শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

উৎকণ্ঠা আর্সেনিক দূষণ নিয়ে

আইসিডিডিআরবির গবেষণা, কার্যকারিতা হারাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

পানিতে অতিমাত্রায় আর্সেনিক দূষণ শিশুদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ তৈরি করছে। কার্যকারিতা হারাচ্ছে তৃতীয় প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিকও। আর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ বিশ্বব্যাপী মানুষের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর নতুন গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে। গবেষণাটি প্লস প্যাথোজেন্সে প্রকাশিত হয়েছে।

গতকাল আইসিডিডিআরবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন গবেষণায় বাংলাদেশের অধিক আর্সেনিক দূষণযুক্ত এলাকায় শিশুদের মল এবং পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ই. কোলাই (একটি ব্যাকটেরিয়া যা সাধারণত উষ্ণ রক্তের প্রাণীদের অন্ত্রের নিচের অংশে পাওয়া যায় এবং এটি ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ) এর উচ্চ প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। যদিও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের প্রধান কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহার এবং অপব্যবহার, কিন্তু ভারী ধাতুর মতো প্রাকৃতিক উপাদানও অ্যান্টিবায়োটিক    প্রতিরোধের কারণ হতে পারে- এমনটাই উঠে এসেছে গবেষণায়। গবেষকরা চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ ও মতলব উপজেলার ১০০টি পরিবারের (প্রত্যেক উপজেলায় ৫০টি) মা ও শিশুদের মল এবং খাবার পানির নমুনা সংগ্রহ করেছেন। হাজীগঞ্জের বাসিন্দারা অগভীর নলকূপের পানি পান করেন, যাতে আর্সেনিকের উচ্চমাত্রা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, মতলবের বাসিন্দারা আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপের পানি পান করেন। সামগ্রিকভাবে দুটি এলাকার ৮৪ শতাংশ পানি এবং মলের নমুনায় ই. কোলাই উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মতলবের তুলনায় হাজীগঞ্জের শিশুদের শরীরে উচ্চমাত্রায় ই. কোলাই উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া হাজীগঞ্জের ৯৪ ভাগ শিশুর দেহে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা মতলবের শিশুদের ক্ষেত্রে ৭৬ ভাগ। তবে কোনো এলাকার মায়েদের মধ্যে ই. কোলাই-এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

 হাজীগঞ্জের ই. কোলাই-এর উচ্চতর অনুপাত পেনিসিলিন, সেফালোস্পোরিন এবং ক্লোরামফেনিকলসহ একাধিক শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ছিল, যা গবেষণায় পাওয়া গেছে।

গবেষণার প্রধান গবেষক আইসিডিডিআরবির অ্যাডজাঙ্কট সায়েন্টিস্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়ে বেশি স্থিতিশীল। এসব ধাতু দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাকটেরিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। যার ফলাফল হিসেবে মানুষের মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স গড়ে উঠছে। এর ফলে কখনো অ্যান্টিবায়োটিক নেয়নি, এমন মানুষ এবং প্রাণীর দেহেও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী বিভিন্ন অণুজীব বসতি গড়ে তুলতে পারে।

গবেষণাটির অন্যতম একজন গবেষক প্রভাত তালুকদার বলেন, আমরা দেখেছি যে আর্সেনিক-প্রতিরোধী ই. কোলাই একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকের, বিশেষ করে তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হওয়ার আশঙ্কা বেশি, যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

সর্বশেষ খবর