বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বাটিকের গ্রামে রঙের মেলা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

বাটিকের গ্রামে রঙের মেলা

কমলপুর। কুমিল্লা সদর উপজেলার একটি ছোট্ট গ্রাম। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে বাটিকের (ডিজাইন) থ্রি-পিস, লুঙ্গি, শাড়ি, বেডশিট তৈরি করা হচ্ছে। কাপড়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন রঙের ডিজাইন। ১০টি কারখানায় এ কাজে জড়িত সহস্রাধিক শ্রমিক। তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নারী। শ্রমিকদের আয়ে পরিবারগুলোতে লেগেছে সচ্ছলতার রং। কমলপুরের পাশের আনন্দপুর, গলিয়ারা, বিবির বাজার ও গোমতীর ওপারে ইটাল্লা গ্রামেও কয়েকটি কারখানা গড়ে উঠেছে।

গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কেউ কাপড়ে ব্লক দিচ্ছেন, কেউ রঙের পানিতে কাপড় ভেজাচ্ছেন। কেউ কাপড় শুকাচ্ছেন। গ্রামের পথে পথে নানা রঙের প্রদর্শনী। লাল, সবুজ, হলুদ বিভিন্ন রঙের কাপড় শুকানো হচ্ছে। যেন রংধনুর সাতরঙের মেলা গ্রামজুড়ে। শ্রমিক আবদুর রহমান ও মো. লিটন বলেন, গ্রামের কারখানায় কাজ হওয়ায় বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে এসে কাজ করছেন। এখানে বাটিক কাপড়ের কারখানায় কাজ করে তারা পরিবার চালাচ্ছেন।

কারিগর অজিত দাস ৩০ বছর ধরে কাজ করেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামে। তিনি বলেন, আগে চান্দিনায় কাজ করতেন। এখন কমলপুরে কাজ করেন। কমলপুরে আগে খাদির কাপড়ে রং করা হতো। পরে তা বাটিক ও তাঁতে করা হচ্ছে। এখানের তাঁতের শাড়ি দৃষ্টিনন্দন ও সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি হয়।

কুমিল্লা বাটিক কালেকশনের মালিক মো. খোকন ও হাসি বাটিকের মালিক মো. আবু হানিফ বলেন, আমরা বংশপরম্পরায় এ ব্যবসা করছি। বাইরে থেকে কাপড় কিনে তার ওপর ডিজাইন ও রং করে বিক্রি করি। কুমিল্লার বাটিক লুঙ্গি, শাড়ি, থ্রি-পিসের সুনাম দেশজোড়া। কাপড়ের মান ভালো ও রং পাকা। তাই শত বছর ধরে এই ব্যবসা টিকে আছে। নামকরা বিভিন্ন কোম্পানি এখানে অর্ডার দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। এ কাপড় কুমিল্লা নগরী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নরসিংদীতে বিক্রি হয়। মধ্যপ্রাচ্যেও যাচ্ছে কমলপুরের কাপড়। তারা আরও বলেন, গ্যাস নেই। লাকড়ির খরচ বেশি। গ্যাস পেলে সুবিধা হতো। আরও বেশি শ্রমিকের কাজের সুযোগ হতো। প্রশিক্ষণ পেলে শ্রমিকরা আরও দক্ষ হতো। মালিকরাও প্রচারের কৌশল জেনে এগিয়ে যেতে পারতেন। কুমিল্লা নগরীর খাদি কাপড়ের ব্যবসায়ী খাদিঘরের প্রদীপ কুমার রাহা বলেন, কুমিল্লার খাদি ব্যবসায় সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন কমলপুরের ব্যবসায়ীরা। দিন দিন তাদের ব্যবসা প্রসার লাভ করছে। গ্যাস সংযোগসহ প্রশিক্ষণের সুযোগ পেলে তারা আরও এগিয়ে যেতে পারবেন। স্থানীয় জগন্নাথপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বলেন, কমলপুর গ্রামে বেকারত্বের সংখ্যা কম। কমলপুরের বাটিক শিল্প কুমিল্লার ঐতিহ্য। এ শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করতে বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। গ্রামটি পরিদর্শন করব। ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তাদের এগিয়ে নিতে আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব।

সর্বশেষ খবর