রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পণ্য রপ্তানির বড় সম্ভাবনা আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পণ্য রপ্তানির বড় সম্ভাবনা আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলে

বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশি দর্শকদের আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলকে সমর্থনের বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত বিষয়। এ সমর্থনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি আর্জেন্টাইনদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। প্রতিদান দিতে দেশটির সরকারও পিছিয়ে নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি দিয়ে ঢাকায় দূতাবাস খোলার ঘোষণাও দিয়েছেন। ফুটবল ডিপ্লোমেসির এই সুযোগ এখন বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। পরিকল্পনা রয়েছে, আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলসহ ল্যাটিন আমেরিকার মারকোসারভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। ইপিবি খোঁজ নিয়ে জেনেছে, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রায় ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। দূরের দেশ বলে পণ্য পরিবহনে লজিস্টিক কস্ট যেমন : জাহাজ ভাড়াও বেশি। তবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে পিটিএ (অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি) বা এফটিএ (মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি)-এর মাধ্যমে এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করছে ইপিবি। কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রাজিল থেকে চিনি, ভোজ্য তেল আমদানি করে বাংলাদেশে লাভজনক ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হলে, সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশি পণ্য সেখানে রপ্তানি করেও লাভবান হওয়া সম্ভব। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বাংলাদেশি পণ্যের বিশাল বাজার হতে পারে ল্যাটিন আমেরিকা। এর আগেও একাধিকবার সেখানে বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছু কারণে সেই উদ্যোগ বেশি দূর এগোয়নি। এবার যেহেতু বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলকে সমর্থনের কারণে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, এক্ষেত্রে আমরা ফুটবল কূটনীতির মাধ্যমে অগ্রসর হতে পারি। ল্যাটিন আমেরিকায় বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রস্তাব নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান ইপিবির প্রধান নির্বাহী।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের সিইও ড. মো. জাফর উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফুটবল ডিপ্লোমেসি’ ল্যাটিন আমেরিকায় বাণিজ্য বাড়ানোর বড় সুযোগ নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, দেশের রপ্তানি খাত ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার বাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্যে যে বদল ঘটেছে তাতে দীর্ঘদিন একই ধরনের পণ্য ও বাজারের ওপর নির্ভর করে থাকা ঠিক নয়। এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে ইউরোপ-আমেরিকায় বাজার সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের রপ্তানি খাত যাতে সংকুচিত না হয় সে লক্ষ্যেই দক্ষিণ আমেরিকায় নতুন বাজার ধরাটা জরুরি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, ল্যাটিন আমেরিকার দেশ বিশেষ করে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনায় বাণিজ্য বাড়াতে গত এক দশকে বেশ কয়েকবার আলোচনার সূত্রপাত করা হয়। ২০১৩ সালে তখনকার বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদের নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল ব্রাজিল, চিলি ও কলম্বিয়া সফর করেন। ২০১৯ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে আরেকটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল ল্যাটিন আমেরিকা সফর করে। বাজার সম্প্রসারণে এবার লক্ষ্য ছিল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ের মতো দেশগুলো। ওই চার দেশ সফর শেষে ঢাকায় ফিরে বাণিজ্যমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, মারকোসার বাণিজ্য জোটভুক্ত ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)-এর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এরপর করোনা মহামারির কারণে ওই আলোচনা আর বেশি দূর এগোয়নি। ওই সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলসহ ল্যাটিন আমেরিকার জোটভুক্ত চারটি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করলে লাভবান হবে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশের আমদানি শুল্ক বাবদ বছরে রাজস্ব ক্ষতি হবে প্রায় ১১ মিলিয়ন ডলার। বিপরীতে যে পরিমাণ রপ্তানি বাড়বে তাতে লাভ হবে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, ওষুধ, পাটজাত পণ্য, হিমায়িত পণ্য ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কর্মকর্তারা বলছেন, মারকোসার জোটভুক্ত দেশগুলোর ৩০ কোটি ক্রেতা রয়েছে। প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার জিডিপির এ অঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরি করতে পারলে ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরশীলতা কমবে, বাড়বে রপ্তানি বাণিজ্য, স্ফীত হবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

সর্বশেষ খবর