনের মশার ওষুধ রাখা হতো এখানে। কিন্তু গত বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের ওষুধ নিয়ে গেছে।

এক কর্মকর্তা জানান, ১৯৪৮ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় মশক নিবারণী দফতর। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯৭৮ সালে ৩৩৮ জন কর্মচারীকে আত্তীকরণ করা হয় এখানে। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ৩৯৬টি পদ সৃজন করা হয়। এর কিছুদিন পর মশক নিবারণী দফতরের সব কর্মচারীকে সিটি করপোরেশনের অধীনে দেওয়া হয়। তবে এসব কর্মচারীর বেতন-ভাতা দেয় মশক নিবারণী দফতর। বর্তমানে সংস্থাটির ২৪৫ জনবল রয়েছে, যার মধ্যে ডিএনসিসিতে ১২১ এবং ডিএসসিসিতে ১১১ জন কাজ করছেন। একজন দফতর প্রধানসহ বাকি ১৩ প্রশাসনিক ও দাফতরিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। মাস দুয়েক আগে ১৫ জন মশক সুপারভাইজারকে মশক নিবারণী দফতরে ফেরত পাঠিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তাদের এখন কাজ নেই। বসে বসে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, মশক নিবারণী দফতরে সর্বশেষ ২০১০ সালে জনবল নিয়োগ হয়েছিল। এর আগে ১৯৮৫, ’৮৭, ’৯৫ সালে নিয়োগ হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালের পর আর নিয়োগ হয়নি। এখন দিনকে দিন জনবল কমছে। অফিসের কেউ চলে গেলে অন্য স্থান থেকে নিয়ে এসে এখানে বসানো হয়। কী করার আছে, অফিস তো চালাতে হবে।

এই কর্মকর্তা আরও জানান, স্বাধীনতার আগে ঢাকায় ম্যালেরিয়ার বিস্তার ঘটেছিল। তখন ম্যালেরিয়া মোকাবিলা করতে ঢাকায় মশা মারার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। তখন সংস্থাটি বেশ জমজমাট ছিল। অনেক লোক কাজ করতেন। মশা নিয়ন্ত্রণে বেশ ভালো ভূমিকা পালন করত।

মশক নিবারণী দফতরের প্রধান হিসেবে আছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব। তিনি এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। এখানে খুব একটা আসেনও না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা ছাড়া এখানে তেমন কাজও নেই তার। অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও একরকম অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে জানাতে চাইলে মশক নিবারণী দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে যতটুকু জানতে পেরেছি এখানে মশক নিবারণী সেল গঠন হবে। এটা নিয়ে বিভিন্ন সময় সভা হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

সর্বশেষ খবর