রাজধানীর গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে কিছু বাসে ই-টিকিট চালু করেছে পরিবহন মালিক সমিতি। কিন্তু তিন মাস না যেতেই নানা সমস্যা ও অভিযোগ পিছু ছাড়ছে না। ই-টিকিটের শুরুর দিকে স্টপেজে টিকিট কেটে বাসে ওঠার নিয়ম ছিল। সেখানে অনেক যাত্রী টিকিট না কেটে বাসে চলাচল করতেন। পরে মালিক সমিতি এই নিয়ম পরিবর্তন করে চালকের সহকারীর কাছ থেকে টিকিট নেওয়ার পদ্ধতি চালু করে। এই নিয়ম কিছুদিন চালু থাকলেও এখন ই-টিকিটে ভাড়া আদায়ে অনীহা দেখাচ্ছেন চালকরাই। আগের মতো টিকিট ছাড়াই ভাড়া আদায় করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। একই সঙ্গে টিকিটে টাকার কথা থাকলেও দূরত্ব কতটুকু তা উল্লেখ নেই। আবার কোথাও দূরত্ব যতটুকু এর চেয়ে ভাড়া কয়েক গুণ বেশি আদায় হচ্ছে ই-টিকিটে।
রাজধানীতে অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় নিয়ে অভিযোগের কারণে তা নিরসনে ই-টিকিটিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় ঠেকাতে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহন কোম্পানিতে ই-টিকিটিং চালু হয়। বর্তমানে ৩০টি কোম্পানির বিভিন্ন রুটে এই ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এতে সরকার-নির্ধারিত হারে একজন যাত্রী যত কিলোমিটার যাবেন, তিনি ঠিক তত দূরত্বের জন্য ভাড়া দেবেন।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাসে ঘুরে দেখা যায়, এখনো এটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। কিছু কোম্পানির বাসে ই-টিকিট কাটলেও বেশির ভাগেই কাটছে না। মিরপুর রুটে চলা অছিম, আসমানী, বিহঙ্গ ও সুপার, শেকড়, বিকল্প, আয়াতে এই চিত্র দেখা গেছে। মেশিনে রসিদ না দিয়েই হাতে টাকা নিচ্ছে। টাকা দিলেই তারা নিয়ে নিচ্ছে। চালকের সহকারী বা ভাড়া উত্তোলনকারীরা বলছেন, খুচরা ভাড়ায় সাধারণত টিকিট কাটা হচ্ছে না। আর যাত্রীর চাপ যখন বেশি থাকে, তখন কাটা সম্ভব হয় না।রাজধানীর মেরাদিয়ার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। মেরাদিয়া থেকে স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত অছিম পরিবহনে যাতায়াত করেন ১৫ টাকায়। তিনি ই-টিকিটের মাধ্যমে টিকিট কাটেন। যেখানে আগে ভাড়া নিত ২০ থেকে ২৫ টাকা, সেখানে ই-টিকিট চালু হওয়ায় ভাড়া কমেছে। তবে এই টিকিট তিনি বাসের হেলপারের কাছে চেয়ে নেন। যেসব যাত্রী টিকিট চান না, তাদের ই-টিকিট দিচ্ছেন না চালকের সহকারীরা। বেশির ভাগই এখনো আগের নিয়মে হাতে হাতে ভাড়া নিচ্ছেন। হেলপারের গলায় পজ মেশিন থাকলেও সেটি ব্যবহারে অনীহা রয়েছে তাদের। খুব কমসংখ্যক বাসেই এটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
দেলোয়ার নামে অছিম পরিবহনের আরেক যাত্রী বলেন, ‘নতুনবাজার থেকে বাসে উঠে স্টাফ কোয়ার্টারে নেমেছি। ভাড়া নিয়েছে ৩০ টাকা। কিন্তু বাসের হেলপার টিকিট দেননি। টিকিট চাইলে তিনি যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত ৩৫ টাকা ভাড়ার একটি টিকিট দিয়েছেন। আমি তো নতুনবাজার থেকে উঠেছি, যমুনা ফিউচার পার্কের টিকিট দিলেন কেন? এটা জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি কিছুই বলেননি।’ রাজধানী পরিবহনে রামপুরা থেকে সাইফুল নামে এক যাত্রী উঠেছেন। তিনি যাবেন স্টাফ কোয়ার্টার। সাইফুল বলেন, ‘ই-টিকিটে ভাড়া নিয়েছে ২৫ টাকা। মেরাদিয়া থেকে স্টাফ কোয়ার্টার ই-টিকিটে ভাড়া ১৫ টাকা। আর রামপুরা থেকে মেরাদিয়ার দূরত্ব ২.৪ কিলোমিটার, যেখানে সর্বোচ্চ ভাড়া ৫ টাকা। তাহলে সব মিলিয়ে ভাড়া হবে ২০ টাকা। অথচ ভাড়া নিচ্ছে ২৫ টাকা।’ শেকড় পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, আগে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কারওয়ান বাজারের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। কিন্তু এখন নিচ্ছে ১৮ টাকা। আবার শাহবাগ পর্যন্ত ছিল ২০ টাকা। কিন্তু এখন নেয় ২৩ টাকা।
ভাড়ানৈরাজ্য ঠেকানোর জন্য ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু থাকলেও এখনো কৌশলে পকেট কাটা হচ্ছে যাত্রীদের। অনেক বাসের টিকিটেই গন্তব্যস্থল ও দূরত্বের পরিমাণ উল্লেখ না করে শুধু ভাড়ার পরিমাণ লেখা থাকছে। কিন্তু কত কিলোমিটার দূরত্বের জন্য এই ভাড়া নেওয়া হলো তা উল্লেখ থাকছে না। সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ই-টিকিটে ভাড়া আদায়ে অনীহা কিছু জায়গায় দেখা যাচ্ছে। আরও কিছু জায়গায় অনিয়ম আছে, সেগুলো খতিয়ে দেখছি। আমাদের ১০ জন লোক মনিটরিং করছে। সবগুলো বিষয় নিয়ে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করব।’ তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা সব বাসে ই-টিকিটের মাধ্যমে ভাড়া আদায় ব্যবস্থা চালু করতে পারিনি। টিকিটে কিলোমিটার, দূরত্ব উল্লেখ না করাসহ যাত্রীদের অন্যান্য অভিযোগ নিরসনে আমরা কাজ করছি।’